আড়াই বছর আগে আমার যখন প্রমোশন হলো, আমি আনন্দে গদগদ হয়ে গেলাম।
আনন্দের কারণ দুইটা! আমি সিনিয়র টিম লিডার থেকে ডিরেক্টর হলাম, আর এক লাফে আমার বেশ কিছু বেতন বেড়ে গেল। কাজ করে মুখে যতই আরাম আরাম করি না কেন, দিনশেষে টাকা পয়সার দরকার অবশ্যই আছে। টাকা পয়সা একটু বেশি পেলে কারোরই খারাপ লাগে না।
কিন্তু প্রথম মাসে বেতন পাওয়ার পর আমার মুখের হাসি চুপসে গেল। দেখা গেল, আমার বেতন যে পরিমাণে বেড়েছে, ট্যাক্সের পরিমাণও বেড়েছে প্রায় সমান হারে। ফলে আমার বেতন থেকে ট্যাক্স কেটে নেয়ার পর আমি যা হাতে পেলাম, তাতে প্রমোশন কিংবা বেতন; কোনোটাতেই কিছু যায় আসে না। খেলা সমানে সমান।
আমি মহা ধৈর্যশীল প্রাণী। মনে সাহস রাখলাম, আর মুখে বললাম, দেখি না কী হয়!
গত দুই বছর আমি আরো দুইটা ইনক্রিমেন্ট পেলাম। এই দুই ইনক্রিমেন্ট যোগ করলে আমার মোট বেতন কিছুটা বাড়ার কথা!
কিন্তু এই মাসের বেতনের স্লিপ পাওয়ার পর আমি যারপরনাই ব্যথিত। আমার নাওয়া-খাওয়া চলে গেছে। খাওয়ার রুচি নাই। মন মেজাজ খারাপ। সবকিছু উদাস উদাস লাগছে! চারদিন ধরে শেভ করি না। মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি!
কারণ, এই বছরের ইনক্রিমেন্ট যোগ হওয়ার পর আমার বেতন আগের চেয়ে ৫০০০ টাকা কমে গেছে। মূলত আমি ট্যাক্সের নতুন সিলিংয়ে পড়ে গেছি, ফলে আমার ট্যাক্সের পরিমাণ বেড়ে গেছে। যা নেট বেতনে বড় রকমের ধাক্কা দিয়েছে!
মাসে একবার ট্যাক্স দিলে তো কোন কথা ছিল না। আমি সারা মাস যেখানে যাই, ভ্যাট দিই, ট্যাক্স দিই। বাজার করতে গেলে, ডাক্তারখানা, বিদ্যুতের বিল, বাড়িভাড়া, রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে আমি ট্যাক্স দিই। এছাড়া অদৃশ্য ভ্যাটের কথা নাই বা বললাম।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমি বেতন পাই একবার। সেই বেতনের উপর আমি ট্যাক্স কিংবা ভ্যাট দিই অসংখ্যবার। মানে, যতবার পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করি, ততবার...
এর মধ্যে দেখলাম, সরকার এস আলম নামের একটা গ্রুপকে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার ট্যাক্স থেকে মাফ করে দিয়েছে।
এস আলমের মতো এমন গ্রুপ অনেক আছে; যাদের গাড়ি, কুরিয়ার সার্ভিস, টেলিভিশন চ্যানেল- এরকম আরো অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। যারা লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে, কিন্তু ট্যাক্স-ভ্যাট দেয় না। চুরি চামারি করে। সেটা ধরা পড়লে আবার মাফও পেয়ে যায়।
ধরেন, আপনার মাসিক বেতন ৩০,০০০ টাকা। আপনি কি জানেন যে, এই ৩১০০ কোটি টাকা আয় করতে আপনার কতদিন লাগবে? হিসাবটা আমি করে দিচ্ছি, প্রায় ৮৮ হাজার ৫৫ বছর!
আচ্ছা, কী সেই ম্যাজিক যেটা দিয়ে এতো টাকার ট্যাক্স থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? কোন সে আইনজীবী? যিনি এই ম্যাজিক্যাল কাজটা করে দিলেন?
সেই বিশিষ্ট আইনজীবীর সাথে আমার দেখা করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ভীষণ জরুরি। কারণ এখানে সবকিছু ম্যাজিক দিয়া চলে, লজিকের ভাত নাই।
লেখা: রাজু নজরুল
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন