হয়তো তারা ৭৩ জনকে ট্যাগ করে স্ট্যাটাস দেন, হয়তো ইনবক্সে যাদেরকে আত্মার কাছের মনে করেন তাদেরকে বইয়ের প্রচ্ছদ পাঠান (কোনো কোনো মানুষ প্রচুর মানুষকে আত্মার কাছের মনে করতেই পারেন), হয়তো ভালোবেসেই মেলার ঠিক আগে পাঠকদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান, তাই বলে আপনারা তাদেরকে নিয়ে ট্রল করতে পারেন না। আপনারা এটা বলেও স্ট্যাটাস দিতে পারেন না যে, ‘সকাল থেকে তিনজন লেখক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। পরে বুঝলাম সামনে বইমেলা।‘
এমন অপমান সইবার মতো নয়! কী করেছে তারা? একটু বইয়ের বিজ্ঞাপন, তারা চেয়েছে যাতে বইটা পাঠকের হাতে ছড়িয়ে পড়ুক। এই তো চাওয়া!
অথচ বইয়ের মার্কেটিং করতে গিয়ে এই বাংলার জমিনে একজন লেখককে দৈনিক কতো লাঞ্চনা গঞ্জনা সইতে হয়, সে খবর কী আপনারা যারা মিম-ট্রল বানান তারা জানেন? জানেন না!
এবার লেখকদের ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। আর নয় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট কিংবা ৭৩ জনকে ট্যাগ। এমনভাবে মার্কেটিং করতে হবে, যেন সাপও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে। এজন্য খুব বেশি কিছু করতে হবে না। প্রচলিত বিজ্ঞাপনের নিয়ম অনুসরণ করলেই মিলবে সমাধান। লেখকদের জন্য কয়েকটি হিট বিজ্ঞাপনী আইডিয়া আমরাই দিয়ে দিলাম, লেখকরা নিশ্চয়ই বই নিয়ে ভাবছেন, অন্য কিছু ভাবার সময় কই...
১# ৯৯% জীবাণু ধ্বংস তরিকা
করোনার পর প্রথম বইমেলা। খবরে বলছে, প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের হার বাড়ছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মনে চলা আবশ্যিক। তাই আপনার বই হতে পারে একটা বিশাল সমাধান। ধরে নিই আপনার বইয়ের নাম, ‘চুমু খাবো, মুখ ধুয়ে এসেছি’।
এখানে কয়েকটি কাজ করতে পারেন।
ক. বিজ্ঞাপনে রটিয়ে দিতে পারেন যে, চুমু খাবো, মুখ ধুয়ে এসেছি ধরলেই হাতকে স্যানিটাইজ করে হাতের ৯৯% জীবাণু ধ্বংস করে ফেলবে।
খ. চুমু খাবো, মুখ ধুয়ে এসেছি শুধু একটি বই নয়, এটি একটি মাস্কও। পড়তে ইচ্ছা করলে পড়বেন, পরতে ইচ্ছা করলে পরবেন।
২# টেলিকম স্টাইল
সারাবছর টেলিকম ব্র্যান্ডগুলা এটা সেটা বিজ্ঞাপন দিয়েই বেড়ায়। উল্লেখ্য যে এই কোম্পানিগুলা মূলত ছাড় এবং ফ্রি-এর মূলা ঝুলায়। আপনি লেখক মানুষ আপনি মুলা ঝুলাবেন কেনো? আপনি ঝুলাবেন এমবি।
ঘোষণা দিয়ে দিন যে, বই কিনলে দশ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট। আর বই পড়ে যদি রিভিউ লিখে তাহলে উপহার স্বরূপ লেখকের অটোগ্রাফসহ রাউটার দেয়া হবে। এছাড়া পাঁচজন নতুন বন্ধুকে বই কেনাতে পারলে থাকবে দশ হাজার অ্যাম্পিয়ারের একটা পাওয়ার ব্যাংক। সাথে বি এবং সি টাইপ ক্যাবল ফ্রি।
৩# 'এই প্রথম' স্টাইল
আপনি যে একটা মাল, আপনি যে একটা পিস এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি পৃথিবীতে যেহেতু আপনি ছাড়া কেউ জানে না, ফলে এইটা একটা সুযোগ পৃথিবীকে জানানো।
পণ্য যেটাই হোক আপনি যদি টিভি চ্যানেলগুলা দেখেন, দেখবেন কী কী অদ্ভুত সব জিনিস বলে বলে যে এইটা নাকি বাংলাদেশে এই প্রথম। আপনি দ্বিতীয় নাকি! আপনিও এই প্রথম। আপনিও একই ফর্মূলা ব্যবহার করতে পারেন। হতে পারে আপনি কবিতা, গল্প উপন্যাস বা যেকোনো কিছু লিখতে পারেন। আপনাকে গভীরভাবে ভাবতে হবে যে, আপনি ঠিক কোন জিনিসটা পিক করে বলবেন ‘এই প্রথম’ বলবেন। এটা যদি ঠিকঠাক পেয়ে যান তাহলে আপনি যত বাজে লেখুন না কেনো, বাজার আপনিই গরম করবেন। এই বলে দিলুম।
উদাহরণস্বরূপ আপনি বলতে পারেন যে, বাংলাদেশে এই প্রথম বাজারে চারটি আলাদা আলাদা ডিজাইনে পাচ্ছেন আমার প্রথম একক কবিতার বই ‘চুমু খাবো মুখ ধুয়ে এসেছি’... নিজের পছন্দের ডিজাইনটি আজই কালেক্ট করুন।
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো এই আইডিয়া আপনি এপ্লাই করতে পারবেন না। জনৈক তরুণ লেখক অলরেডি এই আইডিয়ায় ব্যবহার করে ফেলেছে। আপনি নতুন কিছু ভাবুন।
৪# 'সাধারণ-অসাধারণ' স্টাইল
এখন তো অনলাইন বিজ্ঞাপনের যুগ। ফলে একটা অনলাইন কমার্শিয়াল বানিয়ে ফেলুন। যেখানে ক্লাসিক বিজ্ঞাপনের প্যাটার্ন ইউজ করে বই এর বিক্রি বাড়াতে পারেন। যেমন-
একটা বোকা কিসিমের লোককে দেখা যাবে মেলায় ঘুরাঘুরি করতে। হাতে বই, মাথায় টাক নিয়ে সে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার সাথে আচমকা দেখা হয়ে যাবে আরেক ভদ্রলোকের। যার বগলে বই, নাকের উপরে চশমা আর নিচে গোঁফ। চেহারা থেকে জ্ঞান বেয়ে বেয়ে পড়ছে।
জ্ঞানী লোকটা বোকা লোককে বলবেন- হাতে কী?
বোকা লোক গরুমার্কা একটা হাসি দিয়ে উত্তর দিবে প্রশ্ন করার মতো- কেন? সাধারণ বই!
জ্ঞানী লোকটা তখন একটা ছাগলমার্কা হাসি দিয়ে বলবে, ‘এইসব সাধারণ বই পড়লে কী জ্ঞান অর্জন হবে? জ্ঞান অর্জনের জন্য বাজারে এলো অমুকের ‘চুমু খাবো, মুখ ধুয়ে এসেছি’ পাওয়া যাবে নিকটস্থ ৮৭৪৬ নম্বর স্টলে। আমি নিয়েছি। আপনিও নেন।
৫# লোভনীয় অফার স্টাইল
অটোগ্রাফ দেয়া লেখকদের এখন কেউ গুনেও না। ফটোগ্রাফের যুগও শেষের দিকে। লেখকরা নিজের ছবি নিজেই ভক্তদের ইনবক্সে পাঠানো শুরু করেছেন। এমনকি লেখকের সাথে ডিনারের ব্যাপারটাও সেকেলে হয়ে গেছে। অনেকে আসবে বলে, আসে না। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে লেখককে এতোগুলা খাবার একা একা খেতে হয়। ফলে আপনাকে অফার দিতে হবে ইউনিক। যাতে সেটা শুনেই পাঠক পরিবারসহ চমকে যায় আর সুরসুর করে বই কিনতে চলে আসে।
এমন হতে পারে-
‘চুমু খাবো, মুখ ধুয়ে এসেছি’ বইটির প্রথম দশ ক্রেতাকে লেখক বাড়ি গিয়ে নিজ হাতে মুখ ধুয়ে স্যরি মুখে তুলে খাইয়ে দিবেন। না খেতে চাইলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবেন, এমনকি খাওয়ার পর ঘুম পাড়ানো, এবং কারেন্ট চলে গেলে পাখা করা একদম ফ্রি।
এছাড়া নির্বাচিত সেরা পাঁচ ক্রেতার বাড়িতে গিয়ে লেখক প্রতিদিন মশা মেরে দিয়ে আসবেন।
এইসব এপ্লাই করে দেখেন, তাও যদি আপনার বই বিক্রি আশানুরুপ না হয়, তবে ভাই আপনি মাইন্ড কইরেন না প্লিজ। এই জাতিই আপনাকে ডিজার্ভ করে না। আপনি আরও বেটার পাঠক ডিজার্ভ করেন...