বছরের কোন নির্দিষ্ট সময়কে যদি বেছে নিতে বলা হয়, আমি চোখ বন্ধ করে নেবো এই সময়টা। প্রতিটি বাঙালিই এই সময়ে জামাই আদরে সিক্ত হয়ে থাকেন!
ধরুন কোন বাসায় আপনি বেলা এগারোটায় হাজির হয়েছেন। ধরে নিন ‘নিউ-নরমাল’ মেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গিয়েছেন। সহজ হিসাব। শরীর-স্বাস্থ্য, পারিবারিক কুশল, রাজনীতির বেহাল অবস্থা (এই বিষয়টা আমাদের দেশে সবসময়ই বেহাল, তাই আলোচনার বিষয়বস্তু সবসময়ই এক) ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে করতে সাড়ে এগারোতায় আপনার সামনে ঠকাস করে রাখা হবে চা এক কাপ। সাথে হয়তো হাফপ্লেটে করে বিস্কিট, অথবা বাটিতে করে নুডলস। বারোটা বাজলে কোন কোন বাড়িতে গৃহকর্তা ঘন ঘন ঘড়িতে তাকানো শুরু করেন! ইঙ্গিত স্পষ্ট- লাঞ্চের টাইম হয়েছে বাপু, নিজের বাড়ি গিয়ে আদুল গায়ে কব্জি ডুবিয়ে আহার করো গিয়ে।
কিন্তু এখন? বারোটা পার হয়ে সাড়ে বারোটা বাজতে চললো, চা-টায়ের নামগন্ধ নেই! সাড়ে বারোটায় আপনিই হয়তো গা মুচড়া-মুচড়ি করে বলবেন- যাই তাহলে, বাসায় দু'টা মুখে দেই গিয়ে। অমনি গৃহকর্তা হাঁ হাঁ করে উঠবেন- যাবেন মানে? দুপুরের খাবার মুখে না দিয়ে আবার যাওয়া-যাওয়ি কীসের?
আপনিও আশ্চর্য না হয়ে বসে পড়বেন। কে না জানে, বাড়িতে বাড়িতে এক্ষণ ফ্রিজ খালিকরণ প্রকল্প চলছে। পাঁচদিন পরে ঈদ, দেশের আনাচে-কানাচের ডাইনিং টেবিলে এখন ঈদের আনন্দ।
কোন বাসায় আপনার সামনে হাজির হবে চিংড়ির মালাইকারী। অতো বড় সাইজের চিংড়ি আপনি বোধহয় কেবল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতেই সাঁতার কাটতে দেখেছেন! সাথে খাশির কলিজা ভূনা।
কোন বাসায় হয়তো মনভরে ছোটমাছ আলু দিয়ে পাতলা ঝোল সহ খেলেন। তারপর হাজির হবে গরুর মাংসের ভর্তা। সর্ষের তেল-পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে মাখানো। ময়মনসিংহ স্টাইল!
কোন বাসায় আপনার পাতে হয়তো তুলে দেয়া হলো আস্ত চিতল মাছের পেটি। সাথে দেশি মুরগি ছোট আলুর বিরান।
রাতেই হয়তো বাসায় ফিরে পাতে পাবেন আস্ত রুই মাছের মুড়োটা! সাথে তেঁতুলের ক্বাথে ভাজা টক মাংস!
কম খেলেই বাড়িভেদে মা-খালা-চাচী-ফুফু-ভাবীদের দীর্ঘশ্বাস! খাবার শেষে ঢকঢক করে খেতে হবে গ্লাসভর্তি দুধ। কাল-পরশু গরু কিনতে যেতে হবে। দুধ না খেলে তাগদ হবে কিভাবে?
ঐযে বললাম, জামাই আদর। ফ্রিজের পেট খালি করে আপনার পেট ভর্তি করার যে অসাধারণ রীতি, তা না হয় বজায় থাকুক অনন্তকাল।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন