এক লোক, ধরা যাক তার নাম মতলুব সাহেব, হুড়মুড় করে ছুটলেন বাজারে মুরগি কিনতে। অনেক দেরী হয়ে গেছে এবার ইদের বাজার সদাইয়ে। গিয়ে দেখেন মুরগির দোকান খালি, সব মুরগি বিক্রি প্রায় শেষ । একটা দোকানে একটা মুরগি পাওয়া গেল। সেটাই ঝটপট কিনে ফিরে আসছেন, হঠাৎ তার মনে হলো মুরগির সাইজটা বড্ড ছোট ছোট লাগছে! বদলে নিলে কেমন হয়?
ঐ মুরগির দোকানদার তখন দোকান বন্ধ করার পায়তারা করছে, কারণ শেষ মুরগিটা একটু আগে ঐ লোকটাই কিনে নিয়ে গেছে। আর তখনই সেই লোক এসে হাজির।
: ভাই মুরগিটা একটু বেশী ছোট। একটু বদলে দেয়া যায়?
: এ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই... বলে লোকটা ঐ মুরগি নিয়ে ভিতরে চলে গেল এবং নতুন প্যাকেট করে ঐ মুরগিটাই আবার ফেরৎ দিল লোকটাকে।
: হ্যাঁ এটা ঠিক আছে। আর কত দিতে হবে?
: আর একশ দিলেই হবে।
লোকটা মানিব্যাগ খুলে টাকা দিতে যাবে, হঠাৎ বলল, ‘ভাই এক কাজ করুন। আগের মুরগিটাও দিয়ে দিন ওটাও নিয়ে নেই।’
মুরগির ব্যবসায়ীর মাথা পরিষ্কার। বহু ঘাটের জল খেয়ে এবং পানি ঘোলা করে এই ব্যবসায় এসে থিতু হয়েছে সে। বলল, ‘কিছু মনে করবেন না ভাই , ওটা বিক্রি হয়ে গেছে।‘
: মানে! কী বলছেন? কে কিনল? আমি তো এখানে দাঁড়িয়ে আছি!
দোকানী এবার গলা এক ধাপ নামিয়ে ফেলল, ‘আরে ভাই ব্যাকডোর দিয়ে বিক্রি হয়ে গেছে। ঐ একটাই মুরগি ছিল যে ...’
: ব্যাকডোর দিয়ে মানে?
: ভাই কিছু মানুষ আছে আমাদের সমাজে যারা প্রকাশ্যে মুখ দেখাতে পারে না। তারাই ব্যাকডোর দিয়ে কেনাকাটা করে।
: বলেন কী? এরা কারা?
: এরাই তো চারপাশে আছে! এই যেমন ধরুন বাফুফের কর্মকর্তা সোহাগ সাহেব... এখন টক অব দ্যা টাউন চলছে।
: যাকে ৪০০ বল কেনার জন্য ফিফা টাকা দিয়েছিল আর উনি একটা বলও কেনেননি?
: ঠিক ধরেছেন। ফিফার ফুঃফায় ঐ লোকের এখন আর মুখ দেখানোর জো আছে? উনার ব্যাকডোর দিয়ে মুরগি কেনা ছাড়া উপায় কী? উনাকেও তো ঈদ করতে হবে নাকি?
মোতালেব সাহেব বাড়ী ফিরে দেখেন বাসার সামনে পাড়ার পরিচিতরা সব আড্ডা দিচেছ। আড্ডার বিষয় ... ঐ সোহাগ সাহেব যিনি ফুটবল না কিনেই সব ইউরো-ডলার হাপিশ করে দিয়েছেন।
: আচ্ছা ফুটবল না কেনার এত টাকা সোহাগ আঙ্কেল কী করলেন? বয়সে তরুণ একজন প্রশ্ন করে বসে।
: খুব সম্ভব ইন্টারকন থেকে সোনার জিলিপি কিনেছেন।
: কত কেজি কিনেছেন? মতলুব সাহেব প্রশ্ন করে বসলেন
: কম করে হলেও পাঁচ কেজি।
: তুমি এত খবর জানলে কীভাবে হে ?
: আরে আমার এক কাজিন সাংবাদিক। সে এর ওপর একটা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট করেছে।
: আরে ছ্যা ছ্যা তোমরা এখনও ঐ বিশ হাজার টাকা কেজির সোনার জিলিপি নিয়ে পড়ে আছ? ইদের বাজারে এক দোকানে দেখলাম এক পিস পাঞ্জাবী বিক্রি হচ্ছে পঁচিশ হাজার টাকায় সে খবর রাখ? আর লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস শাড়ি এসবের কথা আর নাই বা বললাম…
: থ্রি পিস শাড়ি কী জিনিস?
: ভাই রে… এসব বুঝতে হলে আগে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম সোনার জিলিপি কিনে খেতে হবে। আরেকজন পাশ থেকে বলে।
: আসলে কী জানো... একজন গুরুগম্ভীর ভাবে শুরু করল ‘একটা জিনিস তখনই এক্সপেনসিভ হয় যখন সেটা স্পেশাল... আর জিনিসটা স্পেশাল বলেই সেটা এক্সপেনসিভ... এখন তোমরা ভেবে বের কর কোনটা আগে এক্সপেনসিভ আগে না স্পেশাল আগে...
: এত দেখছি মুরগি আগে না ডিম আগের অবস্থা!
: বরং তোমাদের একটা গল্প বলি... একবার সক্রেটিসকে তার শিষ্যরা এরকম একটা এক্সপেনসিভ দোকানে নিয়ে গেল। তারা ভাবছিল এই মহান দার্শনিক এত সাধাসিধেভাবে থাকে, তাকে দেখানো যাক না দুনিয়ায় কত দামী দামী জিনিস আছে। এসব দেখে তিনি কী মন্তব্য করেন। সক্রেটিস পুরো দোকান ঘুরে দেখলেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মন্তব্য করলেন, ‘সত্যি কত মূল্যবান জিনিসপত্রই না আছে এই পৃথিবীতে... যার কোনটাই আসলে আমার দরকার নেই। ’
মতলুব সাহেব আড্ডায় নগদে দু’কাপ চা খেয়ে বাসার পথ ধরলেন তার ফ্রন্টডোরে কেনা মুরগি নিয়ে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন