নিশ্চিত হওয়ার জন্য সোহেলকে আবার জিজ্ঞেস করলাম, 'তুই শিওর এটাতে কাজ হবে?'
সে চোখেমুখে শতভাগ কনফিডেন্স নিয়ে বলল, 'সিউর না মানে? দুইশো পার্সেন্ট শিওর। এই জাতিরে আমার ভালোমতো চেনা আছে। অন্য কোনো কিছুতে কাজ না হলেও গুজবে কাজ হবে শিওর থাক।'
'তা ঠিক। এইতো কয়েকদিন আগে সবাই করোনা থেকে মুক্তি পেতে রং চা খাইল। কোন বাচ্চা নাকি জন্মের পর এই প্রেসক্রিপশন দিয়েই মারা গেছে।'
'তারপর কোন এক এলাকায় নাকি এক রাতেই এলাকার সব থানকুনি পাতা গ্রামবাসী সাবাড় করে ফেলছে। কারণ গুজব ছড়াইছে থানকুনি পাতার রস খাইলে করোনা বাপ বাপ করে পালাই যাবে। সবই বুঝতেছি দোস্ত। কিন্তু আমাদের এই গুজবে কাজ হবে তো? শেষে জলিল চাচা লাঠি নিয়ে পেছনে দৌড়াবে না তো?'
'ওরে, তোরে আর কতবার বলব। কাজ হবে। আলবত কাজ হবে।'
বুকে সাহস সঞ্চয় করে চললাম জলিল চাচার বাড়ি। এর আগে তিনবার গেছিলাম। কাজ হয় নাই।
জলিল চাচা এলাকার সবচেয়ে ধনী লোক। পিতার সহায় সম্পত্তি ছিল। তারপর রাজনীতিতে ঢুকে দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তাই গ্রামের করোনার্তদের সাহায্যের জন্য চাচার কাছে গেছিলাম।
‘চাচা, গ্রামের গরীব মানুষদের এক মাসের দায়িত্ব নেন। আপনার তো টাকা পয়সার অভাব নাই। এক মাসের জন্য গ্রামের লোকগুলার দায়িত্ব নিলেও আপনার টাকার কিছুই হবে না।‘
চাচা ফুঁ দিয়ে চা খেলেন। তারপর বললেন, ‘দেখো, বাবারা, তোমরা ভার্সিটিতে পড়ো। তোমাদের কথা ফেলতেও পারি না। যাও। গ্রামের ১০ ফ্যামিলিকে এক বেলা খাওয়াব আমি। কথা দিলাম।’
‘চাচা, একদিনের খাবারে তো কিছুই হবে না। মানুষগুলার কোনো কাজকর্ম নাই। আপনি চাইলেই পারেন। গরীবদেরকে সাহায্য করলে অনেক নেকি হাসিল হয় চাচা।‘
চাচা সাফ জানিয়ে দিল, ‘আমি পারলাম না বাবারা।’
আজ চতুর্থবারের মতো যাচ্ছি। যথারীতি চাচা আছেন আলিশান রকিং চেয়ারে বসে।
চাচার কানের কাছে গিয়ে বললাম, ‘চাচা, শুনতে বেয়াদবি মনে হতে পারে। ওই যে দেশসেরা ওয়াজ বক্তাকে চেনেন না? এখন ব্যাপার হচ্ছে চাচা সব কথা তো আর তিনি পাবলিকলি বলতে পারেন না। তাই একটা বার্তা তিনি মোবাইলে মেসেজ করে পাঠাচ্ছেন।’
এতোটুক বলার পর সোহেলের দিকে তাকালাম। সোহেলের ভাবভঙ্গি বলছে, ‘আরে ব্যাটা, বলে ফেল। এতো ভয় কীসের?’
আমি আবার শুরু করলাম। ‘চাচা, ঘটনা হচ্ছে, হুজুর বলছে, এই করোনার পরের সময় যেসব অতি ধনী লোক গরীবদেরকে সাহায্য করবে না, তাদের যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাবে। অলরেডি প্রমাণ পাওয়া গেছে। বরিশাল আর খুলনায় দুই মহিলা অলরেডি স্বামীকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে।’
চাচা একবার সোহেলের দিকে তাকায়। একবার আমার দিকে। ‘সোহেল, তুমি কি জানো তোমার বাবার বিয়ে দিছি আমি? একজন মুরব্বির সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় শেখো নাই? দূর হও আমার বাসা থেকে। বেয়াদব ছেলেপেলে যত্তসব। আর কোনো দিন যেন আমার বাড়ির ত্রিসীমানায় তোমাদেরকে না দেখি।’
দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম। সোহেলের শতভাগ কনফিডেন্ট মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
পরেরদিন চাচা আমাকে কয়েকবার কল দিছে। ভয়ে রিসিভ করি নাই। শেষমেশ আব্বার কাছে কল দিলো। আমি মান-ইজ্জতের কথা চিন্তা করে চুপসে গেলাম। শালার সোহেলের প্ল্যানে এ কী হতে যাচ্ছে!
আব্বা কল রিসিভ করল। আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি মাথা নিচু করলাম। এছাড়া কোনো উপায় নাই।
আব্বা বলল, ‘নে ধর, তোর জলিল চাচা নাকি তোরে কী বলবে। আমি মোবাইলটা নিয়ে কানে ধরলাম।’
জলিল চাচা মোলায়েম কণ্ঠে শুরু করলেন, ‘শোনো বাবা, আমার তো সহায় সম্পত্তির হিসাব নাই। একমাস কেন, গ্রামবাসীকে তিন মাস খাওয়াইলেও আমার কোনো সমস্যা নাই, বুঝলা? করোনার প্রভাব যতোদিন আছে, ততোদিন গ্রামবাসীর জন্য আমি আছি। তোমরা কালকে থেকেই কাজ শুরু করো। তবে খেয়াল রাখবা বাবারা, সামাজিক দূরত্ব যেন বজায় থাকে!’
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন