শীতের রাত। গাড়ির ড্যাশবোর্ডের দিকে তাকিয়ে আব্দুল মালেক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ঘড়িতে সাড়ে ৩টা বাজে। দুর, কোনো মানে হয় এই জীবনের! কোথায় এই সময় তার কাথা মুড়ি দিয়ে স্ত্রীকে জড়িয়ে শুয়ে থাকার কথা! এদিকে মেয়েটা হয়েছে একদম তার ন্যাওটা। তাকে ছাড়া খেতেই চায় না, আর তারই কিনা প্রতিরাতে বাসায় আসতে দেরি হয়। আর মেয়েটাও অভিমান করে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
মহাপরিচালক স্যার বেশ দিলদরিয়া মানুষ। ফূর্তিবাজও। একটা পার্টিতে দাওয়াত ছিলো আজ স্যারের। এসবে যা হয় তাই হয়েছে। স্যারের পিএস কোনোরকমে ধরে উনাকে গাড়িতে উঠিয়েছেন। এরপর স্যারকে বাসায় নামিয়ে এখন গাড়ি রাখতে আব্দুল মালেক ছুটছেন অধিদপ্তরের গ্যারাজে। সেখান গাড়ি রেখে একটা সিএনজি বা রিকশা করে বাসায় যেতে যেতে সাড়ে ৪টা বেজে যাবে। এরপর তিনি ঘুমাবেনই বা কখন আর উঠবেনই বা কখন আর আসবেনই বা কখন আবার অফিসে। আর ভালো লাগে না!
এসব ভাবতে ভাবতেই একটু ঝিমুনি মতো এসেছিলো আব্দুল মালেকের। গাড়িটা আচমকা একটা ঝাঁকি খেয়ে উঠলো। টায়ার গেলো নাকি? ঘ্যাচ করে ব্রেক কষে গাড়ি থেকে নামলেন তিনি। ঝাঁকির কারনে গাড়ির সামনের দুই চাকা পিচের রাস্তা থেকে নেমে গেছে। না টায়ার তো ঠিক আছে, রাস্তাও ঠিক, কোথাও গর্তটর্ত নেই। তাহলে হলোটা কী?
ইন্ডিকেটরের আলোয় ঝিকমিক করে উঠলো জিনিসটা। পদার্থটা কী বুঝতে একটু উবু হয়ে বসলেন আব্দুল মালেক। দেখলেন একটা প্রদীপ। বেশ পুরোনো, তবে টায়ারের ধাক্কায় কিছু অংশের ময়লা উঠে যাওয়ায় তার ঝকমকে ভাবটা বেরিয়ে পড়েছে। জ্বিন, পরীতে ব্যাপক বিশ্বাস আব্দুল মালেকের। এটা কি তবে সেই প্রদীপ?
একটু দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে আব্দুল মালেক আলতো করে ঘষে দিলেন প্রদীপে। দেখতে না দেখতেই বেরিয়ে এলো সেই দৈত্য। বলল, কী চাই?
: আপনি কি আসলেই আলাদীনের প্রদীপের দৈত্য?
: আরে বাবা দেখতেই তো পাচ্ছিস, এখন কি সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে নাকি? কী চাইবি দ্রুত চা। দিয়ে ঘুমাতে যাই আবার।
: ঢাকার গুলশানে ২৪টা ফ্ল্যাট চাই।
: আরে বোকা, ঢাকার এমন প্রাইম লোকেশনে তুই হঠাৎ এতগুলো ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে গেলে দুদক তোকে ধরবে না? সামলাতে পারবি?
: ফ্ল্যাট তো আমার লাগবেই, তাইলে কীভাবে দিবেন?
: আচ্ছা তোকে তাইলে একটু মিলায়া-ঝিলায়া দেই যাতে কেউ সন্দেহ না করে। কিছু দেই অখ্যাত এলাকায় আর কিছু দেই মোটামুটি পরিচিত এলাকায়।
: আচ্ছা।
: যা তোকে দক্ষিণ কামারপাড়ায় কিছু দিলাম আর হাতিরপুলে কিছু দিলাম।
: এইবার একটা পাজেরো গাড়ি চাই।
: হঠাৎ তোর একটা পাজেরো গাড়ি হয়ে গেলে লোকে তোকে সন্দেহ করবে না?
: তাইলে?
: একটু অন্যভাবে দেই দাড়া। গাড়ি তো তোর নিজের কাজে চালাতে পারলেই হলো! যা তোর স্যারের পাজেরোটা তোকে দিলাম। লোকে জানবে এইটা তোর স্যারের, কিন্তু নিজের কাজে চালাইতে পারবি। বোনাস হিসেবে আরও দুইটা গাড়ি দিলাম, সেগুলোও নিজের মনে করে চালা।
: এইবার একশটা স্বর্ণের ডিম পাড়া হাঁস চাই।
: তুই তো খালি ঝামেলা করিস রে। এই দুনিয়ায় স্বর্ণের ডিম পাড়া হাস থাকলে লোকে তোকে খেয়ে ফেলবে। যা তোকে একটা ডেইরি ফার্ম বানিয়ে দিচ্ছি। ১৫ কাঠা জমির উপর ৫০টা গরু দিচ্ছি। এগুলোই তোর সোনার ডিম পাড়া হাস।
তিনটা ইচ্ছে হয়ে যেতেই শূন্যে মিলিয়ে গেল দৈত্য।
২.
পাঁচ বছর পরের ঘটনা। মিন্টো রোডের ওই একই রাস্তা দিয়ে এক গভীর রাতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ড্রাইভার আব্দুল কুদ্দুস। একইভাবে গাড়ি থেমে গেল কিছু একটার ধাক্কায়। গাড়ি থামলো, প্রদীপে ঘষা দিতেই দৈত্য এলো। গাড়ি-বাড়ি-টাকা পয়সার দুইটা ইচ্ছাও পূরণ করলো আব্দুল কুদ্দুসের। দৈত্য তার তৃতীয় ইচ্ছা কী জানতে চাইতেই আব্দুল কুদ্দুস একটু ভেবে বলে উঠলো, ওই স্বাস্থ্যের ড্রাইভার মালেইক্কারে পথের ফকির বানান আর জেলে ঢুকান, বদমাইশটা আমার কাছ থেইকা ট্যাকা খাইছে কিন্তু আমার শালারে চাকরিটা দেয় নাই, দিছে সব নিজের লোকজনরে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন