হন্তদন্ত হয়ে মন্ত্রীকে ডাকলেন রাজা। বললেন, ‘এসব কী খবর শুনছি, মন্ত্রী? আমার দেশের জনগণের ঘরবাড়ি নাকি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে!’
—জ্বি জাঁহাপনা, ঠিকই শুনেছেন। নির্বিকার উত্তর দেয় মন্ত্রী।
শুনে রাজা আর সইতে পারেন না। ভেজা কণ্ঠে বলে ওঠেন, ‘এ কী বলছ তুমি? আমার সৈন্যদল কোথায়! ওরা গুলি করছে না কেন?’
মন্ত্রী বলল, ‘কাকে গুলি করবে, মহারাজ?’
— কেন, যারা ঘরবাড়ি পোড়াচ্ছে, তাদের।
ইতস্তত করে মন্ত্রী বলল, ‘ইয়ে মানে… মহারাজ… তারা আপনারাই দলের লোক!’
শুনে রাজামশাই একটু চিন্তিত হলেন। বললেন, ‘আমার দলের লোক! ওহ… কিন্তু… কিন্তু এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না, লোকে কী বলবে? ছি ছি করবে! একটা বিহিত তো করতেই হবে!’
— কী করব, মহারাজ? মন্ত্রীর সরল প্রশ্ন।
— এক কাজ করো… বিরোধী দলের কাউকে ফাঁসিয়ে দাও… মামলা দিয়ে দাও কয়েকটা!
বাচ্চাদের কথা শুনে বড়রা যেভাবে হাসে, সেভাবে হাসল মন্ত্রীও। বলল, ‘ওসব পুরোনো স্ট্র্যাটেজি এখন আর কাজ করবে না, জাঁহাপনা। কারণ দেশে কোনো বিরোধী দলই নেই। যা ছিল, সব জেলে পুরে দিয়েছি, নইলে গুম করে দিয়েছি!’
— তাহলে… তাহলে কোনো বুদ্ধিজীবী? অথবা… অথবা…সাধারণ মানুষের মাঝ থেকেই না হয় কটাকে ধরে নিয়ে এসো!
—মানুষ? মানুষ কোথায় পাব, মহারাজ! অনেক দিন ধরেই লোকে গালি দিয়ে বলত, ‘তুই মানুষ, নাকি রাজার লোক!’ এখন সেটাও বলে না… আর বুদ্ধিজীবী? বুদ্ধি দেখলেই ‘জবান’ কিংবা ‘জীবন’ নিয়ে নিয়েছি, ওসব বুদ্ধিজীবী-টিবি এখন আর পাবেন না!
মন্ত্রীর কথা শুনে এবার রেগে গেলেন রাজা! হুংকার দিয়ে বললেন, ‘আমি অতশত বুঝি না! কিছু একটা করতেই হবে। আমার দেশের জনগণ পুড়ে মরছে, এই খবর আমি শুনতে চাই না, শুনতে চাই না, শুনতে চাই না!’
মন্ত্রীর মুখে এবার হাসি ফুটল। বলল, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, এ রকম খবর আপনি আর শুনবেন না!’
করিতকর্মা মন্ত্রী তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নিলেন। পরদিনও আগুনে পুড়ল অনেক ঘর, কিন্তু সে খবর এলো না কোনো পত্রিকায়, দেখা বা শোনা গেল না টিভি বা রেডিওতে।
কোথাও কোনো সহিংসতার খবর দেখতে না পেয়ে রাজা হাসিমুখে ঘুমাতে গেলেন। জনদরদী রাজা তিনি, জনগণের কষ্টের খবর একেবারেই সহ্য করতে পারেন না।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন