সব দোষ অরুণের মা-বাবার! ছেলেটার দুরবস্থার জন্য প্রথমত দায়ী তার মা-বাবা। তাদের কারণে ছেলেটাকে সবখানে দ্বিতীয় হতে হচ্ছে। ট্রাকের গায়ে লেখা থাকে জন্ম থেকে জ্বলছি। সে নতুন টি-শার্ট বানাতে দিয়েছে। পিঠে লেখা থাকবে, জন্ম থেকে দ্বিতীয় হচ্ছি!
(২)
: মা, তোমরা এটা কোন কাজ করছো?
: কী কাজ বাবা?
: আমাকে দুই নাম্বারে ডাউনলোড করতে গেলা কেন তোমরা?
: ডাউনলোড?
: ডাউনলোড মানে বোঝ না? মানে আমারে দুই নাম্বারে জন্ম দিলা কেন তোমরা? প্রথম সন্তান আমারে নিলে কী দোষটা ছিল?
: ও অরুণের বাপ! রাতভর ফেসবুকিং করে দেখি ছেলেটার মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে। তুই এক নাম্বারে না দুই নাম্বারে ডাউনলোড হবি, সেটা কি আমরা ঠিক করেছি? যা তো এখান থেকে।
(৩)
বাবা স্কুলে নিয়ে গেল ভর্তি করাতে। তখন এখনকার মতো লটারি ফটারি ছিল না। সরাসরি ভর্তি। কেরানি বলল, হেডস্যার ঘণ্টাখানেক পরে আসবে। আপনারা একটু বসুন।
অরুণের বাবা বসে না থেকে চারপাশটা ঘুরে দেখতে বের হলো। এসে দেখে এইমাত্র একজন ভর্তি হলো। যার ফলে অরুণের রোল হলো দুই। আশ্চর্যজনক হলো এক রোলধারী মেয়েটার নামও তার নামের মতো। অরুণা। এই যে দুই হওয়া শুরু হলো, এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। মাঝখানে শুধু একটু ক্ষণিকের আনন্দ এসেছিল।
ক্লাস ফাইভের ঘটনা। ম্যাম ঘোষণা করলো, ‘এবার ক্লাশ ফোরের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে অরুণ।‘ অরুণের তো আত্মহারা অবস্থা। ইয়াহু! একটু পর তার অবস্থা আক্ষরিক অর্থেই আত্মহারা হলো যখন জানলো ম্যাম ভুলে অরুণার জায়গায় অরুণ বলে ফেলেছিল। বেচারা অরুণ! ব্যাডলাক খারাপ হলে যা হয় আরকি!
কলেজ পর্যন্ত তার দুই হওয়া অক্ষুণ্ণ থাকল। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পালা। লিখিত পরীক্ষায় প্রথম হল। কিন্তু মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের নাম্বার যোগ হওয়ার পর অবস্থান দ্বিতীয়! প্রথমেই দ্বিতীয় বানিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতে আর কতবার দ্বিতীয় বানায়, এই শঙ্কায় সে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি। তাঁর একটা মানইজ্জত আছে!
সবকিছু সে মেনে নিয়েছে। তাই বলে প্রেমের ক্ষেত্রেও? জুনিয়র ব্যাচের এক মেয়েকে ভালো লাগে। প্রেমের প্রস্তাব দিল। উত্তর শোনার পর অরুণের মুখ থেকে একটা কথাই শোনা গেছে--ও খোদা, তুমি মোরে উঠাই নাও। আমি থাকতাম না আর এই ধরাধামে!
চলুন তাদের কথোপকথন শুনে আসি।
অরুণ: বুড়ো হতে চাই তোমার সাথে।
মেয়ে: জানি। বলতে হবে না। সমস্যা হলো আমার আবার আপনাদের ব্যাচের এক সিনিয়রকে ভালো লাগে। প্রোপোজালও পাঠিয়েছি। উনি অ্যাকসেপ্ট না করলে আপনার প্রোপোজাল অটোমেটিক অ্যাকসেপ্ট হয়ে যাবে।
যাকে ভাল লাগে তারই বয়ফ্রেন্ড আছে। জটিল সমস্যা। সে নিজেই সমাধান করে ফেলল। এরপর 'ফার্স্ট ইয়ার' এর মেয়েরা যেদিন ভর্তি হতে আসবে সেদিনই প্রোপোজ করতে হবে। একটুও দেরি না!
সে-ই দিন চলে এল। এবার তার প্রেম কে ঠ্যাকায়!
: নাম কী তোমার?
: রুপা, ভাইয়া।
: তা রুপা, সরাসরি মূল কথায় আসি। তোমার নিশ্চয়ই কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই, তাই না?
: আছে, ভাইয়া। এই ভার্সিটিতেই পড়ে।
: বল কী? কলেজ ফ্রেন্ড ছিল?
: না।
: ভর্তি কোচিংয়ে পরিচয়?
: না।
: বড় ভাইয়ের ফ্রেন্ড?
: না।
: ফ্রেন্ডের বড় ভাই?
: না।
: ফেসবুকে পরিচয়?
: না ভাইয়া। এইতো....প্রাইমারি স্কুলের বন্ধু।
: জিয়ো প্রেম, জিয়ো!
পরিশেষ: অরুণের ভার্সিটির রেজাল্ট দিয়েছে। তার পালকে যুক্ত হয়েছে নতুন খেতাব। তৃতীয় হওয়ার বিরল সম্মান অর্জন করেছে সে।
সপ্তম সেমিস্টার পর্যন্ত সে ডিপার্টমেন্টে প্রথম ছিল। শেষ সেমিস্টার শেষে সে এখন তৃতীয়। প্রথম দুজন শিক্ষক হিসেবে ডিপার্টমেন্টে যোগ দিতে পারবে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন