২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো শহর। চলছে ম্যাকওয়ার্ল্ড এক্সপো। মঞ্চের সামনে উপবিষ্ট শত শত দর্শক উৎসুক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। তাদের অপেক্ষার তর সইছে না। কারণ মঞ্চে যিনি প্রবেশ করতে যাচ্ছেন তার হাত ধরেই বদলে যেতে চলেছে পৃথিবীতে মানুষে মানুষে যোগাযোগের সকল ইতিহাস।
যথারীতি নাম ঘোষণা শেষ হতেই মঞ্চে পা রাখলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আপেলের সিইও ইস্টিভ জবস। তার এক হাতে তৎকালীন স্বনামধন্য চারটি কোম্পানির মোবাইলফোন আর অন্য হাতে একটা গদা।
ইস্টিভ জবস সবার দিকে তাকিয়ে হে হে করে একবার হাসলেন। ভাবলেন, বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে সবার সামনে বাংলায় বক্তৃতা দিতে পারাটা একটা বাহাদুরির ব্যাপার। তাই তিনি স্পষ্ট বাংলাতে বললেন, ভাইসব, আপনারা কিন্তু প্রচুর ঠকতেছেন।
এরপর তিনি একবার খাকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে মূল বক্তব্য শুরু করলেন, এই যে আমার হাতে আপনারা এখন যে ফুনগুলা দেখতেছেন এগুলা হইলো বর্তমান বাজারের সেরা ব্র্যান্ডের সেরা চাইরটা মুবাইলফুন। মটোরোলা, ব্ল্যাকবেরি, পাম ট্রিও আর নকিয়া। হে হে, কিন্তু এগুলা সেরা ফুন হইলে কী হবে এগুলাতে চল্লিশটা কইরা বাটন আছে। এত বাটন দিয়া মানুষ করবেটা কী? শার্টে লাগাবে?
আর দেখেন, বাটনগুলা সব প্লাস্টিক দিয়া বানানো হইছে, মানে এত্ত বস্তি যে কী বলবো! আমার আর সহ্য হইতাছে না, আমি এক্ষণই এইগুলা সব ভাইঙ্গা ফেলবো... বলতে বলতে তিনি নকিয়ার দামী ফোনটাকে স্টেজের উপর সজোরে আছাড় মারলেন আর সেটা তিন হাত দূরে গিয়ে পড়ল। অথচ এর বডিতে কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতি হতে দেখা গেল না।
ইস্টিভ জবস তখন লাফ দিয়ে নকিয়া ফোনের সামনে চলে এলেন। তারপর চট্টগ্রামের জহুর হকার্স থেকে কেনা বুটজোড়া দিয়ে নকিয়ার উপর একের পর এক পদাঘাত করতে করতে বললেন, ভাইঙ্গাই ফেলমু আজকে, আস্ত রাখমু না। যা ভাইঙ্গা যা! যা! এক্ষুণি যাবি!
এইসময় ক্যামেরাম্যান বলে উঠলো, ভাই ভাই ভাই, আমারে মটোরোলাটা দিয়া দেন!
দর্শকসারির মধ্যেও অনেকে চিৎকার দিয়ে উঠলো বাকি তিন ব্র্যান্ডের দামী ফোনগুলোর জন্য।
ইস্টিভ জবস তখন সবাইকে দেখিয়ে ফোনগুলো উঁচু করে ধরলেন, কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে উবু হয়ে ফোনগুলো একটা একটা করে মঞ্চের উপর রাখলেন।
তারপর হাতের গদাটা সবার দিকে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললেন, যেখানে আপনারা এসবের চাইতে ভালো জিনিস পাইতে যাচ্ছেন সেখানে এইসব ফুন আমি কেন রাখব? কেন কেন? সব... সব ভাইঙ্গা চুরমার কইরা ফেলবো... বলতে বলতে তিনি ধপাধপ গদাপেটা করতে লাগলেন মঞ্চে।
দর্শকরা সবাই হায় হায় করে উঠলো, কেউ কেউ তো কেন্দেও দিলো।
তখন ইস্টিভ জবস বললেন, সবাই থামেন। অনেক কষ্ট করছেন আপনারা। আর করতে হবে না। এই যে দেখেন আমি—আপেলের সিইও ইস্টিভ জবস, আপনাদের জন্য আনছি বিজয়ফুন। দ্যাশে এটা বিজয়ফুন নামে চললেও বিদ্যাশের মাটিতে এটা চলব আইফুন নামে। কারো কোনো সমস্যা? থাকলেও কিছু করার নাই, এই ফুন যে ব্যবহার করবে না সে-ই পস্তাবে। কারণ, এই ফুন বানাইতে হলে অন্য কোম্পানির আরও পাঁচবছর আমার কাছে আইসা পড়তে হবে। এই ফুনে কোনো বাটন নাই, আছে টাস, আছে কল করার সুবিধা আর আছে ইন্টারনেট। সবকিছু একসাথে এক ডিবাইসে। হ ভাই, এক ডিবাইসে। ঠিক শুনছেন ভাই, এক ডিবাইসে।
দামটা একটু বেশি হইলেও শুধুমাত্র আজকের জন্য এই ভিডিও চলাকালীন যারা অডার করবে তাদের জন্য ৩০% ডিসকাউন্ট। আর প্রথম ২১ জনের জন্য ৩১% ডিসকাউন্ট...
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন