কুদ্দুস সাহেবের হাতে একটি ব্যাটারিচালিত গাড়ির হর্ন। এই হর্ন তিনি গত তিনদিন যাবৎ সাথে নিয়ে ঘুরছেন। হর্নের শব্দ প্রচণ্ড তীব্র। সরাসরি কানে গিয়ে লাগে। প্রথম দিনেই তিনি এর অভিনব সুফল প্রত্যক্ষ করেছেন।
চট্টগ্রামের একটি ব্যস্ত রাস্তা। প্রবর্তক মোড় থেকে গোলপাহাড় মোড় যাবার পথে সেখানে ফুটপাতের অস্তিত্ব থাকলেও ফুটপাত অ্যামিবার রূপ ধারণ করেছে। খালি চোখে দেখা যায় না। রাস্তার ওপর দিয়ে একই সাথে মানুষ হাঁটছে গাড়িও চলছে। গাড়িগুলোকে দেখে কুদ্দুস সাহেবের খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড়ের কথা মনে পড়ে। তার ইচ্ছে করে বায়েজিদ বোস্তামীর (রঃ)-এর মাজার থেকে একটা কচ্ছপ ধরে নিয়ে এসে এখানে ছেড়ে দেয়। তার দৃঢ় বিশ্বাস গাড়িগুলোর আগেই কচ্ছপটা প্রবর্তক মোড় থেকে গোলপাহাড় পৌঁছে যাবে। তাও মাত্র দুই মিনিটে।
হর্ন কিনে প্রথমদিন তিনি সেটা হাতে নিয়ে ঐ রাস্তাতেই হাঁটছিলেন। একে তো গাড়িগুলো চলছে না তার উপর যে যেভাবে পারছে ইচ্ছেমত হর্ন বাজিয়ে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এই হর্ণি সংগীতে রিকশাওয়ালারাও যোগদান করেছে। মনে হচ্ছে যেন লাইভ অর্কেস্ট্রা চলছে। কুদ্দুস সাহেব একটা দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজির পাশ দিয়ে যাবার সময় ড্রাইভারটা হঠাৎ বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে দিলো। কুদ্দুস সাহেবও আর দেরি না করে দুই কদম পিছনে এসে ড্রাইভারের কানের কাছে তার কেনা হর্নটা বাজিয়ে দিলেন তিনবার। ড্রাইভার 'ওই রত্তাকু চাচবা!' বলে গালি দিয়ে উঠলো। কুদ্দুস সাহেব রাগ না করে প্যাঁ পোঁ করে আরও দুইবার বাজিয়ে দিলেন ড্রাইভারের কানের ছিদ্র বরাবর। ড্রাইভার বললো, ‘মামু বুল অই গিয়ে, মাফ গরি দন। আঁই বোত হারাপ, হরণ বাজাই আপসারাপ (শুধুশুধু)।’
এরপর থেকে যে গাড়িই কুদ্দুস সাহেবের কানের কাছে হর্ন বাজিয়েছে তিনি কাল বিলম্ব না করেই ড্রাইভারের কান বরাবর বাজিয়ে দিয়েছেন। দেখতে দেখতে দুই তিনদিনে ব্যাপারটা বেশ জমে গেল। তার দেখাদেখি অনেকেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা শুরু করলো।
চতুর্থ দিন দেখা গেল রাস্তার প্রায় সবার হাতেই একটা করে হর্ন। গাড়িগুলো যখনই হর্ন বাজাচ্ছে প্রতিবাদে পথচারীরাও হর্ন বাজিয়ে দিচ্ছে তাদের কানের কাছে। পুরো রাস্তা হর্নের মধুর শব্দ আর সুদানির্ফুয়া রবে ভরে গেল। পাশেই বদনা শাহে্র মাজারের কাছে হর্ন বিক্রির একটা দোকানও বসে গেল। তার ব্যবসাও জমজমাট। দুই দিনেই দোকানদারকে অ্যান্ড্রয়েড ছেড়ে আইফোন ব্যবহার করতে দেখা গেল।
এদিকে চতুর্থদিনের সন্ধ্যায় শব্দদূষণের ব্যাপারটা সিএমপির কানে গেল। জরুরী বৈঠকে ঠিক হল পরদিন তারা পাঁচলাইশ থানার একটা টিম পাঠাবে এই শব্দদূষণ সরেজমিনে তদন্ত করতে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রয়োজনে তারা এমনভাবে লাঠিচার্জ করবে যাতে প্রচুর মাইর হবে কিন্তু সাউন্ড হবে না।
হর্ন কেনার পঞ্চম দিন কুদ্দুস সাহেব অফিস শেষে হর্ন হাতে ঐ রাস্তায় হেঁটে চলেছেন। তিনি একা নন। শত শত মানুষ হাঁটছে। তাদের সকলের হাতেই একটা করে হর্ন।
পাঁচলাইশ থানা পুলিশ সিভিল ড্রেসে ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে এসে অবাক হয়ে দেখলো ব্যাপারটা! শত শত গাড়ি, শত শত পথচারী, সবার হাতে হর্ন, প্রচণ্ড জ্যাম! কিন্তু রাস্তার এমাথা থেকে ওমাথায় কোনো শব্দ নেই। মনে হচ্ছে কেউ যেন সাইলেন্সার লাগিয়ে দিয়েছে রাস্তার বুকে। ব্যাপারটা তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না।
দেখতে দেখতে ব্যাপারটা পুরো চট্টগ্রাম শহরে ছড়িয়ে পড়লো। এদিকে এক ধনীর দুলালী জ্যামে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে ইউটিউব থেকে মুভি দেখা শুরু করলো। মুভির শুরুতে ব্যাকগ্রাউন্ডে কে যেন বলে উঠলো— ইস শেহেরকো ইয়ে হুয়া ক্যায়া?
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন