জিপিএ ফাইভ এর আগেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীর পাশ করতো। এখনো পাশ করে। তখন কী হতো, বর্তমানে কী হয় এবং ভবিষ্যতে কী হবে তাই নিয়ে এই গবেষণামূলক প্রবন্ধ।
১৯৬০ সাল
গ্রামবাসী ১ : পাশের গ্রামের আবু বক্কর মেট্রিক পাশ দিছে।
গ্রামবাসী ২ : কস কি, সেলিমের পোলা বক্কর?
গ্রামবাসী ১ : হ! সন্ধ্যায় দেখতে যামু।
গ্রামবাসী ২ : যাওয়ার সময় গাছের বড় 'কাডল'টা নিয়া যাইস!
গ্রামবাসী ১ : হ, কিছু নিয়া যাওয়া তো দরকার। পোলাডা কি খাটনিটাই না খাটছে। বই পড়তে পড়তে ছিঁইড়া ফালাইছে...!
১৯৯০ সাল
প্রতিবেশী ১ : পাশের এলাকার মফিজ স্ট্যান্ড করছে ঢাকা বোর্ডে!
প্রতিবেশী ২ : বলেন কী!
প্রতিবেশী ১ : দিন রাত পড়তো! পায়ের সাথে রশি লাগাইয়া ঘুমাইতো যাতে ঘুমাইলে পায়ে টান পড়ে। উইঠা যাইতো, তারপর আবার পড়তো।
প্রতিবেশী ২ : বিকালে ওগো বাসায় যামু...!
প্রতিবেশী ১ : যাওয়ার সময় পায়েস নিয়া যাইতে হবে!
২০১৭ সাল
প্রতিবেশী ১ : পাশের বাসার যত্তগুলা পোলাপাইন ছিলো, সব এ প্লাস পাইছে।
প্রতিবেশী ২ : বলো কি?!?
প্রতিবেশী ১ : হ্যাঁ! রাতে তাদের মেধাবী শিক্ষকদের সাজেশন আসছিলো... আর সকালে তো সবগুলা প্রশ্নই পায়া গেছে!
প্রতিবেশী ২ : সব কমন?
প্রতিবেশী ১ : আবার জিগায়! সব! সেট কোড পর্যন্ত কমন!
২০২০ সাল
প্রতিবেশী ১ : পাশের এলাকার সবাই এ প্লাস!
প্রতিবেশী ২ : সবাই মানে?
প্রতিবেশী ১ : পরীক্ষার্থীরা তো এ প্লাস পাইছেই, তাদের বাপ-মারেও জিপিএ ৫ দেয়া হইছে।
প্রতিবেশী ২ : বাহ! মেধাবী পরিবার! আগে ছাত্ররা প্রশ্ন পাইতো, এখন বাপ মারেও দেয়।
প্রতিবেশী ১: শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো!
প্রতিবেশী১ : খুশীতে তারা গরু শোয়াইছে। আমিও এ প্লাস পাইছি, গোল্ডেন না যদিও।
প্রতিবেশী ২ : ওহ! তুমি তো গর্বিত বাপ, একদম শাকিব খানের মত! তবে প্রশ্নটা পুরা মনযোগ দিয়া সলভ করলে এরকম হইতো না, বাপ-বেটা দুইজনই গোল্ডেন পাইতা!
২০৫০ সাল
প্রতিবেশী ১ : পাশের বাসার পোলাপান সব নোবেল পাইছে।
প্রতিবেশী ২ : আলহামদুলিল্লাহ!
প্রতিবেশী ১ : তোমার ছেলের কী অবস্থা?
প্রতিবেশী ২ : গাধাটা শান্তিতে নোবেল পাইছে।
প্রতিবেশী ১ : আমার মেয়ে ফিজিক্সে নোবেল পাইছে।
প্রতিবেশী ২ : লাকি ইউ।
প্রতিবেশী ১ : তুমি কী পাইছো?
প্রতিবেশী ২ : যে রকম এক গাধা জন্ম দিছি! নোবেল কি, অস্কারটাও পাব না!
প্রতিবেশী ১ : আহা!
প্রতিবেশী ২ : একটা অস্কারও অন্তত না পাইলে.... মান ইজ্জত থাকে না... পাড়ার সবার ঘরে চার পাঁচটা করে অস্কার! আর আমার?
প্রতিবেশী ১ : প্রোব নাই, আরেকটা ছেলে তো আছে, ওর পিছনে লেগে থাকো, আর দেখ এইটা অন্তত গ্রামিটা পায় কিনা।
প্রতিবেশী ২ : হুমমম...মান সম্মানের ব্যাপার!
২০৬০ সাল
প্রতিবেশী ১ : পাশের বাসার সালামরে তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়া দিছে।
প্রতিবেশী ২ : অসামান্য ফলাফল! ঠিকই আছে। হুদাই এত পড়াশুনার প্যারা। কোন ডিপার্টমেন্ট দিছে?
প্রতিবেশী ১: ফিজিক্স!
প্রতিবেশী ২ : জোস! আইনস্টাইনরেও তো ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট দেয়া হয় নাই!
প্রতিবেশী ১ : তোমার ছেলের কী অবস্থা?
প্রতিবেশী ২ : আমার ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিছে!
প্রতিবেশী ১ : এইগুলা আর কি, মফিজ আর বক্কররে তো বুয়েট আর মেডিকেল দিছে!
প্রতিবেশী ২ : সেইরকম ব্যাপার! এলাকার মান ইজ্জত থাকলো তাইলে!
২০৮০ সাল
প্রথম ব্যক্তি : হার্ভাড ইউনিভার্সিটির প্রশ্ন আউট হইলে বাঁচি।
দ্বিতীয় ব্যক্তি : চান্স কেমন?
প্রথম ব্যক্তি : ভালোই।
দ্বিতীয় ব্যাক্তি : এত শিওর কেমনে?
প্রথম ব্যক্তি : ঐ খানের ক্লার্ক বাংলাদেশী। সে ভরসা দিছে। তার চেয়েও বড় কথা কী জানোস?
দ্বিতীয় ব্যাক্তি : কী?
প্রথম ব্যক্তি : তার নানা এক কালে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ছিল। সেই লোক আবার শায়েস্তা খানের মত লিজেন্ড।
দ্বিতীয় ব্যক্তি : কিরকম?
প্রথম ব্যক্তি : শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় কয়েক মন চাল পাওয়া যাইতো। আর তার সময় পনেরো টাকায় প্রশ্ন পাওয়া যাইতো।
দ্বিতীয় ব্যক্তি : স্যালুট!
২০৯৫ সাল
ঢাবি : কই যাস?
জাবি : সালামের বাসায়, ক্লাস করতে!
ঢাবি : আমি বক্করের বাসায় ক্লাস করতে যাই, ডিএমসি গেছে আক্কাসের কাছে। শারীরিক শিক্ষা পড়তে!
জাবি : আচ্ছা, বুয়েটরে বলিস তো আবুলের বাসায় প্রাইভেট পড়ে আমার সাথে একটু যেন দেখা করে!