ভেজা আঙ্গুলে টাচস্ক্রিন মোবাইল কাজ করতে চায় না।
বিশ্রী একটা সমস্যা। ৪/৫ বার চেষ্টা করেও ইনকামিং কলটা রিসিভ করা যাচ্ছে না। ট্যা ট্যা করে মোবাইলটা চিৎকার করে যাচ্ছে। ইচ্ছা হচ্ছে আছাড় মেরে মোবাইল ভেঙ্গে ফেলতে।
মুকিত চরম বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে ভেজা আঙ্গুল বাম থেকে ডানে ঘসে কল রিসিভের ব্যর্থ চেষ্টা করে, তারপর পাওয়ার বাটন চেপে কলটা সাইলেন্ট করে ফেলে। মুকিত দিশেহারা হয়ে ভাবার চেষ্টা করে, এখন তার কি করা উচিত। টিপটিপ বৃষ্টিতে এভাবে দাঁড়ায়ে না থেকে কোথাও আশ্রয় নেয়া যায়, সেই চিন্তাটাও খেলে না মুকিতের মাথায়। চেপে রাখা বিরক্তিটা আর ভিতরে দমিয়ে রাখতে না পেরে একসময় মুকিত বলে বসে- ধুর বা*!
সাসেক্সের উচ্চারণে অফিসে গড়গড়ায়ে ইংরেজি বলা চৌকষ কর্মকর্তা মুকিতের মুখে এমন সাদামাটা গালিটা খুব বেমানান শোনায়। হঠাৎ বিপদ, মানুষের যত্নে গড়া পার্সোনালিটি ভেঙ্গে দেয়, ব্রেইন যখন বড় রকম অপ্রত্যাশিত ধাক্কা খায় তখন ব্রেইনের কমান্ড ফাংশানে ঝামেলা হয়। ব্রেইন তখন সুশীল অনুশাসনের নিয়ন্ত্রণ হারায় সম্ভবত। মুকিত এখন আছে তেমন এক বিপদে।
ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং করতে মুকিত এসেছিল লিংক রোড। বিকাল ৪টায় মিটিং, মুকিত সাড়ে তিনটায় পৌছে গাড়ি পার্ক করার জায়গা খুঁজে বের করেছে। ঢাকায় অফিস পাড়াগুলায় গাড়ি পার্ক করার জায়গা খুঁজে পাওয়া একটা কঠিন পরীক্ষা। মুকিতের জন্য এটা আরো বড় চ্যালেঞ্জ, চার মাস আগে কেনা গাড়ি। নতুন একটা গাড়ি তো আর যেনতেন জায়গায় পার্ক করে চলে আসা যায় না। মুকিতের ড্রাইভার ইলিয়াস দুইদিন ধরে ছুটিতে। চাঁদপুরে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ইলিয়াস ব্যস্ত। বাধ্য হয়ে মুকিত নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে মুশকিলে পড়ে গেছে।
যাই হোক, বেশ অনেকক্ষণ আগ-পিছ করে মুকিত একটা ছায়া ছায়া জায়গা খুঁজে পায়। একটা বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে পলিথিনের ছাপড়া টাঙ্গানো ফুটপাথে। তার সামনেই জায়গাটা পেয়ে গাড়ি রেখে সন্তুষ্ট হয়েছিল মুকিত। বৈশাখের যে তীব্র রোদ, একটু ছায়ায় পার্ক না করলে গাড়ির ভেতরটা তেতে আগুন হয়ে থাকবে।
প্রোপোজাল এক্সেপ্ট করার পর রেট কার্ড নিয়ে ত্যানা প্যাচানো এই দেশের ক্লায়েন্টের স্বভাব। এমন ছ্যাচড়া একটা টোনে ইতং বিতং করে কথা টেনে লম্বা করে যে, মুকিতের ধৈর্যের সুতা প্রায় ছিঁড়ে যাবার উপক্রম হয়। তাও হাসি হাসি মুখে অপ্রয়োজনীয় সেই বাড়তি সময়টুকুকে মিটিং-এর অংশ হিসেবে ভেবে বসে থাকতে হয়।
সাড়ে পাঁচটায়ই মিটিং শেষ হবার কথা। কিন্তু রিয়ায়েন্স এক্সেসরিজের প্রোডাকশান ম্যানেজার, খসরু নামের খবিশ লোকটা মুকিতকে আটকে রাখে আরো আধা ঘন্টা। মার্কেট সম্পর্কে এক আনা ধারণা থাকলেও সেই খবিশের জানার কথা, মুকিতের কোম্পানি অলমোস্ট মার্জিন লাইনে রেট কোট করেছে। খবিশটা ৪টা বিস্কুট খেতে খেতে খ্যা খ্যা করে হেসে হেসে নানা রকম সস্তা ম্যাড়ম্যাড়া রসিকতা করে এমন একটা ভাব করার চেষ্টা করছলো যেন এতেই সে মুকিতের সাথে সহজ একটা সম্পর্কে এসে রেট কমানোর কথা তুলবে! ছাগল কোথাকার! সেই ছাগলের জন্যই আজকে বৃষ্টির মধ্যে এই বিপদে দাঁড়িয়ে আছে মুকিত। ইচ্ছা হচ্ছে আবার ফিরে গিয়ে খবিশটার পেটে পাড়া দিয়ে টান দিয়ে জিহ্বা ছিঁড়ে ফেলতে।
মিটিং শেষ করে মুকিত যখন বের হতে যাবে তখন গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে মুকিত টের পায়, বাইরে বেদম ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র বাতাসে বৃষ্টির ঝাপটা কাচের দেয়ালে গুম গুম করে হুংকার দিয়ে আছড়ে পড়ছে। ওরেব্বাবা! এমন তীব্র বাতাস নিয়ে ঝড় এই বছর এই প্রথম। বৃষ্টির ফোঁটাও বড় বড়। মুকিতের সামান্য শংকা হয়, রাস্তায় পানি জমে না যায় আবার। তাহলে আবার আরেক ঝামেলা! এমনিতেই এই বেলা এমন ঝড় মানেই রাস্তায় বাড়তি একটা জ্যাম লেগে যাবে। ঘরে ফিরতে হলে বাড়তি ঘন্টাখানেকের জ্যাম ঠেলতে হবে। আর যদি পানি জমে তাহলে তো অবস্থা আরো খারাপ। পানি জমা রাস্তার ঢাকা শহর ভয়ংকর এক বিভীষিকা!
লবিতে লোকজন অনেক। তাও কোনার দিকে একটা সোফা খালি পেয়ে মুকিত বসে পড়েছিল। বৃষ্টি একটু না কমলে তো বের হবার উপায় নাই, বসে বসে ফেসবুক ঘাঁটছিল। নীল রঙের পলিথিন দিয়ে দেশি স্টাইলের রেইনকোট বানানো ভিজা চুপচুপা এক যুবক রিকশাওয়ালা কি যেন বলছিল। আগ্রহ করে তা শুনছিল বিল্ডিং এর গার্ড আর গেটের সিকিউরিটির লোকজন। রিকশাওয়ালার সেই কথার খন্ড খন্ড কানে এসেছিল তার-
এক্কেরে গোড়াত্তে ভাইঙ্গা গ্যাসেগা
হ লীল (নীল) গাড়ির উপ্রে
মানুষ আছেনি কইতারিনা
হরাইতে ফারতো না
আশংকা আর কৌতুহল মেশানো কিছু একটা তাগিদ মুকিতকে সোফা থেকে তুলে আনে। গেটের সামনে জটলা করা মানুষগুলার কাছে এসে সে প্রথমে কিছুক্ষণ শোনে। তারপর প্রশ্ন করে জানতে পারে- রাস্তার পাশের বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছ উপড়ে পড়েছে। সেটার নিচে চাপা পড়েছে একটা নীল গাড়ি।
রিকশাওয়ালা যেদিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে, সেদিকেই কৃষ্ণচুড়ার ছায়ায় পার্ক করেছিল সে তার নতুন কেনা নীল এলিয়ন।
বৃষ্টির দাপট, মুকিতের উৎকন্ঠার কাছে হেরে যায়।
গ্রাউন্ড ফ্লোরের মানুষগুলা দেখে, ফিটফাট পোশাক পরা এক ভদ্রলোক হঠাত পাগলা হয়ে ছাতা টাতা ছাড়াই বৃষ্টির ভেতর দৌড়ে বাহির হয়ে গেল।
গাড়ির কাছে আসতে হয় না। দুর থেকেই সে দেখে, আশংকা সত্য। আস্ত কৃষ্ণচুড়া গাছটাই ভেঙ্গে রাস্তার দিকে এসে পড়েছে। লেপ্টে থাকা সেই গাছের পাতার ঝোপের ফাকা ফুকা দিয়ে তার গাড়ির সামনের দিকটা দেখা যাচ্ছে। আরো কাছে গিয়ে মুকিত দেখে কৃষ্ণচুড়ার একটা ডাল ভেঙ্গে গাড়ির উইন্ডশীল্ড ভেংগে ঢুকেছে। ভাংগা উইন্ডশীল্ড দিয়ে অবাধ্য স্বাধীন বৃষ্টির ফোঁটা আর পানির ধারা পড়ছে গাড়ির ভেতর। সিট ভেসে যাচ্ছে। শুধু পানি না, ছেড়া ছেড়া কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঢুকছে!
সাধের গাড়িটার এই অবস্থা দেখে সে কিছুক্ষণ ভেবে পাচ্ছিল না যে ঠিক কী করা উচিত। এমন দিশেহারা অবস্থায় তার ঘোর ভাঙে বাসা থেকে আসা নাতাশার ফোনে। ভিজে চুপসে যাওয়া মুকিত সেই কল রিসিভ করতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হচ্ছিল।
মুকিত ভাবার চেষ্টা করে, তার এখন কী করা উচিত। তার বাসার কাছের কার মেকানিক মাইনুল কে ফোন দেবে? মাইনুল এসে কী করবে? গাড়ি চালাবার অবস্থায়ই আছে কিনা তাও তো বোঝা যাচ্ছে না। রেকার দিয়ে টেনে নিতে হবে? ডিএমপিতে এক বন্ধু আছে পুরোনো, এস পি শোয়েব, তাকে কল দিলে কি রেকার পাঠাতে পারবে না? পারার তো কথা। ইন্সুরেন্সের লোকটাকে ফোন দেবে নাকি? ইন্সুরেন্স এজেন্ট, কি যেন নাম লোকটার... ফোনে নাম্বার সেভ করা আছে, কিন্তু নামটা মনে পড়ছে না! খুঁজলে হয়তো পাওয়া যাবে। ‘ইন্সুরেন্স ক্লেইম করতে হলে তো ছবি তুলে রাখা উচিত’- হঠাৎ মনে পড়ে তার । মুকিত ঘুরে ঘুরে নানা অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তোলে, রাস্তার উল্টাপাশের কনফেকশনারিতে দাঁড়ানো দুই লোক তাকে বৃষ্টির ভেতর ভেঙ্গে পড়া গাছের নিচে গাড়ির ছবি তুলতে দেখে বলাবলি করে-
-কারবার দেখছেন নি?
-আরে পাগলাচো* পাবলিক, ছবি তুলনের জিনিশ পাইলে আর হুঁশ থায় না। ফেসবুকে দেওনের লাইগা অস্থির হৈয়া যায়গা।
মুকিত ছবি তোলে। এই গাছ না সরিয়ে তো গাড়ি উদ্ধারও করা যাবে না। কিন্তু গাছ সরানোর কি ব্যবস্থা করা যায়? ফায়ার ব্রিগেডে কল দিলে কি তারা হেল্প করবে? নাকি সিটি কর্পোরেশানের লোক এসে তাদের গাছ কেটে কুটে সরাবে? তার মাথায় হতাশা আর হাজার হাজার প্রশ্ন একসাথে গিজগিজ করে।
এর মধ্যে আবার ফোন বাজে। বেশ কসরত করে মুকিত, নাতাশার করা সেই ফোন রিসিভ করে।
-হ্যালো তুমি কোথায়? ভীষণ ঝড় হচ্ছে!
-হু
-আরে হু মানে কী? কি যে ঝড়, তুমি দেখছো? আমাদের বারান্দার লিলিগাছ গুলা ভেঙে ভেঙে দিয়ে গেছে।
-আচ্ছা।
- আরে ধুর, কি হু আচ্ছা করতেছো? তুমি কি মিটিং-এ নাকি?
-পরে কথা বলি, ঝামেলায় আছি
-কি ঝামেলা গো? আসবা কখন তুমি? রাতে খিচুড়ি খাবা?
-ফোন রাখো, পরে কথা বলি।
-কি আশ্চর্য, একটু কথা বলার সময় নাই? কী নিয়ে ব্যস্ত তুমি?
-ফোন রাখো!! রাখো বলছি!!
জমা হতাশা উগড়ে দেয় মুকিত। নাতাশাকে ধমক দিয়ে ফোন কেটে দিয়ে সে আবার ডুব দেয় তার হতভম্ব অবস্থায়। গাড়ির শো রুমের ম্যানেজারকে ফোন করে।
-মিনহাজ সাহেব? কেমন আছেন?
-জ্বি ভালো স্যার। কী অবস্থা, গাড়ি কেমন চলছে স্যার?
-আরে ভাই। আইম ডুমড। গাড়ি রাস্তায় পার্ক করেছিলাম, গাছ ভেঙে পড়েছে গাড়ির উপর। ভেঙে চুরে শেষ। আই ডোন্ট নো হোয়াট টু ডু। হেল্প মি আউট প্লিজ। ইন্সুরেন্সে খবর দেন। আর পারলে আমাকে বলেন কিভাবে কী করতে পারি।
-কি বলেন স্যার! ভেরি স্যাড। আমি দেখতেছি কী করা যায়। আপনি কি গাড়ির কাছে আছেন?
-আছি । আর যাব কোথায় ?
- স্যার ছবি তুলে রাখেন, থানায় জিডি করতে হবে। আর রেস্কিউ-এর ব্যাপারে কী করা যায় আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি। আপনি লোকেশানটা আমাকে টেক্সট করে দেন স্যার প্লিজ।
-ওকে।
বৃষ্টি ধরে এসেছে। এখনো পড়ছে টুপটাপ করে ছোট ছোট ফোঁটায়। মুকিত ভেজা মাথায় হাত বুলাচ্ছে। লোকজন চলা ফেরা শুরু করেছে। রিকশা যাচ্ছে। গাছ পড়ে যাওয়ায় সরু একটা ফাঁকা শুধু অবশিষ্ট আছে মোটা রাস্তাটায়। লোকজন জমতে শুরু করেছে। গাছ, গাড়ি, ঝড় নিয়ে নানান কথা হচ্ছে তাদের। কেউ কেউ ভেজা, দিশেহারা চেহারার মুকিতকে দেখছে। গাড়ির মালিক হিসাবে তার এই বিপর্যস্ত অবস্থা কারো কারো উপভোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের টুকরা টুকরা কথা কানে আসছে মুকিতের। কিছু কিছু কথা তার কষ্টে আরো জ্বালা বাড়াচ্ছে-
এহ হে রে, পুরা ভচকায়া লাইছে গাড়ি
আল্লাহ বাচাইছে বিত্রে মানুষ আছেলে না। হেইলে এক্কেরে খবর অইতে।
গাড়ি তো নতুন লাগে
আর চলবো নি এই গাড়ি?
কমসে কম পাছ ছয় লাক টেয়া যাইবো ঠিক করতে
ধোলাইখালে সের মাপা বেইচ্চা দেওন লাগবো
মুকিত একটু দুরে সরে যায়। মাথাটা এখনো ভোঁ ভোঁ করছে। রাগ, হতাশা, অভিমান, সিদ্ধান্তহীনতা সব মিলায়ে সে কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে আছে। একটা সিগারেট খেলে ভালো লাগতো। কিন্তু পকেটে রাখা সিগারেট ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তার পাশে সিগারেটের দোকান থেকে একটা বেনসন লাইট কিনে বৃষ্টিভেজা কাদামাখা ফুটপাথেই বসে পড়ে সে। কিচ্ছু যায় আসে না। তার সভ্য আধুনিকতার রুচি এখন অবশ। আনমনে সিগারেট টানতে থাকে মুকিত। বড় বিপদে মানুষ ঘোরে ডুবে যায়। সেও ঘোরে ডুবে আছে। এই ঘোর অপেক্ষার। কিসের অপেক্ষা, মুকিত নিজেও জানে না। হয়ত গাড়ির শো রুম ম্যানেজার মিনহাজের ফোনের অপেক্ষায়, যে বলে দেবে কী করতে হবে। হয়ত ফায়ার ব্রিগেড বা সিটি কর্পোরেশানের অপেক্ষায়। যারা এসে গাছ কেটে চাপা পড়া গাড়ি মুক্ত করবে। হয়তো অপেক্ষা পুলিশের, যারা মুকিতের গাড়ি উদ্ধার করবে যেভাবেই হোক। ঘোরে ডুবে সে সিগারেট টানতে থাকে।
তার ঘোর ভাঙ্গে একটা চিতকারে। গাড়ির আশেপাশে জটলা জমা মানুষগুলোর ভেতর থেকে কে যেন বুক চেরা চিতকার করে যাচ্ছে। মুকিত ধীর পায়ে হেঁটে আগায়। তারই মতন ভিজে চুপচুপা শীর্ণ একটা লোক, পাগলের মতো গড়াগড়ি করছে আর চিৎকার করছে। পাশে একটা রিকশা ভ্যান। লোকটার আহাজারি শোনে মুকিত
-অ আল্লাহ গো এইটা তুমি কি করলা।
আমার সব শেষ করলা কেন আল্লাহ
ভাই আপনেরা এই গাছ সরান ।
ভাই গাছের তলে পারুল আর মিনা চাপা পইড়া আছে ।
লোকজন হাত লাগায়, গাছ নড়ে না। গাছের গোড়ায় পলিথিনের ছাপড়ায় ভ্যানওয়ালার অসুস্থ বউ মিনা আর আট বছরের মেয়ে পারুল চাপা পড়ে থাকে। লোকজন শতশত মতে ভাগ হয়ে যায়। কীভাবে তাদের উদ্ধার করা যায় সে নিয়ে তর্ক হয়। এই কর, অই কর বলে চিৎকার হাউ কাউ শুরু হয়।
ধীরপায়ে হেঁটে মুকিত জটলা থেকে সরে আসে। হঠাৎ করেই তার কেমন যেন হালকা লাগে।
মনে হয় তার এখন বাসায় ফিরে কাগজি লেবু চিপে ধোয়া ওঠা খিচুড়ি খেতে খেতে আসন্ন সন্তানের নাম নিয়ে প্রেগনেন্ট নাতাশার সাথে তর্ক করতে খুব ইচ্ছা করছে।
একটা খালি রিকশা ডেকে মুকিত চড়ে বসে। পেছনে পড়ে থাকে বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছ ভেঙ্গে চাপা পড়া একটা নীল গাড়ি। আর নীল পলিথিনের নীচে মৃত সংসার।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন