গত ৯ মে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত টিসিবি ভবন মিলনায়তনে ব্রাজিলিয়ান ডেথ মেটাল ব্যান্ড ক্রিসিউন এবং নার্ভোক্যাওসের কনসার্ট ‘দ্য মেটাল মর্গ’ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, দেশের মাটিতে এ ধরণের অপসংস্কৃতি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি নিরাপত্তাকর্মীরা। স্টেজে কেন, খোদ হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ব্যান্ডমেম্বারদের ঢাকা শহরে ঢুকতে দেননি তারা।
ইমিগ্রেশনে আটকে দেওয়া প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, 'দেখুন, আমি পিউর আর্জেন্টিনার ফ্যান। মেসি আমার গুরু। ব্রাজিলের দুইটা ব্যান্ড এসে কনসার্ট করে যাবে, আর আমি তা মেনে নেব? কোনোভাবেই তা হতে পারে না।'
এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ এ ব্যাপারে কথা বলতে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে জানানো হয়, 'কোনো বিদেশী পারফর্মার এয়ারপোর্ট দিয়ে পার হতে পারবে না। কেবলমাত্র তারা ভারতীয় হলে রেহাই পাবেন। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের সোনার ছেলেরা বড় হবে হিন্দি গান শুনে। আইপড-এমপিথ্রিতে থাকবে বলিউডের গান। সন্ধ্যা হলেই প্রতিটা ঘরে ঘরে বাজবে হিন্দি সিরিয়ালের ধুন। ডেথ মেটাল কি আমাদের সংস্কৃতি নাকি?'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এক কর্মকর্তা বলে ওঠেন, 'তাদের আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম, ‘ক্যায়সা হো?’, তারা কোনো উত্তর দিলো না। বুঝলাম ব্যাটা নন-ইন্ডিয়ান। এরপর জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইউ গোল্ড হ্যাজ?’ তাও তারা কোনো উত্তর দিলো না। হিন্দিও জানে না, সোনাও দিবে না। আপনারা তো জানেন, এরকম কাউকে এয়ারপোর্ট পুলিশের কোনো সদস্য দেশে প্রবেশ করতে দেয় না। তাদের অনুমতি দেবে, সে আশা আপনারা কোন সাহসে করেন, তা আমরা বুঝি না। এতো বড় বড় গিটারের ব্যাগ নিয়ে এসেছে। কয়েক কেজি সোনা আনলে এমন বড় কোনো ক্ষতি তো হয়ে যেত না।
ওদিকে কনসার্টের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান র্যাপটর এন্টারটেইনমেন্টের প্রধান রাফিউদ্দীন খান রুশো এ ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ। তিনি জানালেন, 'আমরা অনেকবার তাদের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। তারা শেষ মুহুর্তে আমাদের অনুষ্ঠান বাতিল করে পরবর্তী তারিখের জন্য আবেদন করতে বলেছে। আবেদন করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সেলফোনে কল করেছিলাম। তখন একজন মহিলা ফোন রিসিভ করে সমস্যার কথা জানতে চান। আমি সরলভাবে তাকে বলার পরে তিনি রীতিমত চিৎকার করতে থাকেন, ‘আপনি আমাকে চেনেন? চেনেন আমাকে? আমি নিয়মিত জি বাংলা, স্টার জলসা দেখি। এই ছেলেটা ভ্যালভ্যালেটা, রাধা, পটলকুমার গানওয়ালা আমার রেগুলার সিরিয়াল। আপনারা এখানকার শিল্পীদের না এনে হাবিজাবি ব্যান্ড আনেন কোন সাহসে? আপনাদের সব কয়টাকে দেখে নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে।'
তবে বিদেশী ব্যান্ড ঢুকতে না পারা নিয়ে দেশের কোন সঙ্গীত শিল্পীকে কোন ধরনের উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি। কী দরকার বাবা, নিজেদের কনসার্ট তো আর বাতিল হচ্ছে না। আর তাদেরও তো কোনো সম্ভাবনা নেই ব্রাজিলে গিয়ে কনসার্ট করার। ভারতীয় শিল্পীকে ঢুকতে না দিলে না হয় আন্দোলন করা যেতো।
তবে ঢাকার কিছু বোকা মেটাল ভক্তকে এই ঘটনার প্রতিবাদে 'উই আর স্যরি' লেখা একটা ছোট্ট ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপ করতে দেখা গেছে--