আমি আর সাকিব মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। রিক্সায় করে লালমাটিয়ার দিকে এগোচ্ছি আমরা। মেয়ে অনার্স কমপ্লিট করা, এখন মাস্টার্স করছে। আমার মত ইংরেজি সাহিত্যে। যেহেতু সে আমার সিনিয়র তাই বিষয়টা ভালোই লাগছে। পড়াশুনায় হেল্প নিতে পারবো। পাশে তাকিয়ে দেখলাম সাকিব কাঁদছে। আসলে আমি যাচ্ছি আমার স্বামীর জন্য দ্বিতীয় স্ত্রী দেখতে।
বেশ কিছুদিন ধরে সাকিব প্রায়ই বলতো, ‘তোমার জন্য একটা বোন আনলে কেমন হয়?’ আমি বললাম, ‘আমার মা এখন একটা পেটে ধরতে পারবে না আর আমিও পালতে পারবো না।‘ সাকিব বললো, ‘ছোঁয়া তুমি তোমার ফাইজলামি সাইডে রাখো। আমি আরেকটা বিয়ের কথা ভাবছি।‘ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ করতেই পারো।‘ এরপর বিভিন্ন সময়ে ও আমাকে এই কথা কম করে হলেও দশবার বলেছে। স্বামীর ইচ্ছা পূরণ করা স্ত্রীর দায়িত্ব; তাই আমাদের ছবিসহ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। আমাদের ছবি দিলাম কারণ সংসারে আমিও তো থাকবো। যাই হোক সেখান থেকে কল এসেছে।
পুরো রাস্তা সাকিব কাঁদছে। বাসা থেকে কান্না শুরু করেছে। ‘ছোঁয়া আমার ভুল হয়ে গিয়েছে,’ ‘আমি মজা করছিলাম ছোঁয়া,’ ‘আমি বিয়ে করবো না ছোঁয়া’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ওর কাঁধে মাথা দিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বললাম, ‘আরে বোকা ভয় পাচ্ছো কেন। আমি তো খুশি।‘
যথারীতি সে বাসায় চলে গেলাম। আমি আর সাকিব বসে আছি। সামনে মেয়ের ফ্যামিলি। উনারা জানিয়েছেন মেয়ে নাকি এতদিন বিয়ে করতে চায়নি কিন্তু আমাদের ছবি দেখেই ওর নাকি ভালো লেগেছে। আমি বললাম, ‘আমি কিন্তু বড় বউ এবং আমি অবশ্যই রিনা খানের মত না। আমি মোলায়েম শাবানা। আর এটা আমার জসিম। আপনার মেয়ে আদরেই থাকবে।‘ মেয়ের পরিবার খুশি হয়ে গেলো। একটু পর মেয়ে আসলো। মাশাল্লাহ বেশ মিষ্টি দেখতে। চা কী সুন্দর বানায়। চা খেয়ে সাকিবকে বললাম, ‘এখন থেকে সকালটা শুরু হবে এই চা দিয়ে।‘ সাকিবের চোখ লাল হয়ে আছে।
সাকিব আর আমার হবু বোনকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হলো। সাকিব আমাকে ছাড়া যাবে না। আমি গিয়ে এখন বসে আছি। সাকিব এখন কাঁদছে। হঠাৎ করে মেয়েটা বললো, ‘আপু আপনাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আপনার স্বামীটা অনেক অসহ্য। এমন করে কাঁদছে কেন? আপনি কীভাবে সংসার করেন?’
বোনটি ঠিকই বলেছে। কীভাবে সংসার করি আসলে। হঠাৎ করে মেয়েটা আমার হাত ধরে বললো, ‘আমি আপনার নাম ধরে ডাকি? আমার আপনার স্বামীকে নিয়ে মাথাব্যথা নাই। আপনাকে আমার দারূন লেগেছে। আমার কোনো সমস্যা নেই আপনার সাথে থাকতে। আমি শুধু আপনার সাথে থাকতে চাই। আপনার স্বামী আপনার থাকুক।‘
কথাগুলো শুনে আমার মাথাটা কেমন একটা ঝিমঝিম করে উঠলো।
বাসায় এসে আমি শুয়ে আছি। সাকিব দুইটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ করে এনেছে আর এক গ্লাস দুধ। প্রেশার বাড়লো না কমলো বুঝলাম না। মেয়েটার চেহারা চোখে ভাসছে। 'আমার বোধহয় জ্বর আসবে সাকিব।‘ সাকিবকে দেখলাম মিটমিট করে হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে হাহা করে হেসে দিলো। খোঁচা মেরে বললো, 'চাইলাম পানি আর পাইতে যাচ্ছিলাম শরবত।‘
রাগের জ্বালায় কথা বন্ধ করে শুয়ে আছি। ৫মিনিট পর হুট করে ফেইসবুকে নোটিফিকেশন আসার শব্দ বেজে উঠলো। গিয়ে দেখি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এসেছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি এটা লালমাটিয়ার সেই মেয়েটা। ফেইসবুক ডিঅ্যাক্টিভ করে বসে আছি। সাকিব আমার মাথায় পানি ঢালছে। ঢালতে ঢালতে বলছে, ‘বিজ্ঞপ্তিটা আসো একটু বদলায় দেই। ছবির নিচে লিখে দেই এই লোকটিকে ভালোবাসবে এমন কোনো নারী চাই আর অবশ্যই বড় বউকে বোনের দৃষ্টিতে দেখতে হবে!’
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন