একটি কাল্পনিক হোটেলে একজন কাল্পনিক কাস্টমারের অর্ডারনামা

২৩৯৫ পঠিত ... ২২:১৪, অক্টোবর ৩১, ২০১৭

কথা হচ্ছে একজন ওয়েটার আর হোটেলে আগত কাস্টমারের মধ্যে... কাস্টমার মেন্যুটা হাতে নেড়ে চেড়ে দেখছে, হাতে নোটপ্যাড নিয়ে ওয়েটার দাঁড়িয়ে আছে গত ৫ মিনিট ধরে।

- স্যার কী খাবেন ?
- আমার তো শরীর বেশি সুবিধার না, হজমের ট্রাবল আবার খিদাও নাই তেমন
- তাহলে হালকা কিছু দেবো, স্যার?
- আরে না, হালকা খাইয়া কি সারাদিন থাকা যায় নাকি?
- তাহলে স্যার ভাজা-ভুনা ছাড়া, স্টিমড, স্যুপ টাইপ কিছু দেই?
- ধুর! এগুলা আবার একটা খাবার হইল?
- তাহলে স্যার যদি বলতেন কী খেতে চাচ্ছেন?
- মজা হবে কোনটা সবচেয়ে বেশি?
- বিফ স্টেক ভাল হবে স্যার, অর্ডার করলে বানায় দিবে, সাথে সাইড ডিশ থাকবে ।
- কুইক করেন, আমার সময় কিন্তু কম!

অলংকরণ: সালমান সাকিব

১৫ মিনিট পর ওয়েটার বিফ স্টেক নিয়ে আসে, ধোয়া ওঠা স্টেক দেখে কাস্টমারের ভ্রু কুচকে যায়...

- এটা তো হজম হবে না খেলে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব গ্রিজি...
- কিন্তু স্যার আপনি তো স্টেক অর্ডার করলেন!
- আরে আমি অর্ডার করি নাই, আমি বলছি ভাল হবে কিনা
- তাহলে স্যার এই স্টেকের কি হবে?
- সেটা তো আপনার সমস্যা, আমার না।
- ওকে স্যার আমি দেখি কী করা যায়, তো আপনি তাহলে খাবেন কি ?
- খেতে ভালো, হজমে সুবিধা হবে এমন কিছু নিয়ে আসেন
- ফিশ খান তাহলে
- আনেন দেখি, পছন্দ হলে খাই...
- স্যার অর্ডার করে রিটার্ন করা যাবে না। কনফার্ম করেন!
- আরে, কি মুশকিল, আমি তো খাইতে আসছি, তাই না? সব ফিরাইয়া দিলে খাব কী? কিছু তো খাইয়া যাবই নাকি?

খাবার আসার পর, কাস্টমারের প্রতিক্রিয়া-
- দেখে তো ভালই লাগতেসে।

আঙ্গুলের আগা দিয়ে একটু খাবার চেখে দেখে
- এহহেরে, এইটায় তো মশলাপাতি দেয় নাই একদম, ভুইত্তামারা টেস্ট। কি রানছে এটা? স্বাদ গন্ধ কিছুই তো নাই!
- তাহলে কি স্যার স্পাইসি করে আনবো?
- আনেন, এইটা মুখে দেয়া যাবে নাকি ? উল্টায়া বমি আসবে

