ডিভোর্স উকিল মোহাম্মদ রাকিব হাসান। এ পর্যন্ত তিনি যে কয়টা ডিভোর্স এর কেস নিয়েছেন তার সবগুলোই সফলভাবে ডিভোর্স হয়েছে। এজন্য পরিচিত মহলে সবাইকে তাকে ব্রোকেন রাকিব বলেও ডাকে। আজ উনার ৫০তম ডিভোর্স কেস। হাফ সেঞ্চুরি করবার খুশিতে তিনি সবাইকে গতকাল অগ্রিম খাইয়েছেন। উনি বলেছেন, আমি মনে করি এই ৫০ আমার জীবন বদলে দেবে, নতুন মাইলফলকে পৌঁছাবো আমি। এত অল্প বয়সে আমিই বোধহয় দেশে প্রথম যে কিনা এই মাইলফলক স্পর্শ করবে।
পরদিন সকাল সকাল নিজের চেম্বারে উপস্থিত হয়ে গেলেন তিনি।
চেম্বারে পৌছাতে দেখলেন এক দম্পতি খিটমিটে চেহারা নিয়ে বসে আছে। তাদের দেখেই রাকিব হাসান মনে মনে হাসলেন। এই হাফবলি বলকে মিডঅনের উপর দিয়ে একদম বাউন্ডারির বাইরে পাঠেবন। রাকিব হাসান একটু গম্ভীরমুখে চেম্বারে বসলেন। এরপর জিজ্ঞেস করলেন,
: বলুন আপনাদের কীসে সমস্যা।
পাশের থেকে মহিলা খিটমিট করে জবাব দিলেন,
: বলেন কীসে সমস্যা নাই।
: জ্বি কীসে সমস্যা নাই বলুন।
: আমার সমস্যা নাই। সমস্যা আমার পাশে বসে থাকা লোকের। এর আগাগোড়াই সমস্যা। যাকে বিয়ে করে আমার জীবনের ৭বছর আমি ভাসিয়ে দিয়েছি।
পাশের থেকে লোকটা বললেন,
: আহা উনি ভাসিয়ে দিয়েছেন আর আমি বুঝি খুশিতে আকাশ দিয়ে উড়ে বেড়াতাম তাই না?
রাকিব হাসান চোখজোড়া ছোট ছোট করে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছেন আর মনে মনে বলছেন আহা এ তো দেখি পাক্কা ডিভোর্স। পারলে আজকেই কেস ডিসমিস। রাকিব হাসান উনাদের বললেন,
: কী শুরু করলেন? এটা ঝগড়া করার জায়গা নাকি? এখন বলুন আপনারা কি চান? ডিভোর্স তো তাই না?
দুইজন একসাথে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বোধক জবাব দিলেন। রাকিব হাসান ভেতরে ভেতরে বললেন, ‘এইতোহ আমার হাফ সেঞ্চুরি।‘ তখন হঠাৎ মহিলাটি বলে উঠলেন,
: স্যার, আমি ওকে তালাক দিবো এক শর্তে। ওকে আগে বলতে বলেন ও কোন মহিলার সাথে প্রেম করে।
রাকিব হাসান এবার বোকার মত তাকিয়ে আছেন। এ কেমন কথা। মহিলাটির স্বামী গর্জে উঠে বললেন,
: তোমার যার সাথে মনে হয় তার সাথে। আমি বললে তো তোমার হয় না। এরচেয়ে যা ভাবার ভাবো। আমি শান্তি চাই। এই তুমি তালাক দাও তোহ। দেনমোহর এর টাকা যা বাকি আছে সব আজকেই দিয়ে দিবো।
মহিলাটি এবার হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো।
: স্যার জানেন এই লোক কখনো আমাকে বলে নাই এই শাড়িতে তোমাকে সুন্দর লাগে, আজ তোমাকে সুন্দর লাগছে অথচ সেদিন দেখি কার না কার পোস্টে লিখেছে সুন্দর লাগছে ভাবী। এ মানা যায় বলুন?
রাকিব হাসানের খুব মায়া হলো। তখন তিনি বললেন,
: তাই তো, এটা তো খারাপ লাগা স্বাভাবিক। আপনি তো মশাই ভালোই খারাপ। আপনার তোহ দেনমোহরের সাথে জরিমানা দেওয়া উচিত।
লোকটা এবার রেগে গিয়ে বললেন,
: আমি তো শুধু লিখেছি সুন্দর লাগছে, আমি তোহ লিখিনি যে আজই ফাগুনি পুর্নিমা রাতে চল পলায়ে যাই,টিংটিং টিং টিং। আর ওকে সুন্দর বলি না মানে? ওকে যদি বলি সুন্দর লাগছে তখন বলে না তুমি মিথ্যা বলছো, দেখো আমাকে মোটা লাগছে, আইলাইনার ঠিক নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন আমি কি করবো?
রাকিব হাসান এবার লোকটির উদ্দেশ্যে বললেন,
: ঠিকই তো ভাই। এ তো ভারি অন্যায়। বউ আপনার তার আইলাইনার কেন আপনি দেখে দেবেন না? আপনাদের তো আজই ডিভোর্স হয়ে যাওয়া উচিত।
রাকিব হাসানে সম্মতি পেয়ে কিছুটা সাহস পেলো মহিলাটি। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললো,
: ও ঠিকই সবার ছবিতে লাভ রিয়্যাক্ট দেয় কিন্তু আমারটা বাদে। এমনকি আমি ফেইসবুকে নিকনেম দিয়েছি শাবাবের বউ অথচ ও কোথাও সুমাইয়ার বর লিখেনি। এ ধরনের বেইনসাফি স্বামীকে কী করা যায় বলুন।
রাকিব হাসান লোকটার দিকে তাকাতেই,
: স্যার আপনি ওকে জিজ্ঞেস করুন তো এটা কয়বার হয়েছে? একবার ভুলে লাইক পড়ে গিয়েছিল যা পরে লাভ বানিয়ে দেই আর এখন কি আমি নিব্বা আছি যে নিকনেম এভাবে দিতে হবে? বিয়ে করলাম এটায় কি কেউ বিশ্বাস করবে না যে আমি ওর স্বামী? এ কেমন বিচার ভাই?
রাকিব হাসান অসহায় দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছেন। লোকটা বললেন,
: ভাই তালাক দিতে হয় কীভাবে? তিন তালাক বললে হবে না?
এবার মহিলাটি হাউমাউ করে আবারো কান্না শুরু করে বললেন,
: তুমি না আমাকে ভালোবাসতে আর আজকে তালাক দিতে চাচ্ছো? ছি শাবাব।
লোকটা এবার ভূতের মত তাকিয়ে থেকে বললেন,
: তোহ তুমি এখানে মনে হচ্ছে আমার সাথে দ্বিতীয় বিবাহ করতে আসছো? তুমিও না ভালোবাসতে আমাকে?
এবার মহিলা কাঁদোকাঁদো হয়ে বললেন,
: স্যরি বাবু আমি আর এমন করবো না। আমি তোমাকে ছাড়া কীভাবে থাকি বলো।
রাকিব হাসান এবার শাবাব সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছেন। শাবাব সাহেব একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন,
: আজ আসি স্যার। দোয়া করবেন ভবিষ্যতে যেনো আসা না লাগে। ভালো থাকবেন স্যার। আল্লাহ হাফেজ।
রাকিব হাসান মুখ শক্ত করে বসে আছেন। এসিস্ট্যান্ট কে ডেকে বললেন,
: ওকালতি থেকে অবসর নিলে কেমন হয়?
: কিন্তু আপনার হাফ সেঞ্চুরি?
: ইচ্ছাটা মরে গিয়েছে। ভাবছি জগৎ সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে যাবো।
ঠিক তখনই বাসা থেকে ফোন এলো,
: এই তুমি এখনো ট্যাগ এপ্রুভ করো নাই কেনো? আমি সবসময় দেখি তুমি সহজে এটা করতে চাও না। কেনো বউ ট্যাগ দিলে খুব সমস্যা হয় তাই না? আর আমার কমেন্টের রিপ্লাই পর্যন্ত করো নাই। আমি এখন পুরোনো হয়ে গিয়েছি তাই না?
ফোনটা রেখে রাকিব হাসান এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মনে মনে তিনি বললেন,
: ৫০তম সেঞ্চুরি কি এবার নিজেকে দিয়েই করে দেখবো?
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন