সিনেমা না দেখেই যেভাবে দেবীর রিভিউ লিখবেন

৬৩৬৮ পঠিত ... ১৩:৩০, অক্টোবর ২১, ২০১৮

ফ্রেন্ডলিস্টের সবাই দেবীর রিভিউ লিখে ফেলছে অথচ আপনি সময়ের অভাবে হলে যেতে পারছেন না? আর নয় চিন্তা, আর নয় টেনশন। আপনার জন্য eআরকি নিয়ে এসেছে মাত্র ১০টি টিপস। যেগুলো ফলো করে সিনেমা না দেখেই আপনিও লিখে ফেলতে পারেন দেবীর রিভিউ।

.
১# প্রথমেই আপনাকে ঠিক করতে হবে পজিটিভ রিভিউ লিখবেন নাকি নেগেটিভ। যেহেতু সবাই পজিটিভ রিভিউ দিচ্ছে সেহেতু তাদের দেখানো পথে যাওয়াই উচিত। অন্যথায় ভাগ্যে জুটবে গালি এবং বাপ্পি চৌধুরীর ফ্যানের খেতাব। সুতরাং সাবধান। রিভিউ হোক পজিটিভ।

২# শুরুতেই হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের কথা টেনে আনুন। লোককে জানান এটা আপনার প্রিয় উপন্যাস ছিলো। আরও জানেন আপনি মুভি রিলিজের আগে থেকেই যেমন এক্সাইটেড ছিলেন, তেমনি ছিলেন শংকিতও। কারণ আপনার ভয় ছিলো সিনেমা হয়তো উপন্যাসের মত ভালো হবে না।

৩# আমরা জানি উপন্যাস এবং সিনেমা দুটি আলাদা মাধ্যম। একেবারে হুবহু এক দুটো জিনিস হওয়া অসম্ভব। সুতরাং, বলুন যে মুভি পুরোপুরি উপন্যাসের মত হয়নি। কিছু ব্যতিক্রম ছিলো। এবং আপনি যেহেতু পজিটিভ রিভিউ লিখবেন, সেহেতু বলুন এই ব্যতিক্রম আপনার ভালো লেগেছে।

৪# গুগল করে বা অন্যদের লেখা রিভিউ পড়ে জেনে নিন দেবী সিনেমার পরিচালকের নাম অনম বিশ্বাস। এছাড়াও আরো জানুন জয়া আহসান রানু চরিত্র করেছে, চঞ্চল মিসির আলী, শবনম ফারিয়া নীলু, অনিমেষ আইচ করেছেন আনিস চরিত্র এবং ইরেশ যাকেরের চরিত্রের নাম সাবেত।

৫# রিভিউ এর এই পর্যায়ে জয়া আহসান এবং চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করুন। কারণ আমরা সবাই অনেক আগে থেকেই জানি যে, এরা দুইজন বাংলাদেশের অন্যতম ভালো অভিনেতা। এরা ভালো কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বৈচিত্র্য আনতে 'মেথড এক্টিং' শব্দটা ব্যবহার করতে পারেন। আজকাল বেশ চলছে। সাথে বলতে ভুলবেন না যে রানু চরিত্রে জয়া আহসান পুরোপুরি মানিয়ে গেছে এবং চঞ্চল মিসির আলী চরিত্রে সামান্য একটু অন্যরকম লেগেছে। এর কারণ হিসাবে উল্লেখ করুন আপনি বই পড়ার সময় মিসির আলীকে অন্যভাবে কল্পনা করেছিলেন। এতে করে আপনার ব্যতিক্রমী পাঠকসত্তার ব্যাপারেও একটা হালকার উপর ঝাপসা ধারণা দিয়ে দিতে পারবেন।

৬# এবার আসুন অন্যন্য চরিত্রদের কাছে। শবনম ফারিয়াকে নীলু চরিত্রে দশে আট দিন। এটা ঠিকঠাক হবে। আর বলুন শবনম ফারিয়া তার সর্বোচ্চটাই চেষ্টা করেছে এবং উৎরেও গেছে। সাথে আনিস ও সাবেত বিষয়ে এক কথার বেশি খরচ করবেন না। তাহলে ধরা পড়ে যেতে পারেন। বলুন এরা দুজনই এক কথায় বেশ ভালো। 'অসাধারণ' এবং 'ভালো না' এই দুটো বললেই ধরা পড়ার সম্ভাবনা আছে। 'বেশ ভালো' শব্দটা অপেক্ষাকৃত সেফ।

৭# এবার পরিচালকের কথায় আসুন। সিনামেটিকে যেহেতু সবাই পজিটিভ রিভিউ দিচ্ছে সেহেতু পরিচালকের প্রশংসা করুন। বলুন অনম বিশ্বাস জানে কাজটা কিভাবে করতে হয়। বই থেকে মুভি বানানো কঠিন কাজ, এটা উল্লেখ করে বলুন সেই কঠিন কাজটাই শেষ পর্যন্ত পারফেক্টলি করতে পেরেছেন অনম বিশ্বাস। সাথে এড করে দিন অনম বিশ্বাসের পরবর্তী কাজ দেখার জন্য আপনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবেন।

৮# এবারের অংশটা খুব রিস্কি। একটু এদিক ওদিক হলেই পাঠক ধরে ফেলবে আপনি সিনেমা না দেখেই রিভিউ লিখছেন। কারন এখন আপনি মুভির ভেতরের কিছু বিষয় নিয়ে বলবেন। এক্ষেত্রে বেটার হয় অন্য কারো রিভিউ পড়ে সেভাবে লিখুন। আর সেটা না পারলে লিখুন, 'সিনেমাটোগ্রাফি ভালো ছিলো। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও প্রশংসার দাবীদার। এছাড়া কাহিনী সম্পর্কে আর কিছু বললাম না। তাতে স্পয়লার দেয়া হয়ে যাবে। আপনি বরং হলে গিয়ে দেখুন।'

৯# শুধু প্রশংসা করলে কিন্তু হবে না। তাহলে পাবলিক 'পেইড রিভিউ' বলে কমেন্ট করবে। অতএব সামান্য সমালোচনা করুন। বলুন 'এতক্ষণ যা প্রশংসা করলাম পুরোটাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ধরে। সুদূর হলিউড-বলিউড তো বাদই দিলাম আমাদের পাশের কলকাতায় এরচেয়ে অনেক ভালো মুভি হয়েছে বা হচ্ছে।' বাংলাদেশি মুভির বাজেট বেশি হয় না, সেটা বলে খানিক আক্ষেপ করুন। সুতরাং সেটা টেনে এনে বলুন যে, ওদের মত বাজেট পেলে দেবীও মাস্টারপিস হতো এ বিষয়ে আপনার কোনো সন্দেহ নেই। রেটিং দিন দশে সাড়ে সাত বা পাঁচে সাড়ে তিন।

১০# সবার শেষে সেই গৎবাঁধা কথাটি বলুন--বাংলা সিনেমার পাশে থাকুন, হলে গিয়ে দেবী দেখুন। এই ধরনের সিনেমাকে উৎসাহ দিলে আরো ভালো ভালো সিনেমা তৈরি হবে যা আসলেই আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য লাভজনক দিক। সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে রিভিউটি শেষ করুন।

৬৩৬৮ পঠিত ... ১৩:৩০, অক্টোবর ২১, ২০১৮

Top