পলাতক আসামীদের ফিরিয়ে আনতে যা যা করা যায়

২৫৮৬ পঠিত ... ১৯:৫৬, অক্টোবর ১০, ২০১৮

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামীলীগের সমাবেশে ভয়ানক গ্রেনেড হামলায় আওয়ামীলীগের শীর্ষস্থানীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ নিহত হন ২৪ এবং গুরুতর আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গুরুতর আহত হন। এই ভয়ংকর ঘটনার বিচারকার্য পরিচালনা করা তো দূরের কথা, তৎকালীন বিএনপি সরকার এই হামলা নিয়ে বিভিন্ন মাত্রার নাটক করে।

পরে ২০০৭ সালে সত্যিকারের বিচারকাজ শুরু হলে একের পর এক ‘জাতীয়তাবাদী সাপ’ বের হতে থাকে। জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের পুত্র তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘স্মার্টবয়’ লুতফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ বিএনপির আরও কিছু উঁচু সারির নেতা থেকে শুরু করে মুফতি হান্নানের মতো শীর্ষ জঙ্গি পর্যন্ত এই হামলায় জড়িত ছিল। আজ ১০ অক্টোবর দীর্ঘ ১৪ বছরের অপেক্ষার শেষে এই হামলার রায় প্রকাশিত হয়। এতে তারেক-হারিছের যাবজ্জীবন হয় এবং বাবর-পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু হামলার মূল হোতা তারেকসহ সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশে পালিয়ে আছেন।

কী করে এই ভয়ানক আসামীদের দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, তাই ভেবেছে eআরকির অপরাধ গবেষণা সেল। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ৮টি মোক্ষম উপায় আজ থাকছে eআরকির পাঠকদের জন্য।

 

১# সমর্থক বিনিয়োগ

 ঘটমান অতীতে বিএনপির ডাকা সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলে সমর্থকের উপস্থিতি সংখ্যা দেখার মত ছিলো। বিশ-ত্রিশ জন সমর্থকের বিশাল বিক্ষোভ মিছিলে রাজপথ উত্তাল করতে ব্যর্থ হয় তারা। বিএনপির এমন নেতাকর্মী খরা কাটাতে সরকার এগিয়ে আসতে পারে। নিজ দলের নেতাকর্মীদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিএনপির হয়ে ‘মানি না মানবো না’ মিছিলে পাঠাতে পারে সরকার। শুধু দেশে কেন, বিদেশেও 'চলো চলো ঢাকা চলো' শিরোনামে মিছিল বের হতে পারে। টেলিভিশন, খবরের পাতায় নিজেদের সমর্থক সংখ্যা বাড়তে দেখে আসামীদের বুকে সাহস জন্মাবে। সিনা দু'ইঞ্চি টান টান করে তারা ফিরে আসবে দেশের মাটিতে।

২# মোবাইল অপারেটরদের অফার

ফিরে আসলেই দ্বিগুণ বোনাস টাইপের অফার দিয়ে মোবাইল অপারেটরা বন্ধ সিম চালু করতে আগ্রহী করার চেষ্টা করে যাচ্ছে নিয়মিত। বিজ্ঞাপনে হালকা সম্পাদনা করে ‘দেশে ফিরে আসলেই পাচ্ছেন ১০০ জিবি ইন্টারনেট’- অফার ঘোষণা দিয়ে পলাতক আসামীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা যায়। অবশ্য শর্ত হিসেবে সুইস ব্যাংকে পাচারকৃত টাকা মোবাইলে রিচার্জ করতে যেন না বলা হয়!

 

৩# বিএনপির হরতালে সরকারি ছুটি ঘোষণা

নব্বইয়ের দশক থেকেই ধারণা ছিলো দেশে হরতাল ঘোষণা করলে যানবাহনের সংকট তৈরী হত৷ ফাঁকা রাজপথে ক্রিকেট খেলত কিশোর বয়সী ছেলেরা। বিএনপি সেই ধারণা বদলে হরতালের দিনে অতিরিক্ত যানজট সৃষ্টির ধারণা তৈরী করেছে। পলাতক আসামীরা দূর থেকেই ধারণা করতে পারেন দলের ভেতরকার অবস্থা। একটি সফল হরতালই পারে আসামীদের মনে আত্মবিশ্বাস জন্মাতে। তাই আসন্ন হরতাল ঘোষণার দিনে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে হরতাল সফল করা যায়। রাতারাতি দলের শক্ত অবস্থানে বিশ্বাসী পলাতক সব নেতাকর্মী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে অবশ্যই দেশে আসবেন।

৪# নয়াপল্টনে পাবজি টুর্নামেন্ট আয়োজন

বিনোদনের উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য আয়োজন করা যায় পাবজি টুর্নামেন্টের। বর্তমান বিশ্বে পাবজি খেলার নেশায় মত্ত সবাই৷ এমন চিত্তাকর্শক টুর্নামেন্টে বিজয়ের মুকুট পরার আশায় সব প্রবাসীই দেশে আসার জন্য উঠে পড়ে লাগবেন। আর এমনিতেই বন্দুক-বোমা এসবে তাদের আগ্রহ থাকার কথা, পাবজি টুর্নামেন্ট তো আসামীদের পছন্দ হবেই।

 

৫# সুন্দরী প্রতিযোগীতার বিচারক নিয়োগ

পরবর্তী সুন্দরী প্রতিযোগীতার বিচারকের আসন গ্রহণ করার অনুরোধ করা যেতে পারে পলাতক আসামীদের। মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারী, পলাতক আসামীরাও মানুষ। তাই আশা করা যায়, ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৯’ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে আসামীরা অংশ নেবেন এবং প্রতিযোগীদের চমকে দিয়ে ‘গ্রেনেড সাইন্স’ থেকে প্রশ্ন করে বসবেন ‘আর্জেস কী?’

 

৬# গান ছেড়ে দিয়েছেন মাহফুজুর রহমান

সব আসামী কি সাজার ভয়ে পালিয়েছে? এমন ধারণা থাকলে এক্ষুণি মুছে ফেলুন৷ বিশ্বস্ত এক সূত্রে (বিশ্বাসে মেলায় আসামী) খবর পাওয়া গেছে, মাহফুজুর রহমানের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান দেখে অনেকেই দেশের মায়া ত্যাগ করেছেন৷ সেই পলাতক আসামীদের ফিরিয়ে আনতে দ্রুত খবর ছড়িয়ে দিতে হবে, সঙ্গীত জগত থেকে বিদায় নিয়েছেন মাহফুজুর রহমান। খবর পাওয়া মাত্র ফিরতি এয়ার টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়াবে আসামীদের অনেকেই।

৭# সমাবর্তনে আমন্ত্রণ

কালো গাউন, কালো টুপির স্বপ্ন থাকে সবারই। আসামীরাও মানুষ, তাদেরও স্বপ্ন থাকে আকাশে ছুঁড়ে দেয়া টুপির ছবি ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে দিবে। আজই তাদেরকে সমাবর্তনে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হোক, কালই তারা দেশে ফিরে আসবে।

 

৮# সুইস ব্যাংকের নতুন শাখা বাংলাদেশে

ধনীদের হৃদরোগী বানিয়ে সুইস ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছে তারা আর কারো তথ্য গোপন রাখবে না। সুইজারল্যান্ডের সুইস ব্যাংকের অনুরূপ শাখাটি এবার বাংলাদেশে- এমন প্রাংক নিউজ করলেই টোপ গিলবে। আসামীরা প্রথমে যাবে সুইজারল্যান্ড৷ তারপর সব লেনদেন চুকিয়ে নিজ দেশের নতুন সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য একবার হলেও দেশে আসবেন।

২৫৮৬ পঠিত ... ১৯:৫৬, অক্টোবর ১০, ২০১৮

Top