বইমেলা চলে গেছে। আশেপাশে কত মানুষের বই বের হলো। আপনারও নিশ্চয়ই বই বের করার শখ হয়? শখ হলে বই বের করে ফেলুন, এতই বা কঠিন কী! eআরকি আপনাকে জানাচ্ছে ৭ দিনেই গল্প/কবিতা/উপন্যাস যেকোনো রকম বই বের করে ফেলার নিঞ্জারও উপ্রের টেকনিক! বিফলে রয়ালটি ফেরত...
প্রথম দিন
প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি একটি বই বের করতে চান। সেটা হতে পারে গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাস। গল্প কবিতা কিংবা উপন্যাসের কোন বই বের করার আইডিয়া মাথায় না আসলে ব্যাকআপ প্ল্যান হিসেবে, ফেসবুকের স্ট্যাটাস সমগ্র, ফেসবুকের কমেন্ট সমগ্র, ভ্রমণ সমগ্র (দেশ-বিদেশ ঘোরা লাগবে না, ক্রাশের আইডি ভ্রমনের স্মৃতিকথা হলেও হবে) এমন কিছু রেডিমেইড প্ল্যান রাখুন হাতে।
দ্বিতীয় দিন
এবার আপনার ইনবক্স চেক করে ‘ভাই আপনার বই কবে আসবে; আপনার বইয়ের অপেক্ষায়, এই বইমেলায় আসছে তো ভাই; এই টাইপ কিছু মেসেজ খুঁজে বের করুন। এমন মেসেজ ইনবক্সে না পেলেও সমস্যা নাই। মিনিমাম ৫ টা ফেইক আইডি খুলে সেইসব আইডি থেকে নিজেকে এমন মেসেজ দিন।
তৃতীয় দিন
এবার এইসব মেসেজের স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে একটা দীর্ঘ স্ট্যাটাস লিখুন। বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধকরণ, চাহিদা, পাঠকের অনুরোধ, সাহিত্যপ্রেমীদের-পাঠকদের জন্যই আপনার লেখালেখি; এমন কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, এই স্ট্যাটাসেই মানুষকে বুঝিয়ে দিতে হবে, আপনার বই বের করা ওয়াজিব হয়ে গেছে!
চতুর্থ দিন
এবার স্ট্যাটাসে লাইক, শেয়ার আর কমেন্ট নিয়ে আসার কাজ। সাধারণত কেউ নতুন বই বের করতেছে বা করতে পারে এমন ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস সবাই এড়িয়ে যায়। সবাই এড়িয়ে গেলে কী হবে! আপনার যে ৫টি ফেক আইডি আপনাকে বই বের করতে মেসেজ দিছিলো তারা তো আর এড়িয়ে যেতে পারবে না। তাদেরকেই কাজে লাগান। লাইক, কমেন্ট, শেয়ার সব তাদেরকে দিয়েই করান।
পঞ্চম দিন
সাধারণত বই বের করার ক্ষেত্রে সবাই আগে পান্ডুলিপি তৈরি করে। কিন্তু আপনিতো এক্সেপশনাল কেস, সাত দিনে বই বের করবেন। আপনাকে সবার মতো হলে চলবে না। আপনাকে হতে হবে একটু আলাদা। আপনি সবার আগে বইয়ের প্রচ্ছদ বানিয়ে ফেলুন। এরপর সেই প্রচ্ছদ ফেসবুকে আপলোড করে দিন, কভার ফটো করুন, আপনার ৫টি ফেক আইডির কভার ফটোও করুন। কভার ফটো দেয়ার সময় প্রথম সন্তান, প্রসব যন্ত্রণা, দুই বছর আগে পান্ডুলিপি তৈরি করেছেন, লেখা আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নাই, এরপর নানা সংযোজন-বিয়োজন, এখন বের করা যায়; এইসব কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করে আরো একটি স্ট্যাটাস দিন।
ষষ্ঠ দিন
বই তো বের করলেই হবে না! কয় কপি বিক্রি হবে তাও ভাবতে হবে। সেজন্য ষষ্ঠ দিন ফেসবুকে বইয়ের প্রি-অর্ডার লিংকটা দিয়ে দিন। দিয়েই সাথে সাথে আপনার ৫টা ফেক আইডি থেকে কমেন্টেই অর্ডার করুন। অর্ডারের সাথে তর সইছে না, কবে পাবো পাবো, উফফ ইত্যাদি কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করে কমেন্টও করুন। এরপর সারাদিন অপেক্ষা করে আর কত পিস অর্ডার হয় তা পর্যবেক্ষণ করুন।
সপ্তম দিন
আজকে আবারো সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা। প্রি-অর্ডারের সংখ্যার উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কি মাস তিনেকের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবেন নাকি বইমেলায় গিয়ে অটোগ্রাফ দেবেন! প্রি-অর্ডার যদি আশানুরূপ পড়ে যায় তাহলেও পান্ডুলিপি না থাকার কারণে বিশেষ কোন টেনশন করা লাগবে না। প্রথম দিনের ব্যাকআপ প্ল্যানে থাকা বইগুলো থেকে একটা করে ফেলুন। তাও যদি মনে হয় টাইম বেশি লেগে যাবে তাহলে কোন অখ্যাত বইয়ের কভারের উপর নিজের করা প্রচ্ছদ লাগিয়ে চালিয়ে দিন। প্যারামুক্ত থাকতে বইয়ের নিচে ছোট করে কালেক্টেড লিখে দিন।