স্পাইসি হয়ে ডিস ফিরে আসার পর, কাটা চামচ দিয়ে একটুকরা মুখে দিয়ে কাস্টমার বলে-
- খারাপ না, চলে।
- এটা স্যার আমাদের স্পেশাল ডিশ, একটু এক্সপেন্সিভ, বাট ভালো ডিমান্ড আছে
- এ্যাঁ? এক্সপেন্সিভ? কত?
- স্যার ৬৫০ প্লাস ভ্যাট।
- আরে, ডাকাতি নাকি? আমি একবেলায় এত্তগুলা টাকা দিয়া এই খাবো? নেভার।
- কিন্তু স্যার আপনিই তো অর্ডার করলেন...
- আরে মিয়া আমি কি দাম জানতাম নাকি ? আপনার একটা সেন্স নাই? বুঝেন না? এই টাকা দিয়া কেউ লাঞ্চ করে?
- স্যার আমি তো বুঝতেছি না আপনি আসলে কী খেতে চাচ্ছেন!
- না বুঝার কী আছে? খাইতে মজা, দামে কম এমন কী আছে?
- স্যার দাম তো সব মেনুতে দেয়া আছে, দেখে অর্ডার করেন
- এটা কি ? ১৫০ টাকায় ? নাচোস, কেমন হবে এটা ?
- ম্যাক্সিকান ডিশ স্যার, স্ন্যাক টাইপ।
- কতক্ষণ লাগবে দিতে?
- ১৫ মিনিট মত ।
- উহহু , আমার টাইম নাই... হাতে সময়ই আছে ১০ মিনিট, আপনি ৫ মিনিটের মধ্যে খাবার দেন, আমি ৫ মিনিটে খেয়ে যাই গা। মামলা ফিনিশ।
- এত কুইক তো স্যার হবেনা, রেডি করতেও তো একটা টাইম লাগে
- আরে একটা স্ন্যাকস বানাতে ৫ মিনিটের বেশি কেন লাগবে, বুঝান আমারে!
- স্যার তাড়াহুড়া করলে ভালো হয় না, শেফ সব কিছু তার নিয়ম মতো করে, স্ট্যান্ডার্ড ঠিক রাখার জন্য
- আরে রাখেন, বুগিজুগি বুঝান আমারে? আমার আইডিয়া আছে কেমন টাইম লাগে। হেইলা দুইলা খোশ গল্প কইরা টাইম ওয়েস্ট করে, হাত চালাইতে বলেন দেখবেন ৫ মিনিটে হয়ে গেছে।
- আচ্ছা আমি দেখতেছি স্যার।

৭ মিনিটের মাথায় টেবিলে নাচোস আসে।
- এই জিনিসের নাম নাচোস? পাপড় ভাজা আর বাধাকপি ?
- সাথে ডাইস করা চিকেন আছে স্যার, আর হার্ভস, সস, মেয়ো!
- এটা খাইলে তো গ্যাস হবে । পানি দেন আগে!

ওয়েটার এক গ্লাস পানি এনে দেয়, কাস্টমার বলে-
- ইনো আছে নাকি? একটা ইনো দেন তো কুইক, সময় একদম নাই!

ওয়েটার মুখ শুকনা করে ছুটে চলে যায়, হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে আসে এক স্যাশে ইনো নিয়ে । কাস্টোমার গ্লাসে ইনো গুলায়ে খেয়ে ফেলে, তারপর বলে-
- যান বিল টা নিয়ে আসেন, কুইক করেন, এক ঘন্টা লাগাবেন না।

অলংকরণ: সালমান সাকিব

ওয়েটার বিল এনে দেয়। কাস্টমার বিলে চোখ বুলায়ে বলে
- মানে কী? স্টেক, ফিস গ্রিল, নাচোস সব কিছুর বিল ধরসেন কেন?
- স্যার সব তো আপনি অর্ডার করসিলেন।
- আমি খাইছি কিছু? সব তো টেবিলেই আছে!
- কিন্তু স্যার এসব তো আপনার জন্যই বানানো
- আরে ধুর মিয়া। আমি ঢুইকাই বলছি আমার খিদা নাই, হজমে ট্রাবল আর সময়, টাকা দুইটাই কম। আপনি হেনতেন বুঝায়া আমার যথেষ্ট সময় নষ্ট করছেন। এই যে পানিতে গুলায়ে ইনো খাইলাম, ভাল্লাগতেছে। কাস্টমারের নিড বুঝতে হবে না আপনাদের? এত আনপ্রফেশনাল কেন আপনারা? ইনো আর এক গ্লাস পানির দাম রাখেন। যান!

... এমনটা হোটেলে ঘটে না। কিন্তু অ্যাড এজেন্সিতে অহরহ ঘটে। সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি বলে কথা!

২৩৯৫ পঠিত ... ২২:১৪, অক্টোবর ৩১, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top