'পড়াশোনার জগতে তুমি প্রশ্নের দিশারী
উর্ধ্বশিরে তুমি বরেণ্য
তুমি অসাধারণ, তুমি প্রশ্ন ফাঁসের জনক'
একাদশ সংসদের প্রারম্ভে দেশ ও জাতি যখন দুলছে দিন বদলের দোলায়, নতুন বছরের হাওয়া লাগছে গায়ে, ঠিক তখনই এক বেদনা বিধুর সংবাদে এই জাতি আজ শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে। চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে তপ্ত রাজপথে। শিক্ষামন্ত্রীর এমন অকস্মাৎ বিদায়ে জাতি আজ শোকাহত, মর্মাহত।
হে বিদায়ী মন্ত্রী,
লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে মন্ত্রীত্বের প্রথম ভাগে আপনি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে যতটুকু এগিয়ে দিয়েছিলেন, তা ভোলার নয়। আপনার 'বই উৎসব' আমাদের মনে দিয়েছিল আনন্দের দোলা। আপনি ছিলেন দাবার বোর্ডের মন্ত্রীর মত। চারিদিকে বিচরণের ক্ষমতা নিয়ে এই বাংলার শিক্ষার অগ্রগতিতে আপনার আগ্রাসী ভূমিকা জাতি ভুলবে না। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আপনি হয়ে পড়লেন আমাদের বিনোদন ভিত্তিক পড়াশোনার ধারক। ব্যাকবেঞ্চারদের জন্য হয়ে উঠলেন বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আপনার অব্যাহতির সংবাদ হৃৎপিন্ডে ছুরিকাঘাতের মত যন্ত্রণা হয়েছে। হে শিক্ষাগুরু, আমাদের আশীর্বাদ গ্রহণ করুন। ভালোবাসায় সিক্ত হতে থাকুন চিরকাল।
হে প্রশ্ন ফাঁসের ধারক,
যুগোপযোগী পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ণ করে পরীক্ষার আগের রাতে আমাদের হাতে প্রশ্ন পৌঁছে দিয়ে পরীক্ষাভীতি দূর করেছেন আপনি। পরীক্ষা নামক মহামারিতে আমরা আর ভুগি না। সঠিক ও কমন প্রশ্ন নিয়ে আমরা নিজেদের মেধার সদ্ব্যাবহার করে উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি কেবল আপনারই অবদানে। পরীক্ষার আগে এখন আর বাবা-মায়েরা বাসার নেটের লাইন কেটে দেয় না, বরং পরীক্ষা সামনে থাকলে বাসায় লাগিয়ে দেয় ওয়াইফাই কানেকশন। পরীক্ষার আগের রাতে এখন পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যায় ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপেই। যুগে যুগে আপনার মতো আধুনিক শিক্ষামন্ত্রী জন্ম নেবে না। আপনার অবদান নিয়ে কেউ কখনো কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না। যদি তোলেও, হয়তো সেই প্রশ্নটিও ফাঁস হয়ে যাবে।
হে পরীক্ষার্থীর শেষ ভরসা,
আপনার হৃদয়ের বিশালতায় ডুবেছিলাম বারবার। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পেয়ে দিশেহারা ছাত্র পথ খুঁজে পেয়েছে, সে তো কেবল আপনারই বদান্যতায়। প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে না পেয়ে আমরা যখন দিগ্বিদিক ঘুরছি, তখন সঠিক উত্তরের ফেরিওয়ালা হয়ে আপনি আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন, সেই অবদান কি কখনো ভোলা যায়! পরীক্ষায় সফলতার সাথে পাশ করে, এ প্লাস পেয়েও তাই আমরা আপনাকে ভুলে যাইনি। আমাদের উত্তরসূরিদের জন্য হতাশা, তারা আপনার মত শিক্ষামন্ত্রীর ছোঁয়া পাবে না। পরীক্ষার আগের রাতটা হয়তো ফেসবুকে মেসেঞ্জারে প্রশ্ন খুঁজে না পেয়ে শিক্ষার্থীরা পুড়বে আপনাকে হারানোর বেদনায়।
হে সৃজনশীলতার পৃষ্ঠপোষক,
ঘুমিয়ে আছে লেখক-সাহিত্যিক, সব শিক্ষার্থীর অন্তরে--সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি প্রণয়ণ করে লেখার স্বাধীনতা দিয়ে বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য লেখক তৈরি করে বাংলা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধশালী করেছেন আপনি। আমরা সবাই লেখক আমাদের এই পরীক্ষার রাজত্বে। যেমন খুশি তেমন লিখে যাই নির্ভয়ে। শিক্ষাবিজ্ঞানকে আপনি সমৃদ্ধ করেছেন নতুন নতুন সৃজনশীল তত্ত্ব দিয়ে। আপনার অব্যাহতির শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবে না কেউ।
হে সহনীয় মাত্রার উদ্ভাবক,
সহনীয় মাত্রার ঘুষে উৎসাহিত করে আমাদের প্রতি আপনার ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। মাত্রাহীন ঘুষের চাপে ঘুষ দিতে দিতে জাতি যখন দিশেহারা, সেই মুহুর্তে আপনিই বেঁধে দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন ঘুষের পরিমাণ। ঘুষের অসহনীয় দৌরাত্মকে সহনীয় মাত্রায় আনতে চেয়েছিলেন আপনি! আজকের এই বেদনা বিধুর সন্ধ্যায় আপনাকে মন্ত্রীত্ব থেকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। যেতে নাহি দিবো হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়...
পরিশেষে, আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি। আপনার শূণ্যতা অপূরণীয়। যদি আর কখনো প্রশ্ন ফাঁস নাও হয়, তবু আমাদের মন থেকে আপনাকে কেউ ফাঁস করতে পারবে না! আপনি মহানুভব, আপনি অনন্য, আপনি অদ্বিতীয়।