করোনার চাপ এখন যেন অনেকটাই কম। সে কারণেই কিনা জানি না, হুড়মুড় করে মুড়ি-মুড়কির মতো চারদিকে বিয়ে হচ্ছে। কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হল… কারো দম ফেলার সময় নেই। এরকম এক বিয়ের দাওয়াতে আমাকেও যেতে হলো। গিয়ে দেখি অতিথিরা সব এসে পৌঁছায়নি, তবে চারিদিকে শুধু ছাতি ছাতি আর ছাতি। কালো ছাতি, সাদা ছাতি, ছাতিতে ছাতিময়। আমার তখন বিখ্যাত রম্যলেখক তারাপদ রায়ের অনবদ্য ছাতা গল্পটা মনে পড়লো (প্রয়াত এই কবি ও রম্য লেখকের সন্মানে এই লেখার নামও ছাতা)। সেই সঙ্গে ছাতা নিয়ে যত জোক সব যেন এক সঙ্গে আমার মস্তিষ্কের নিউট্রাল নেটওয়ার্কে রাশিয়ান মিসাইলের মত হামলা করতে শুরু করল। বরং ছাতা বিষয়ক একটা জোক শুরুতেই শেয়ার করি…
এক লোক শুধু ছাতা হারায়। যথারীতি আবারও ছাতা হারালো একদিন। এক ধর্মীয় আলোচনায় গিয়ে আলোচনা শুনতে শুনতে তার হঠাৎ মনে পড়লো, সে যথারীতি আজও ছাতা হারিয়েছে। সে মনে করার চেষ্টা করতে লাগল ছাতাটা ঠিক কোথায় হারিয়েছে। ওদিকে ধর্মীয় আলোচক তখন বলতে শুরু করেছে, ‘তোমরা নীতিভ্রষ্ট হইয়া কখনও পর-নারীর সাথে ব্যাভিচার করিও না...’ তখনই তার মনে পড়ল সে ছাতাটা ঠিক কোথায় ফেলে এসেছে!
যা হোক বিয়ের ছাতায় ফিরে আসি। এত ছাতা কেন? ছাতার কারণে বর-বউ কাউকেই দেখার উপায় নেই। হঠাৎ টের পেলাম এতো ছাতার রহস্য। বিয়ের ছবি তোলা হচ্ছে। বর-কনেকে ঘিরে এইসব ছোট-বড় ছাতা, কোনো কোনো ছাতা আবার নাসার মহাজাগতিক অ্যান্টেনার মতো। আমি বর-কনেকে দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। ছাতা আর ক্যামেরাম্যানের ভীড়ে তাদের দেখার কোনো বুদ্ধি নেই। অ্যারেঞ্জমেন্টও এমনভাবে করা হয়েছে, অতিথিরা সব বসে থাকবে আর বর কনেকে দেখবে বসে বসে, সে উপায় নেই। হঠাৎ শুনি ক্যামেরাম্যান বলছে,
: হ্যাঁ ভাইয়া (বর), আপনি আস্তে আস্তে এগিয়ে আসুন, আপু (কনে) আপনিও এগিয়ে আসুন... চাহনীটা চোখে চোখে রাখুন। ভাইয়া ডান হাতটা আপুর কাঁধে রাখুন, আপু আপনার ডান হাতটা ভাইয়ার কোমরে… হ্যাঁ গুড... আরেকটু ক্লোজ, আপু চাহনীটা এবার একটু নিচের দিকে... হাতের চুড়ি ঠিক করতে থাকুন, ভাইয়া আপনিও শার্টের কাফলিং ঠিক করুন... হ্যাঁ গুড এবার চোখে চোখে তাকান একটু হাসুন। কপালে কপাল ঠেকান... ক্লোজ আরো ক্লোজ আরও আরও...’ হঠাৎ খেয়াল করলাম বয়োজ্যেষ্ঠ্যরা মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ ক্যামেরাম্যানের ডিরেকশনে যেভাবে দু’জন প্রকাশ্যে ক্লোজ হচ্ছে, কখন ক্যামেরাম্যান আরও কী বলে বসে বলা মুশকিল!
আমি আশ্চর্য হয়ে আবিস্কার করলাম ক্যামেরাম্যান যা বলছে, তারা মানে বর-কনে তাই করছে, যেন তারা হিপনোটাইজড হয়ে গেছে। ফটোসেশনের ভঙ্গিগুলো সব অতিথির সামনে আদৌ রুচিকর হচ্ছে কিনা এসব নিয়ে ভাবছে না। আমার মস্তিষ্কের নিউট্রাল নেটওয়ার্কে আরো কিছু জোক এসে হাজির হল (এবার ইউক্রেনের পাল্টা মিসাইলের মত)। জোকটা অন্য প্রসঙ্গে, তারপরও কেউ যদি রিলেট করতে পারেন মন্দ কী? বিদেশী জোক। এক নব্বই বছরের থুত্থুরে বৃদ্ধা একা একা থাকেন। তাকে তার প্রতিবেশী জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি এত বয়সে একা একা থাকেন এটা কি ঠিক? ওল্ড হোমে থাকতে পারেন। আপনার ছেলে মেয়ে আছে না? তারা খোঁজ খবর নেয় না?’
: আছে দুই ছেলে তারা বিয়ে করেছে।
: তারা কেউ খোঁজ খবর করে না?
বৃদ্ধা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ‘আসলে প্রথম জীবনে আমি ভেবেছিলাম দু’টি মানবসন্তান প্রসব করেছি। এখন বুঝতে পারছি আমি আসলে দুটো ভেড়া প্রসব করেছিলাম।’
বিয়ের পর অনেক ছেলেই ভেড়া বনে যায়। এটা খারাপ না। এটা নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণের সুন্দর একটা কবিতা আছে
‘ঐ যে স্ত্রৈন যায়
যে আমাকে স্ত্রৈন বলে বলুক
আমি অগ্নিস্বাক্ষী রেখে তোমাকে বলেছি স্ত্রী..’
ভেড়া হয়ে যদি সুখী হওয়া যায় মন্দ কী! কিন্তু স্বামী-স্ত্রী একসাথে ক্যামেরাম্যানের কথায় ভেড়া বনে যাবে, এটা মেনে নেয়া আমার পক্ষে কঠিন।
ফটোগ্রাফি সুন্দর একটা প্রফেশন। ফটোগ্রাফি ব্যবহার করে বিখ্যাত সব গ্রাফিক নভেলও তৈরী হয়েছে উন্নত বিশ্বে। আর আমাদের দেশে ব্রাইডাল ফটোগ্রাফি হয়েছে অনেকটা কোরবানীর গরু কেনার মতো। কে কত দাম দিয়ে ফটোগ্রাফার এনেছে বিয়েতে সেটাই মূখ্য। এবং তারা কে কয়টা ছাতা এনেছে!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন