ভবিষ্যৎ ডাক্তারদের অভিনন্দন। মেডিকেল ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হওয়া চাট্টিখানি কথা না৷ এবারের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের পর আমি নিজেই কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়েছি। মনে পড়ে গেলো বছর দশেক আগের কথা। নীলক্ষেতের মোড়ে একটি বাস পেছন থেকে সজোরে আমার রিকশায় ধাক্কা দেয়। তারপর তীব্র ব্যথা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঢাকা মেডিকেলে প্রায় দুইদিন ভর্তি ছিলাম। মেডিকেল এমনই এক জায়গা, যেখানে মাত্র দুইদিন ভর্তি থেকে আজ আমি এলাকার নাম করা ডাক্তার।
তোমরা যারা পাঁচ বছর সেই মেডিকেলে থাকার যোগ্যতা প্রমাণ করেছো, তাদেরকে জানাই টুপি খোলা সম্মান। তোমাদের জীবনের এই অতি মূল্যবান সময়ে আমার এত বছরের ডাক্তারি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তোমাদের জন্য কিছু পরামর্শ তো দিতেই হয়।
সে যুগে ফেসবুক ছিল না। নাম বদল করতে হলে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেটের নামই বদলে ফেলতে হত৷ প্রযুক্তির কল্যাণে তোমাদের কষ্ট কমেছে। মেডিকেলে যেহেতু চান্স পেয়ে গেছোই, দ্রত ফেসবুকে দু-চারটা ক্লিকের মাধ্যমেই নিজের নামের আগে ডাক্তার বসিয়ে দাও। মনে রাখবে, নামের আগে ডাক্তার বসানোই ডাক্তার হওয়ার মূল্য উদ্দেশ্য! সে লক্ষ্য থেকে কখনোই বিচ্যুত হয়ো না।
সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের অপচয় না করে আজই অ্যাপ্রন বানিয়ে নাও। পরিচিত ফটোগ্রাফার বন্ধুর মাধ্যমে ঝকঝকা প্রোফাইল পিকচার তুলে নাও। তোমারই কোনো সি.এস.ই পড়ুয়া বন্ধুকে হালকা ট্রিট দিয়ে সেই ছবি এডিট করো আর ঝুলিয়ে দাও ফেসবুকে। মেডিকেলে ভর্তির পর (রোগী হিসেবে) এসব কাজ করিনি বলেই আজ আমার চেম্বারে রোগীর সংখ্যা কম!
মেডিকেল জীবন খুবই কঠোর পরিশ্রমের পর। তবে যদি এত পরিশ্রমের পরও তুমি পাশ করতে না পারো, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। পড়ালেখা শেষ করে একটা ফার্মেসির দোকান দিয়ে দাও। ব্যস, তাতেই তুমি এলাকার বিখ্যাত ডাক্তার হয়ে যেতে পারবে। দেখবে, রোগীরা ডাক্তারের কাছ না গিয়ে প্রথমে তোমার কাছ থেকেই রোগ-সংক্রান্ত পরামর্শ নিচ্ছে, তোমার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ কিনছে, খাচ্ছে। আর নামের আগে একটা ডাক্তার এবং শেষে একটা এমবিবিএস তো তোমার থাকছেই। ফার্মেসির পেছনে একটা চেম্বার খুলে সেখানে রোগীও দেখতে পারবে।
মেডিকেল জীবনে তোমাকে অনেক কঠিন কঠিন সব শব্দ সহ্য করতে হবে, যেমন কার্ড, টার্ম, প্রফ ইত্যাদি। এই শব্দগুলো শিখেছি আমার এক ভক্ত অনুরাগীর কাছ থেকে। নামকরা ওষুধ কোম্পানির মেডিসিন রিপ্রেজেন্টেটিভ সে। তবে এগুলোর পাশাপাশি হাতের লেখা প্র্যাকটিস করতেও ভুলবে না। যদি তোমার হাতের লেখা খুবই স্পষ্ট হয়, তাহলে এখনই প্যাচানো দুর্বোধ্য স্টাইলে লেখার প্র্যাকটিস শুরু করো। আমার এতদিনের 'ডাক্তারি' অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি, বড় আর নামকরা ডাক্তার চেনা যায় হাতের লেখা দেখলেই। যার লেখা যত অস্পষ্ট, সে তত বড় ডাক্তার। সুতরাং ছাত্রজীবনের এই টার্নিং পয়েন্টে ডাক্তারি হাতের লেখার বিদ্যাটাও রপ্ত করতে ভুলবে না।
কিছু না দেখতে দেখতেই কেটে যাবে ডাক্তার হয়ে ওঠার এই পাঁচ বছর সময়, কারণ অন্য কোনোদিকে তাকানোর তুমি সময়ই পাবে না। হয়তো যেদিন তুমি 'আলহামদুলিল্লাহ! ফাইনাল প্রফ ডান' স্ট্যাটাসটা দেবে, সেদিনই দেখবে ফেসবু মেমোরিতে কয়েক বছর আগে চান্স পাওয়ার আনন্দে দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটা উজ্জ্বল হয়ে আছে। কদিন বাদেই তোমরা হয়ে উঠবে ডাক্তার। তবে ভয় পেয়ো না। ডাক্তারি খুবই সহজ একটি কাজ। এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়াই গত ১৫ বছর ধরে কাজটি আমি করে আসছি। রোগীর কথা শুনবে, সমস্যা অনুসারে ওষুধ দেবে। ঠিকঠাক না শুনলেও সমস্যা নেই, তুমি যদি বড় ডাক্তার হও, তুমি যা ওষুধ দেবে রোগী তাই কিনবে। আর যদি ওষুধে কাজ না হয়, ফার্মেসির দোকানদারের পরামর্শ অনুযায়ী তারা তো চিকিৎসা করবেই! দুশ্চিন্তা কেন!
রোগীর সমস্যা না বুঝলে সোজা প্রেসক্রিপশনে 'প্যারাসিটামল দুই বেলা' লিখে দেবে। মাথব্যথা থাকলে স্টেমেটিল, পেটে সমস্যা হলে ফ্লাজিল। সর্দি-কাশি হলে নানান ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি গছিয়ে দেবে এন্টিবায়োটিক। হাই পাওয়ারের এন্টিবায়োটিক না দিলে কিন্তু তুমি কখনোই বড় ডাক্তার হতে পারবে না।
প্রথম দিন অপারেশন থিয়েটারে যাবার আগে ছেলেরা অবশ্যই দাঁড়ি ট্রিম করে যাবে। মেয়েরা আইল্যাশ, ফাউন্ডেশন, আশকারা-মাশকারা মেখে যাবা। এই দিনের সেলফি ফেসবুকে অধিক জনপ্রিয়তা পায়।
সর্বশেষে এটাই বলব, তোমাদের মেডিকেল জীবন আনন্দময় হউক। পড়াশোনার ব্যাপারে কোনোধরণের সাহায্য হলের বড় ভাইয়েরা করবে না। কারণ তারা জানে ভবিষ্যতে ব্যবসা কিভাবে দাঁড় করাতে হয়। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে তোমরা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারো। আমার ঠিকানা-
বিউটি ফার্মেসি
ঢাকা মেডিকেল কলেজের পেছনের গলি দিয়ে ডানে গিয়ে মোখলেসের বিড়ির দোকানের সামনে চিপা ধরে সামনে এগুলেই আমার ক্লিনিক। (স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে নাপা ডাক্তার নামে ডাকে)