মানুষের যেমন ইদ আছে, ভূতদেরও কিন্তু ইদ আছে। মানুষ মরেই তো ভূত হয়। তো তাদের ইদ থাকবে না কেন? মানুষের ইদ কেমন আমরা তো জানিই। ঈদে একদল বেতন বোনাস পাবে, ইদ শপিং করবে, আরেক দল কিছুই পাবে না, তারা রাস্তা অবারোধ করবে বেতন বোনাসের জন্য... না পাওয়া দলের মালিকদের পুলিশ খুঁজে পাবে না। তারা তখন সিঙ্গাপুরে বা মালয়েশিয়ায় ইদ শপিং করতে ব্যস্ত, ওখানেই যে তাদের সেকেন্ড হোম।
যা হোক তারপর যারা বেতন বোনাস পেয়েছে তারা টিকিট কেটে বাসে লঞ্চে ট্রেনে বাড়ি যাবে। পথে যথারীতি দুর্ঘটনায় কিছু মারা যাবে, ভূতের সংখ্যা বাড়বে।
ওদিকে টিভিতে থাকবে নানান বর্ণাঢ্য প্রোগ্রাম... সাতদিনের প্রোগ্রাম বলে সেই প্রোগ্রাম পারলে টেনে নিয়ে যাবে কোরবানী ইদ পর্যন্ত। এইতো গতানুগতিক মানুষের ইদ।
তাহলে ভূতদের ইদ কেমন? বরং দেখা যাক না...
একটা মাঠ, তার এক কোনায় একটা তেঁতুলগাছ, সবাই বলে তেঁতুল তলা। সেই তেঁতুল তলার তেঁতুল গাছে থাকে এগারোটা ভূত। আসলে বারো ভূতই ছিল। বারোভূতে লুটপাট করত বলে ওদের লিডার ভূতকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, এবং তাকে বেদম ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করা হচ্ছে। তাই তারা এখন এগারো ভূত। এতে অবশ্য তাদের সুবিধাই হয়েছে, ওরা এগারোজন এখন গভীর রাতে ঐ মাঠে জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলে (মাঠের আরেক কোনায় একটা জাম্বুরা গাছও আছে)।
প্রশ্ন আসতে পারে পুলিশ আবার ভূতকে গ্রেফতার করল কীভাবে! আসলে পুলিশ পারে না এমন কাজ নেই। যা হোক ওদিকে ইদ চলে এসেছে। এগারো ভুতের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে গেলো। ইদ উপলক্ষ্যে কী কেনা যায়। কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায়।
: যাই কেনা-কাটা করো না কেন সবাই কিন্তু একরকম কিনবে। তাহলে আমাদের দেখতে ভাল লাগবে। সবচেয়ে বয়ষ্ক ভূত তার মতামত দেয়।
সবাই চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিলো। হেলমেট কেনা হবে এগারোটা।
: হেলমেট কেন?
: আজকাল ভূত দেখে মানুষ ভয় পায় না বরং হেলমেট দেখলে ভয় পায়।
: হেলমেটের সঙ্গে কি মটর সাইকেলও কিনবো আমরা? সবচেয়ে যে বয়সে ছোট ভূত জানতে চাইল। সে তখন কল্পনায় মাথায় হেলমেট পরে হাইওয়ে ধরে ৮০ মাইল স্পিডে ছুটে চলেছে মটরসাইকেল চালিয়ে, ভূত হয়ে আকাশে আর কত উড়বে!
: না না শুধু হেলমেট না, টাকায় হলে কয়েকটা রামদা বা কিরিচও কেনা যেতে পারে। কিংবা যার যার সেলামি দিয়ে ঐসব কিনে নিও তোমরা।
এইরকম চিন্তা ভাবনা যখন চলছিলো, তখন হঠাৎ নিচে ধুপ ধাপ শব্দ। ব্যাপার কী এত রাতে কীসের শব্দ? এক ভূতকে পাঠানো হল নিচে শব্দ কিসের দেখে এসো তো! একটু বাদে সে দেখে এসে ভীত কণ্ঠে জানালো…
: সর্বনাশ হয়েছে।
: কী সর্বনাশ?
: নিচে ট্রাকে করে শত শত ইট আনা হয়েছে। নিচে নাকি পুলিশের থানা হবে। হায় হায় করে উঠল এগারো ভূত। এখন কী হবে? ঐ রাতেই এগারো ভূত পালাল। ওদের লিডারকে ধরেছে, এখন থানা থেকে না ওদের ধরে! বিশ মাইল দূরের আরেক মাঠের কোনায় এক শ্যাওড়া গাছে গিয়ে আশ্রয় নিল। গিয়ে দেখে এক খুনখুনে বুড়ো ভূত বসে আছে।
: এই তোরা কারা?
: আজ্ঞে আমরা এগারো ভূত, ইদে বেড়াতে এসেছি।
: তা ভাল, ইদের কেনাকাটা কিছু করেছিস?
: জি আজ্ঞে সবাই হেলমেট আর কিরিচ কিনবে বলে ঠিক করেছে
: কী-ক্কী?? তোরা হেলমেট বাহিনী??? মুহূর্তে খুনখুনে বুড়ো উধাও! ভূতদেরও তো জানের ভয় আছে, হোক না সে খুনখুনে বুড়ো ভূত।
ওদিকে দেশ প্রধানের নির্দেশে তেঁতুল তলা মাঠ থেকে থানা উঠে গেছে। শিশুদের মাঠ নাকি শিশুদেরই থাকবে। ইদ আসার আগেই ঐ মাঠে শিশুদের ইদ শুরু হয়ে গেছে। তাদের হৈ চৈ আনন্দ চিৎকারে কান পাতা দায়।
: আমরা বরং এখানেই নিরিবিলিতে ইদটা করি কী বলিস তোরা?
শ্যাওড়া গাছের এগারো ভূতদের বয়ষ্কজন বলে।
: হ্যাঁ, সেই ভালো। ওখানে মানুষের বাচ্চাদের বড্ড বেশী চেঁচামেচি হচ্ছে। ওদের ইদ মনে হয় এবার আগেই শুরু হয়ে গেছে।
এগারো ভূত সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন