জিপিএ ফাইভের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত ও মহাভবিষ্যত

১৫৬০৪ পঠিত ... ১১:০৪, মে ০৪, ২০১৭

জিপিএ ফাইভ এর আগেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীর পাশ করতো। এখনো পাশ করে। তখন কী হতো, বর্তমানে কী হয় এবং ভবিষ্যতে কী হবে তাই নিয়ে এই গবেষণামূলক প্রবন্ধ।

 

 

১৯৬০ সাল

গ্রামবাসী ১ : পাশের গ্রামের আবু বক্কর মেট্রিক পাশ দিছে।

গ্রামবাসী ২ : কস কি, সেলিমের পোলা বক্কর?

গ্রামবাসী ১ : হ! সন্ধ্যায় দেখতে যামু।

গ্রামবাসী ২ : যাওয়ার সময় গাছের বড় 'কাডল'টা নিয়া যাইস!

গ্রামবাসী ১ : হ, কিছু নিয়া যাওয়া তো দরকার। পোলাডা কি খাটনিটাই না খাটছে। বই পড়তে পড়তে ছিঁইড়া ফালাইছে...!

 

১৯৯০ সাল

প্রতিবেশী ১ : পাশের এলাকার মফিজ স্ট্যান্ড করছে ঢাকা বোর্ডে!

প্রতিবেশী ২ : বলেন কী!

প্রতিবেশী ১ : দিন রাত পড়তো! পায়ের সাথে রশি লাগাইয়া ঘুমাইতো যাতে ঘুমাইলে পায়ে টান পড়ে। উইঠা যাইতো,  তারপর আবার পড়তো।

প্রতিবেশী ২ : বিকালে ওগো বাসায় যামু...!

প্রতিবেশী ১ : যাওয়ার সময় পায়েস নিয়া যাইতে হবে!

 

 

২০১৭ সাল

প্রতিবেশী ১ : পাশের বাসার যত্তগুলা পোলাপাইন ছিলো, সব এ প্লাস পাইছে।

প্রতিবেশী ২ : বলো কি?!?

প্রতিবেশী ১ : হ্যাঁ! রাতে তাদের মেধাবী শিক্ষকদের সাজেশন আসছিলো... আর সকালে তো সবগুলা প্রশ্নই পায়া গেছে!

প্রতিবেশী ২ : সব কমন?

প্রতিবেশী ১ : আবার জিগায়! সব! সেট কোড পর্যন্ত কমন!

 

২০২০ সাল

প্রতিবেশী ১ : পাশের এলাকার সবাই এ প্লাস!

প্রতিবেশী ২ : সবাই মানে?

প্রতিবেশী ১ : পরীক্ষার্থীরা তো এ প্লাস পাইছেই, তাদের বাপ-মারেও জিপিএ ৫ দেয়া হইছে।

প্রতিবেশী ২ : বাহ! মেধাবী পরিবার! আগে ছাত্ররা প্রশ্ন পাইতো, এখন বাপ মারেও দেয়।

প্রতিবেশী ১: শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো!

প্রতিবেশী১ : খুশীতে তারা গরু শোয়াইছে। আমিও এ প্লাস পাইছি,  গোল্ডেন না যদিও।

প্রতিবেশী ২ : ওহ! তুমি তো গর্বিত বাপ, একদম শাকিব খানের মত! তবে প্রশ্নটা পুরা মনযোগ দিয়া সলভ করলে এরকম হইতো না, বাপ-বেটা দুইজনই গোল্ডেন পাইতা! 

 

 

২০৫০ সাল

প্রতিবেশী ১ : পাশের বাসার পোলাপান সব নোবেল পাইছে।

প্রতিবেশী ২ : আলহামদুলিল্লাহ!

প্রতিবেশী ১ : তোমার ছেলের কী অবস্থা?

প্রতিবেশী ২ : গাধাটা শান্তিতে নোবেল পাইছে।

প্রতিবেশী ১ : আমার মেয়ে ফিজিক্সে নোবেল পাইছে।

প্রতিবেশী ২ : লাকি ইউ।

প্রতিবেশী ১ : তুমি কী পাইছো?

প্রতিবেশী ২ : যে রকম এক গাধা জন্ম দিছি! নোবেল কি, অস্কারটাও পাব না!

প্রতিবেশী ১ : আহা!

প্রতিবেশী ২ : একটা অস্কারও অন্তত না পাইলে.... মান ইজ্জত থাকে না... পাড়ার সবার ঘরে চার পাঁচটা করে অস্কার! আর আমার?

প্রতিবেশী ১ : প্রোব নাই, আরেকটা ছেলে তো আছে, ওর পিছনে লেগে থাকো, আর দেখ এইটা অন্তত গ্রামিটা পায় কিনা।

প্রতিবেশী ২ : হুমমম...মান সম্মানের ব্যাপার!

 

২০৬০ সাল

প্রতিবেশী ১ : পাশের বাসার সালামরে তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়া দিছে।

প্রতিবেশী ২ : অসামান্য ফলাফল! ঠিকই আছে। হুদাই এত পড়াশুনার প্যারা। কোন ডিপার্টমেন্ট দিছে?

প্রতিবেশী ১: ফিজিক্স!

প্রতিবেশী ২ : জোস! আইনস্টাইনরেও তো ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট দেয়া হয় নাই!

প্রতিবেশী ১ : তোমার ছেলের কী অবস্থা?

প্রতিবেশী ২ : আমার ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিছে!

প্রতিবেশী ১ : এইগুলা আর কি, মফিজ আর বক্কররে তো বুয়েট আর মেডিকেল দিছে!

প্রতিবেশী ২ : সেইরকম ব্যাপার! এলাকার মান ইজ্জত থাকলো তাইলে!

 

 

২০৮০ সাল

প্রথম ব্যক্তি : হার্ভাড ইউনিভার্সিটির প্রশ্ন আউট হইলে বাঁচি।

দ্বিতীয় ব্যক্তি : চান্স কেমন?

প্রথম ব্যক্তি : ভালোই।

দ্বিতীয় ব্যাক্তি : এত শিওর কেমনে?

প্রথম ব্যক্তি : ঐ খানের ক্লার্ক বাংলাদেশী। সে ভরসা দিছে। তার চেয়েও বড় কথা কী জানোস?

দ্বিতীয় ব্যাক্তি : কী?

প্রথম ব্যক্তি : তার নানা এক কালে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ছিল। সেই লোক আবার শায়েস্তা খানের মত লিজেন্ড।

দ্বিতীয় ব্যক্তি : কিরকম?

প্রথম ব্যক্তি : শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় কয়েক মন চাল পাওয়া যাইতো। আর তার সময় পনেরো টাকায় প্রশ্ন পাওয়া যাইতো।

দ্বিতীয় ব্যক্তি : স্যালুট!

 

২০৯৫ সাল

ঢাবি : কই যাস?

জাবি : সালামের বাসায়, ক্লাস করতে!

ঢাবি : আমি বক্করের বাসায় ক্লাস করতে যাই, ডিএমসি গেছে আক্কাসের কাছে। শারীরিক শিক্ষা পড়তে!

জাবি : আচ্ছা, বুয়েটরে বলিস তো আবুলের বাসায় প্রাইভেট পড়ে আমার সাথে একটু যেন দেখা করে!

১৫৬০৪ পঠিত ... ১১:০৪, মে ০৪, ২০১৭

Top