বইমেলায় বই না বের হওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচার ১০টি উপায়

১৩৮৭ পঠিত ... ১৯:৫১, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাস মানেই লেখকের প্রজনন মৌসুম। এই প্রজনন মৌসুমে ‘লেখকজন্ম’ একদম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ডানে-বামে, সামনে-পেছনে যেদিকেই তাকান না কেন সবদিকেই লেখক। গল্প, কবিতা, উপন্যাস বের হচ্ছে দেদারছে। কেউ কেউ বের বই বের করার জন্য কোন আইডিয়া না পেয়ে ফেসবুকের স্ট্যাটাসগুলোর একটা কম্পাইলেশন করে বের করে ফেলছে আস্ত একটা বই। আবার এমনও অনেকে আছেন, যারা বই বের করার মতো স্ট্যাটাস না পেয়ে ফেসবুকের কমেন্টগুলোকে এক করে বের করে ফেলছে সমগ্র। 

 

এমন লেখক বিপ্লবের যুগে আপনার একটা বই নাই! এই লজ্জার সাথে পৃথিবীর আর কোন লজ্জার তুলনা চলে না। লোকে বই কিনুক বা না কিনুক, বই বের হইছে কি না- এই প্রশ্নের সম্মুখীন আপনার হতে হবেই! কেউ এই প্রশ্ন করলে তখন কী বলবেন? কীভাবে বাঁচবেন এই লজ্জা থেকে? জেনে নিন, বইমেলায় বই বের না করেও লজ্জার হাত থেকে বেঁচে থাকার ১০টি জীবনমুখী টিপস। 

 

১। ‘এবার আপনার বই বের হইছে?’ কাউকে যদি সন্দেহ হয় যে এমন প্রশ্ন করতে পারে তাহলে তাকেই উল্টো আগে আগে জিজ্ঞেস করে বসুন, ‘এবার আপনার বই বের হলো নাকি?’ যদি সম্মতিমূলক উত্তর পান তাহলে তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই সম্পূরক প্রশ্ন করুন, ‘সেল কেমন? কতো কপি?’ আশা করা যাচ্ছে এরপর ঐ ব্যক্তি আপনাকে আর এসব প্রশ্ন করবে না।

 

২। নীলক্ষেত থেকে কম দামে বই (পাইরেটেড হলে ভালো হয়) কিনে লেখকের নাম কেটে নিজের নাম বসিয়ে রাখুন। কেউ যদি বই বের হইছে কি না জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিতে আসে তাহলে তাকে শুরুতেই এই বইটা দেখান। এরপর কমদামি বইটা গায়ের মুল্যের চেয়ে ২৫% ছাড়ে ধরিয়ে দেন। লজ্জা থেকেও বাঁচলেন, ব্যবসাও হইলো।

 

৩। বইমেলা চলাকালে একটা প্রচ্ছদ বানিয়ে সেটা প্রোফাইলে ঝুলিয়ে রাখুন প্রি-অর্ডারের জন্য। আশা করি কেউ অর্ডার করবে না। অর্ডার করলেও বই আসার তারিখ নিয়ে একটু গড়িমসি করুন। এরপর ছাপাখানার ভূতে আপনার আস্ত বই গায়েব করে দিছে এমন রিউমার ছড়িয়ে দিয়ে টাকাগুলো খেয়ে ফেলুন।

 

৪। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলুন।  আপনার বই বের হইছে কি না এমন প্রশ্ন কেউ করলে বই বের হইছে জানিয়ে তাকে নিয়ে মেলায় চলে যান। এরপর পরিচিত ভাই-ব্রাদারদের (যেসব নতুন লেখক বই কেনার জন্য চাপে রাখছে) বই দেখিয়ে সবগুলো আপনার ছদ্মনামে বের হয়েছে বলে তাকে দিয়ে কিনিয়ে নিন। আপনার জন্য উইন-উইন সিচুয়েশন।

 

৫। বই বের হয় নাই! এই লজ্জা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো বই বের করে ফেলা। আসল বই না হোক, মাত্র এক কপির একটা ডামি বই বের করুন। মনের মাধুরি মিশিয়ে ইন্টারনেট চষে বেরিয়ে কিছু টেক্সট সিলেক্ট করে নিয়েন। বই বের হইছে, এই বিষয়টা একবার প্রতিষ্ঠা করে ফেলতে পারলে, এরপর আপনাকে লজ্জা দেয়া তো দূরের কথা পরিচিত মানুষরা আপনার আশেপাশেও আসবে না।

 

৬। এক মাসের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। বইমেলা, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন। এতে দুইটা উপকার! আপনার বই বের হইছে কি না তা জিজ্ঞেস করে কেউ আপনাকে লজ্জাও দিবে না, আবার পরিচিত নতুন লেখকদের হাত থেকেও বাঁচবেন।

 

৭। মেলায় গেলে বড় বড় লেখকদের আশেপাশে থাকুন। এতে পাঠক সমাজ বা পরিচিত সমাজ বড় লেখকদের নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। আপনার দিকে তাকানোর সুযোগ পাবে না। কেউ না দেখলে আবার লজ্জা কিসের!

 

৮। ফেসবুকে নিয়মিত কিছু জ্ঞানগর্ভ স্ট্যাটাস দিন। এসব স্ট্যাটাসে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলুন যে, এখন বাংলার সাহিত্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। আগাছার মতো গজিয়ে উঠছে লেখক। মানহীন লেখায় পূর্ণ হয়ে উঠছে বইমেলা। এসবের শেষে ইনিয়ে বিনিয়ে বলুন, এই কলিযুগে সময়ে আপনি বই বের করতে চান না। সময় যখন কিছুটা সুস্থির হবে তখনই আপনি বই বের করবেন। এমন ইঙ্গিত পেলে বই বের করার চাপ থেকে লোকে আপনাকে কিছুটা মুক্তি দিবে।

 

৯। বল ঠেলে দিন পাঠকদের কোর্টে। স্ট্যাটাস দিয়ে জানান যে, আপনি অনেকদিন ধরেই বই লিখতে চাচ্ছেন। ভাবনাটা একেবারে কলমের ডগায় আছে, বসলেই হড়হড় করে লেখা বেরুতে থাকবে। কিন্তু, আপনার বইয়ের বিষয়বস্তু একটু অন্যরকম। পাঠকরা এখনো প্রস্তুত না আপনার বই পড়তে। যেহেতু পাঠকরাই প্রস্তুত না, সেহেতু বই আর কার জন্য বের করবেন?

 

১০। অন্যদের কাছ থেকে লজ্জার বিষয়ে না হয় বেঁচে গেলেন। কিন্তু নিজেই নিজের কাছে যে লজ্জাটি পাবেন তা থেকে কীভাবে বাঁচবেন? এটার সমাধানও আছে। ধ্যানে বসুন। বড় করে একটা বড় নিশ্বাস নিন। এরপর মনে মনে বলুন, মনের বইই আসল বই! 

 

১৩৮৭ পঠিত ... ১৯:৫১, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০

Top