অংক করতে আমার ভালো লাগেনি কখনও। অংকের মধ্যেও সবচেয়ে বিদঘুটে ছিল ক্যালকুলাস৷ ইন্টেগ্রাল ক্যালকুলাস, ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস এসবের ইকুয়েশন সলভ করতে অনেক কষ্ট লাগতো৷
ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে দেখি সেখানেও ক্যালকুলাস। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সেমিস্টারে একের পর ম্যাথের কোর্স। থার্ড সেমিস্টারে ম্যাথের সর্বশেষ কোর্স ছিল ফুরিয়ার সিরিজ।
একেকটা অংক ৭-৮ পৃষ্ঠা লম্বা৷ ঐকিক নিয়মের মত করেই যেতে হয় লাইনের পর লাইন।
যে কোন পিরিওডিক বা পর্যায়ক্রমিক ফাংশনকে অনেকগুলো সাইন ফাংশনের যোগফল রূপে লেখা যায়, যেটি ফুরিয়ার সিরিজ। মূলত হিট বা তাপ সংক্রান্ত প্রব্লেম সলভের জন্য ফ্রেঞ্চ গণিতবিদ এই সিরিজ আবিষ্কার করেছিলেন।
হিট ইকুয়েশন, সিগনাল প্রসেসিং, অডিও কম্প্রেশন, ডিএনএ সিকুয়েন্স অ্যানালাইসিস, সমুদ্রের ঢেউ অ্যানালাইসিস, হেন অ্যানালাইসিস, তেন অ্যানালাইসিস – এগুলো করা সহজ হয়ে গেল। এর আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা হিমশিম খাচ্ছিলেন এটার সহজ সমাধান বের করতে।
পাতার পর পাতা অংক করতাম আর মনে হত প্যারিসের উপকণ্ঠের কোন এক কবরস্থান থেকে জোসেফ ফুরিয়ারের প্রেতাত্মা এসে আমাকে ঠাসঠাস করে চড় মেরে যাচ্ছে।
আজ পর্যন্ত কম্পিউটার সায়েন্সের সাথে এই কোর্সের কোনও বাস্তবিক সম্পর্ক আমি বের করতে পারিনি। হয়তো সকল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের ইনসাইট ডেভেলপমেন্ট করার জন্য এটা করা বাধ্যতামূলক।
যাই হোক, গতকাল ফুরিয়ার সিরিজ নিয়ে একটা জোক পেয়েছি।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সেকেন্ড ইয়ারের একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘তুই কি 'ফুরিয়ার' সিরিজটা বুঝতে পারছিস?’
অন্যজন জবাব দিল, ‘এটা আবার কোন সিরিজ? নেটফ্লিক্সে আছে? নাকি ডাউনলোড করে দেখা লাগবে?’
ছাত্রের কী দোষ বলেন? প্রতিদিন এত এত জটিল, সাইকোলজিক্যাল, মাইন্ডফাক গোছের ওয়েবসিরিজ হরদম মুক্তি পাচ্ছে নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, জি৫, ডিজনি হটস্টার, সনিলিভ, হইচই, চরকি-সহ সবগুলো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে!
একে তো অনলাইন ক্লাসের প্যারা, তার ওপর এগুলোর কোনটায় যে এই নতুন কুরিয়ার নাকি ফুরিয়ার সিরিজ বের হয়েছে, এতকিছু ট্র্যাক রাখাও তো মুশকিল।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন