বিজ্ঞানী সফদর আলী সত্যিই কারওয়ান বাজারে জিলিপি খেতেন কিনা, বা সেটার ঠান্ডা করার যন্ত্র তৈরি করে পরে সেটা তিনি পেটেন্ট করেছিলেন কিনা, কিংবা কারওয়ান বাজারের জিলিপি ঠান্ডা নাকি গরম অবস্থাতে ভালো লাগে—এসব নিয়ে মতানৈক্য থাকতেই পারে। কিন্তু সম্প্রতি ‘আমারি ঢাকা’ নামে একটি রেস্তোরাঁয় পাওয়া যাচ্ছে ১৮০০++ টাকা দামের রেশমি জালেবি—এমন ঘোষণা তাদের পক্ষ হতে দেওয়া হয়। এর ফলে বহু মানুষ বিরূপ প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেন এক কেজি জালেবির দাম এত টাকা হওয়া।
কিন্তু আসলেই কি ক্ষোভ প্রকাশ করাটা উচিত? একটি eআরকি গবেষণায় জানা গেছে, এই জালেবির দাম ১৮০০++ টাকা হওয়ার ১০টি অ-যৌক্তিক (অতিমাত্রায় যৌক্তিক!) কারণ, যা জানলে আপনিও হয়তো নিজেকে জালেবির স্বাদ নেওয়া থেকে আটকে রাখতে পারবেন না! গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন তৌকির আহমেদ ও তাহমিদ-উল-ইসলাম!
১# সোনা দিয়ে তৈরি
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। সোনালি এই জালেবিতে আছে ঘানা থেকে আনা একদম খাঁটি সোনা। ‘বিজ্ঞাপনে সেই সোনার কথা লেখেননি কেন?’—এমন প্রশ্নের জবাবে কোম্পানির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বুঝতেই তো পারছেন, দুষ্টু লোকরা শব্দের ভিন্ন অর্থ বের করতে পারে…’
২# জিলাপির কারিগর প্যারিস থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
হয়তো এই প্রিমিয়াম জিলাপি তৈরির পেছনে যে কারিগরের হাত, তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন প্যারিসের প্রসিদ্ধ রন্ধন বিদ্যার প্রতিষ্ঠান 'ল্যু কর্ডন ব্লিউ' থেকে। সেখানে ১০ বছরের দীর্ঘ গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের পর তিনি অর্জন করেছেন 'জিলাপি মাস্টার' উপাধি। সে কারণে তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হাতে জিলাপির প্যাঁচের দাম বেড়ে তা কেজিতে ১৮০০++ টাকায় পরিণত হয়েছে।
৩# প্যাঁচ দিয়ে প্যাঁচ বোঝা
আপনি কি প্যাঁচানো কথা বোঝেন না? না বোঝার দরুন হয়ে যান ঠাট্টার পাত্র? দুই-দুবার করে শুনেও ‘দুই দুবার করে’ গানটা নিয়ে মানুষ কেন হাসি-ঠাট্টা করছে—বুঝতে পারছেন না? প্যাঁচ খেলছে না মাথায়? এই জালেবি খেয়ে বিল দেখলেই খুলে যেতে পারে আপনার মাথার সকল প্যাঁচ। জনগণের স্বার্থে 'আমারি ঢাকা' কর্তৃপক্ষ এই মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন।
৪# টয়লেট হোক সুবাসিত
ভাবছেন ১৮০০++ টাকা দিয়ে জালেবি খেয়ে কী হবে? একসময় তো কমোডেই যাবে?
কখনোই না। এই জিলিপিতে আছে দুবাই থেকে আনা ‘কস্তুরি’ ব্র্যান্ডের আতরের সুঘ্রাণ। তাই এটি আপনার শরীরে পুষ্টি যোগানের পাশাপাশি বর্জ্য পদার্থকে করবে সুবাসিত। বেঁচে যাবে এয়ারফ্রেশনার কেনার টাকা। শুধু তাই-ই না, পানি বিল কিংবা টিস্যু পেপার কেনার খরচ এবং দোকান পর্যন্ত যাওয়া কষ্ট থেকেও পাচ্ছেন মুক্তি।
৫# রেজাল্টের আগেই চাই
ভাবছেন কবে এ প্লাস পাবেন, আর কবে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবেন?
না! মিষ্টিমুখ আগে নিজে করুন। কারণ জালেবির মাঝে আছে জিঙ্কো বিলোবা; যা আপনার মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তিকে করে প্রখর। ফলে পরীক্ষার আগে পাওয়া প্রশ্ন বা সারা বছরের পড়া—সবকিছুই মাথায় নিয়ে হেলেদুলে হলে যেতে পারবেন আত্মবিশ্বাসের সাথে! সে কারণেই এই জ্ঞানবর্ধক গুণসম্পন্ন স্পেশাল জালেবির কেজি ১৮০০++ হওয়া নিতান্ত অস্বাভাবিক কিছু নয়।
৬# ফেসবুকে লাইক পেতে
ফেসবুকে লাইক পাচ্ছেন না? কিংবা দুঃখের পোস্টেও হাহা দিচ্ছে সবাই? বুঝতে পারছে না অর্থনৈতিকভাবে আপনার সামাজিক অবস্থানের দাপট? তাহলে আর দেরি কেন? ‘আমারই ঢাকা’য় জালেবি খেয়ে খাবার-দাবারের গ্রুপে রিভিউ পোস্ট দিন, চেক-ইন দিন নিজের টাইমলাইনে, আর চলে আসুন ফেসবুকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আর হ্যাঁ, কতটুকু কত টাকা দিয়ে কিনেছেন, সে বিষয়টা উল্লেখ করতে ভুলবেন না যেন!
৭# বাঘের দুধ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র থেকে জানা গেছে যে, এই জিলাপি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে সরাসরি সুন্দরবন থেকে সংগৃহীত খাঁটি বাঘের দুধ। তবে কোন ডেইরি ফার্ম এই দুঃসাহসিক ব্যবসায় নেমেছে তা জানা যায়নি। বাঘের দুধের বিশেষ পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কোন তথ্য না থাকলেও অনেকেই কৌতূহলবশত এর স্বাদ আস্বাদন করতে ছুটে যাচ্ছেন আমারি ঢাকার জাফরানি জিলাপি।
৮# ডায়েটের জন্য
মেসে, হোস্টেলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকছেন? হোটেল বা হলের খাবার খেয়েও পাচ্ছেন মুটিয়ে যাওয়ার ভয়? আর নয় চিন্তা। মাসে কমপক্ষে তিনবার সবান্ধব (কমপক্ষে ৫ জনকে নিয়ে) খেয়ে আসুন ১৮০০++ টাকা কেজি দামের রেশমি জালেবি। আর মাস শেষে ওজন মেপে দেখুন ম্যাঅ্যাঅ্যাজিকক!
৯# জিলাপি দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং
বর্তমানে ডিজিটাল জগতে বিটকয়েন সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে তুঙ্গে। অনেকেই বলছেন প্রচলিত মুদ্রার দিন শেষ হয়ে গিয়েছে- ভবিষ্যতে বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিরই রাজত্ব চলবে। আর এ ধরণের কারেন্সি মাইনিং করার জন্য ব্যবহার করা হয় গ্রাফিক্স কার্ড। কিন্তু বর্তমানে গুজব শোনা গিয়েছে, হ্যাকিংএর ভয়ে এই কারেন্সি মাইনিং এ ব্যবহার করা হচ্ছে জাফরানি জিলাপি। আর এই জিলাপির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে 'আমারি ঢাকা'র জিলাপির মূল্যও সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১০# অ্যাপলের প্রযুক্তি ব্যবহার
আমারি ঢাকা রেস্তোরাঁর কর্তৃপক্ষের সাথে এই হট জাফরান রেশমি জালেবি'র প্রস্তুতপ্রণালী সম্পর্কে জিজ্ঞাস করার পর জানা যায়, এই জালেবি তৈরিতে সর্বাধুনিক অ্যাপল কম্পিউটারের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। স্টিভ জবসের নিজ হাতে প্রোগ্রাম করা সফটওয়ারের মাধ্যমে এই জালেবির প্যাঁচ নির্ধারিত হয়। কর্তৃপক্ষ আরও জানান, এই জালেবির নাম প্রাথমিকভাবে 'iজালেবি' রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা পরবর্তীতে আইনি জটিলতার কারণে বাদ দেয়া হয়।
বোনাস কারণ: এই লেখাটির সত্যতা যাচাইয়ে
আপনি যদি eআরকির এই লেখাটির কাল্পনিকতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে চান, কিংবা এর কত শতাংশ সত্য এবং কত শতাংশ সার্কাজম, এ বিষয়ে গবেষণা করে থিসিস লিখে সর্বোচ্চ নম্বর তুলতে চান কমেন্ট বাক্সে, তাহলে অবশ্যই অন্তত একবার খেয়ে আসুন ‘আমারি ঢাকা’-এর ‘হট জাফরান রেশমি জালেবি’।