সিটি কর্পোরেশনের এক বড় কর্তার অফিসে গেছি। গিয়ে দেখি তার টেবিলে দুটো মশা মারার ব্যাট রাখা।
এমন অফ-সাইডের এত বাইরের বল পেলে খোঁচা মারার সুযোগ আমি মিস করি না।
হালকা একটা খোঁচা দিয়ে বললাম, 'বাহ্, এগুলো কি ব্যাট কোম্পানি থেকে সৌজন্য কপি হিসেবে উপহার পেয়েছেন নাকি?'
খোঁচাটা তিনি হজম করে বললেন, 'বলেন বলেন। এখন তো আপনাদের সময়, বলবেনই তো।'
আমি বললাম, 'না মানে, আপনাদের জন্যই তো মশা মারার ব্যাট কোম্পানিগুলোর ব্যবসা এখন তুঙ্গে। দুই একটা সৌজন্য কপি তো বানতাই হে। আর ইয়ে... মানে... এরোসল আর কয়েল কোম্পানিরা কিছু পাঠায়নি? তাদেরও তো পাঠানো উচিত।'
উনি গম্ভীর হয়ে বললেন, 'দুইটা ব্যাট ৯০০ টাকা, ছেপ দিয়ে গুইনা কিনছি।'
আমিও গম্ভীর হয়ে বললাম, 'স্যরি।'
এরপর ভদ্রলোক আমাকে আশার বাণী শোনালেন। বললেন, 'আর কয়েকদিন ধৈর্য্য ধরেন ভাই। অনেক টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে- সব ছিটানো হলেই মশা কমে যাবে।'
আমি বললাম, 'ভাই আপনাদের এই ওষুধ ছিটিয়ে মশা মারার সনাতন টেকনিকটাই আমার একদম পছন্দ না। আজকাল ওষুধে সব ভেজাল- টাকাগুলো জলে যায়। আমার কাছে এর চেয়ে ভালো প্ল্যান আছে। "ডাইরেক্ট একশন" প্ল্যান।'
উনি বললেন, 'সেটা কী রকম?'
আমি বললাম, আমার কাছে তথ্য আছে, ২০১৯ সালে মশা মারার জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনে ৫০ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়েছিলো- যার পুরোটাই জলে গেছে- কারণ ওষুধগুলো ছিল ভেজাল। এতো টাকার ওষুধ না কিনে, আপনারা ইঁদুর নিধন কর্মসূচির মতো "মশক নিধন কর্মসূচি" ঘোষণা করলেই তো পারেন।'
তিনি বললেন, 'সেটা কেমন?'
আমি বললাম, 'আপনারা মৃত ইঁদুরের মতো মৃত মশারও একটা দাম ধরে দেন। মনে করুন, সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা দিলো, প্রতিটি মশা মারার জন্য ৫০ পয়সা করে দেওয়া হবে। তাহলে ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ১০০ কোটি মশা মারা সম্ভব। আমার তো মনে হয় না, এই মুহূর্তে এত মশা ঢাকা শহরে আছে। দেখবেন, ৭ দিনেই ঢাকা শহরের সব মশা নির্মূল হয়ে গেছে। মশাও নির্মূল হলো, কিছু কর্মসংস্থানও হলো। ফ্রি-ল্যান্সার মশক নিধনকারী নামে একটা মহান পেশারও উদ্ভব হয়ে যেতো। কাজেই আর দেরি না করে, মশক নিধন প্রজেক্টটা আপনারা প্রাইভেট সেক্টরের হাতে ছেড়ে দিন তো।'
উনি কিছুক্ষণ ধরে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমার মনে হলো, আমার আইডিয়া হয়তো তার পছন্দ হয়েছে। নিজের চিকন বুদ্ধির উপর নিজেই আরেকবার মুগ্ধ হতে যাচ্ছি, এমন সময় আমাকে অবাক করে তিনি বললেন, 'আপনার আইডিয়া ভালোই, কিন্তু একটা সমস্যা আছে।'
আমি বললাম, 'কী সমস্যা?'
উনি বললেন, 'বাঙালিরে তো চেনেন না... আমরা এই কর্মসূচি হাতে নিলে লোকজন তখন ঘরে ঘরে মশার খামার বানাবে। তারপর সেই খামারের উৎপাদিত হুলবিহীন ফার্মের মশা এনে আমাদের কাছে বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাবে। আর খাল বিল ড্রেনের বজ্জাত দেশি মশা বহাল তবিয়তে আমাদের কামড়াতেই থাকবে।'
আসলেই তো! এভাবে তো ভাবিনি।
নিজের চিকন বুদ্ধির উপর আমার যে অগাধ আস্থাটা ছিলো, ভদ্রলোক সেটা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিলেন।
বুঝলাম, সরকারের দায়িত্বশীল পদে কাজ করতে হলে চিকনের উপরেও মিহি-চিকন বুদ্ধি থাকা লাগে, আর লাগে বাঙালিরে ভালো করে চেনা।
হ্যাটস অফ।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন