সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া বাবুল হাসান স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় একটা বিরাট অন্যায় কাজ করে ফেলল। এত বড়ো অন্যায় ওই স্কুলে আগে কেউ করেনি৷
যথারীতি তাকে প্রধান শিক্ষকের সামনে হাজির করা হলো। কিন্তু তার হাবভাব দেখে তাকে মোটেও অনুতপ্ত মনে হচ্ছিল না, বরং সে মাথা উঁচু করে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।
রতন স্যার বললেন, ‘স্যার ওকে রাসটিকেট ধরিয়ে বের করে দিন স্কুল থেকে!’
প্রধানশিক্ষক বললেন, ‘না রতনবাবু, আমি যদি ওকে বের করে দিই তাহলে ও আর শিখবে কী?’
অ্যাই বাবুল, ‘তুই কি স্বীকার করছিস যে তুই পরীক্ষার হলে নকল করেছিস?’
রতন স্যার রাগে গজরাতে লাগলেন, ‘স্যার স্বীকার করার কী আছে? আমি নিজেই হাতেনাতে ধরেছি!’
বাবুল হাসান বলল, ‘স্যার, রতন স্যার যদি জিজ্ঞেস করে আমি নকল করেছি কি না, তাহলে আমি বলবো করিনি। কিন্তু যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন তাহলে হ্যাঁ,আমি স্বীকার করছি, আমি নকল করেছি।’
প্রধানশিক্ষক কণ্ঠস্বর নরম করে বললেন, ‘ দেখলেন রতনবাবু, মুখ দিয়ে সত্য বের করাতে হলে বাচ্চাদের আদর করা লাগে। আপনি জোর করলে ওরা বেঁকে বসবে। এরা কচি কচি বালক। এদের এত চাপ দিলে এরা তো অঙ্কুরেই ঝরে যাবে।’
রতন স্যার বললেন, ‘ স্যার আপনি জানেন না এইটা একটা বদের হাড্ডি, আর আমি এগুলারে হাড়ে হাড়ে চিনি।’
প্রধানশিক্ষক দরদভরা কণ্ঠে বললেন, ‘ মাফ করে দেন রতন বাবু, দোষ আপনাদেরও কম না এই ছেলেটাকে যদি আপনারা ক্লাসে ঠিকভাবে গাইড করতেন, তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। কাজের সময় নিজেরাই কাজে ফাঁকি দিয়েছেন এখন একে বকে লাভ কী? শোনেন, ছেলেটা যদি শিখে আসার সুযোগ পেতো, ও অবশ্যই নকল আনতো না, কী রে বাবুল, বল, আনতি তুই?’
বাবুল হাসান হাসিমুখে বলল, ‘ না স্যার, আমি শিখে এলে কক্ষণোই নকল আনতাম না।’
প্রধানশিক্ষক বললেন, ‘ দেখলেন রতনবাবু? আনতো না। আপনি এক কাজ করুন, ওর খাতা এক্সপেল করবেন না। ওকে ছেড়ে দিন। আর এই সাবজেক্টের খাতা যে স্যার দেখবেন তাকে বলবেন আমি বলেছি বাবুল হাসানকে যেন পাশ মার্ক দিয়ে দেওয়া হয়।’
বাবুল হাসান দৌড়ে গিয়ে প্রধানশিক্ষককে কদমবুসি করলো। স্যার তাকে কানে ধরে উঠিয়ে আনতে আনতে আদরভরা কণ্ঠে বললেন, ‘ এমনি এমনি তোকে ছাড়ছি না, তুই প্রতিজ্ঞা কর- আজ যা শিখলি তা তোর জীবনে কাজে লাগাবি? কাউকে হুট করে বিপদে ফেলে দিবি না। ভূপেন হাজারিকা বলেছেন, মানুষ মানুষের জন্য। মনে থাকবে?’
বাবুল হাসান বলল, ‘একশবার মনে থাকবে স্যার!’
~
এই বাবুল হাসান অনেককাল পর উগান্ডার অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ক্ষমতায় থাকাকালে একদিন তিনি দেখতে পেলেন, কালো টাকা নিয়ে সেদেশের অসংখ্য মানুষ বিপাকে পড়েছে। এতবছরে তিনি সব শিক্ষা ভুলে গেলেও প্রধানশিক্ষকের শেখানো সেই জীবনমুখী শিক্ষা ভোলেননি। স্যার বলেছিলেন তাকে কে যেন বলেছিলেন- মানুষ মানুষের জন্য। কালো টাকা নিয়ে যারা বিপাকে পড়েছে, তারাও তো মানুষ। এই টাকা সাদা করিয়ে তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে হবে।
পরবর্তী বাজেটে তিনি নির্ধারণ করলেন, বৈধ টাকায় সর্বোচ্চ ত্রিশ পার্সেন্ট কর ধরা হলেও কালো টাকা সাদা করতে চাইলে কর ধরা হবে মাত্র পনের পার্সেন্ট।
মিডিয়া বাবুল হাসানকে ঘিরে ধরলো, ‘স্যার! এসব কী? এটা কেমন নিয়ম হলো?’
বাবুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘ ওরা যদি পারতো তাহলে কেউই ব্ল্যাক মানি তৈরি করতো না। পারছে না বলেই করেছে। আমি বলে দিচ্ছি- কেউ পনের পার্সেন্ট কর দিয়ে ব্ল্যাক মানি হোয়াইট করতে চাইলে তাকে যেন কোনো ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রশ্ন করা না হয়। এ আমার গুরুদক্ষিণা।
আর যারা টাকা সাদা করতে আগ্রহী তাদের বলছি, মনে রাখবেন- মানুষ মানুষের জন্য। আপনাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে- আপনারা দেশকে হুট করে বিপদে ফেলে দিবেন না। আমি কিন্তু আপনাদের এমনি এমনি ছাড়ছি না, প্রতিজ্ঞা আমার বাসায় এসে করতে হবে। আমি সামনাসামনি দেখতে চাই আপনি কীভাবে প্রতিজ্ঞা করেন। জয় উগাণ্ডা।’
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন