কালের কন্ঠ পত্রিকা পড়ে জানতে পারলাম রেজোয়ান নামের এক মোবাইল ফোনবিহীন যুবক; মোবাইল ফোন ব্যবহার না করেও তার জীবনের লক্ষ্য বা মাকামে মাহমুদে পৌঁছে গেছেন। রেজোয়ান বিসিএস শোবিজে এডমিন অস্কার পেয়েছেন; মোবাইললেস ক্যাটাগরিতে।
এও কী সম্ভব; মোবাইল ফোন ছাড়াই চাকরির এভারেস্ট বিজয়! কালের কন্ঠের প্রতিবেদক ছোটবেলায় সাংবাদিকতার পাঠে জেনেছেন, কুকুর মানুষকে কামড় দিলে ওটা সাধারণ ঘটনা; তাই সংবাদ নয়। কিন্তু মানুষ ফেসবুকে লাইক দিতে দিতে লাইক্যানথ্রপিক রোগে নেকড়ে হয়ে কুকুরকে কামড় দিলে তা অসাধারণ ঘটনা। ফলে তা সংবাদ।
ইয়াং ছেলেমেয়ে মোবাইল ফোনে টিকটক বানায়, আই লাভ ইউ বলে, ক্রাশের জীবনে ত্রাস সঞ্চার করে মোবাইল ফোন দিয়ে; এগুলো সাধারণ ঘটনা। কিন্তু ইয়াং ছেলে রেজোয়ান মোবাইল ফোনে টিকটক বানায়নি; আই লাভ ইউ বলেনি; সে বিসিএস গাইড বুকে ত্রাসের সঞ্চার করেছে। এটি অসাধারণ ঘটনা তাই সংবাদ।
রেজোয়ান মোবাইললেস ক্যাটেগরিতে বিসিএস শোবিজ এওয়ার্ড পাওয়ায়; কালের কন্ঠ এই মোবাইললেস আইকনকে তুলে এনেছে অনুকরণীয় হিসেবে।
যেসব বুড়োরা যুবা বয়েসে হাতে লেখা চিঠি ছুঁড়ে মেরে পাড়ার রোমিও হোমিওপ্যাথির দোকান খুলে জমিয়ে দিতো; তারাই এখন বৃদ্ধ বয়সে যুবক-যুবতীর প্রেম দেখে বলেন, 'ছ্যা ছ্যা ছ্যা; মূল্যবোধের এমন অবক্ষয়। ঐ মোবাইল ফোনটাই যত নষ্টের গোড়া।' এই সিনিয়র সিটিজেনদের নয়নের মনি এখন মোবাইললেস রেজোয়ান। করোনাকালে বারান্দায় বসে সামনে মোবাইলে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাওয়া নন্টে-ফন্টেকে খুব জোরে বকে দিয়ে সিনিয়র সিটিজেন বলছেন, ফেলে দাও হাতের ঐ শয়তানের যন্ত্র; রেজোয়ানকে দেখে শেখো; কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছুতে হয় তা রপ্ত করো।
ভাগ্য ভালো রেজোয়ান এখন বিসিএস অফিসার। এখন সে ছাত্র থাকলে করোনাকালে জুম কনফারেন্সে ক্লাস করা অসম্ভব হয়ে পড়তো তার। সিনিয়ার দাদুরা আবার নিজের ফোনটি এখন নাতির হাতে তুলে দিয়ে বলছেন, 'যাও দাদু ক্লাস করো। নাতি ভেংচি দিয়ে বলে, কেমন মজা দাদু; তুমি যাকে শয়তানের যন্ত্র বলতে; এখন তা ক্লাসরুম।'
যা হোক; মোবাইললেস রেজোয়ান যেহেতু বিসিএস শোবিজে এসেই পড়েছে; এই আইকনকে ধরে রাখতে, রেজোয়ানকে কিছু কবুতর কিনে দেয়া হোক। সে কবুতরের পায়ে চিঠি বেঁধে দিয়ে 'কবুতর যা যা বলে' ইউএনও স্যার, ডিসি ম্যাডামের কাছে বার্তা পাঠাতে পারবে। এমনকি বিসিএস শো বিজে সম্পূর্ণ নতুন ক্যাটাগরিতে অস্কার পাওয়ার কৃতজ্ঞতায় সে 'ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী' লেখা একটি চিঠি কবুতরের পায়ে বেঁধে দিয়ে; তাকে গণভবন পানে রওনা করে দিতে পারে। রেজোয়ানকে রেজোয়ানের মতো থাকতে দিন। মোবাইললেস লাইফ তার ইচ্ছার স্বাধীনতা। কেউ তো এখনো রইলো যে হাতে লেখা চিঠি কবুতরের ঠোঁটে পাঠানোর ঐতিহ্যটি চর্চা করবে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন