পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন্স ডে এ বছর একই দিনে। শুধু এ বছর না, এখন থেকে পহেলা ফাল্গুন সবসময়ই হতে যাচ্ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। এতে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবসের মধ্যে একটা ক্ল্যাশ তো লেগে গেছেই। আগে পরপর দুইদিন উৎসব ছিল, এখন তা নেমে এসেছে একদিনে। এটা কি ভালো না খারাপ, অনেকেই বুঝতে পারছে না। কারো কাছে ভালো, কারো কাছে হয়তো খারাপ। আমরা ভাবতে বসেছিলাম একই দিনে বসন্ত ও ভ্যালেন্টাইন হওয়ার সুবিধা-অসুবিধা দুটোই। যারা অনেক খুশি, তারা অসুবিধাগুলো দেখুন। যারা অনেক দুখী, তারা সুবিধাগুলোর দিকে চোখ বুলান...
সুবিধা:
১# বসন্ত ও ভ্যালেন্টাইনের জন্য আলাদা করে শপিং করার দরকার পড়বে না। লাল ও হলুদ কালারের কম্বিনেশনে কমলা কালারের একটি জামা কিনলেই হবে।
২# বসন্ত আর ভ্যালেন্টাইনে ডাবল ডেটের কারণে রেস্টুরেন্টে দুইবার খাওয়ার বিল দিতে হতো। এখন থেকে জাস্ট একদিন একবারই বিল দিতে হবে। সুতরাং বেশ কিছু টাকা সেভ করা যাবে।
৩# সিঙ্গেল সমাজের হৃদয়ে এবার রক্তক্ষরণের পরিমানও কমে যাবে। সকল দুঃখ-কষ্ট, আফসোস একদিনেই শেষ। পরপর দুইদিনে হোমপেজে অনেক অনেক কাপল দেখতে হবে না, সুন্দরদের (পাঞ্জাবি পরা ছেলে) বা সুন্দরীদের ছবি দুইদিন ধরে দেখতে হবে না। জাস্ট একটা দিন কষ্ট করলেই হইলো।
৪# ফেসবুকের স্টোরি ও নিউজফিডও এবার কিছুটা রিলিফ পাবে। নানা রঙয়ের ঢঙয়ের ছবি ও একই সাথে এইসব দিবস পালন করার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ আলোচকদের ব্যস্ততাও কিছুটা কমবে। দুইদিন মিলিয়ে একটি আলোচনা করে ফেললেই হয়ে যাবে।
৫# যেসব বন্ধুবান্ধব আপনার বসন্তের জামা ভ্যালেন্টাইনের দিন ধার চেয়ে বসতো, তাদের কাছ থেকে এবার রেহাই পাবেন। টাকা পয়সা ধার চাওয়া বন্ধুবান্ধব ও টাকা পয়সা পাওয়া বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে বাঁচার জন্য এবার মাত্র একদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকলেই হবে।
৬# বাড়তি ‘পড়ালেখা’ করার চাপও এবার কম। বাসায় একটা এক্সট্রা ক্লাসের কথা বলেই পার পেয়ে যাবেন। টানা দুইদিন এক্সট্রা ক্লাস করতে হবে না।
৭# ঢাকার উপর অভিশাপের বন্যাও এবার কম পড়বে। সৃষ্টিকর্তা একদিনের বেশি অভিশাপ দিবেন না এবার :3
৮# ঢাকা ও মিরপুরবাসীর কষ্টও এবার কমবে। জ্যামের প্যারা একদিন নিলেই হবে।
৯# পাশের বাসার আন্টিদের আগে টানা দুইদিন ধরে একটিভ থাকতে হতো। এখন থেকে তাদের পরিশ্রমও কম, একদিন ডিউটি করলেই হইলো।
১০# পরপর দুই দিন বইমেলায় যেতে হবে না। বই মেলায় গিয়ে ভীড়-ভাট্টার মধ্যে কনুইয়ের গুতো খেতে হবে না, পকেট সামলাতে হবে না এসব ব্যাপার ভেবে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলুন।
বাড়তি সুবিধা: eআরকির পাঠকদের কষ্টও কমলো। কষ্ট করে দুই দিন বাজে কন্টেন্ট পড়া লাগবে না। এইটার মতো দুইদিন মিলে একদিনের কন্টেন্ট পড়লেই হইলো...
অসুবিধা:
১# আপনি আপনার প্রিয়তমর সাথে আগে পরপর দুই দিন ডেটে যেতে পারতেন। এই সপ্তাহে কেবল মাত্র একটি দিনেই তার পাশে বসে থাকতে পারবেন।
২# আপনি যদি বসন্ত পালন করার জন্য বেরোন, সবাই ভাববে ভালোবাসা দিবস বলে ডেট করতে বেরোচ্ছেন। সিঙ্গেলদের এবার একটু অসুবিধাই হবে বৈকি...
৩# বসন্ত ও ভ্যালেন্টাইন আলাদা আলাদা ভাবে হইলে একদিন জাস্টফ্রেন্ডকে দেয়ার সুযোগ থাকতো। এইবার আর সেই সুযোগ পাচ্ছেন না।
৪# বাইরে কোথাও গেলে এবার গাড়ির টিকিট ও রিসোর্ট পাইতে বেশ প্যারা খাওয়া লাগবে। প্রচুর চাপে বাসের টিকেট নাও পাইতে পারেন, পাইলেও হয়তো রিসোর্ট না পাইয়া বাসাতেই ফিরে আসা লাগবে।
৫# দুইটা বড় উৎসব একসাথে হওয়ায় জনপ্রিয় স্পটগুলোতে এত এত এত ভিড় হবে যে, ভিড়ের মধ্যে আপনার প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
৬# বইমেলা, বসন্ত উৎসব নাকি হাতিরঝিল? কোথায় যাবেন! এমন কনফিউশনে ভুগতে ভুগতে হয়তো আপনার সারাদিনই নষ্ট হইয়া যাবে। দুজনের মতের অমিলের কারণে ব্রেকাপও হইয়া যাইতে পারে।
৭# দুইটা উৎসব আলাদা করে দুই দিনে হইলে আপনার লাল ও হলুদ দুইটা পোশাকেরই সঠিক ব্যবহার হইতো। আপনার যে দুইটা পোশাকই আছে তাও সবাইকে দেখাইতে পারতেন। এবার এমন সুযোগগুলো একদম মাঠে মারা গেলো!
৮# কেনাকাটা, ঘোরাফেরা মিলিয়ে এই দুইটি বড় উৎসব দুইদিনে হইলে দেশের অর্থনীতির চাকা একটু বেশি করে ঘোরার সুযোগ ছিলো। একদিনে হওয়ায় দেশের অর্থনীতির চাকা কিছুটা স্থবির হয়ে যাবে।
৯# আগে ছবি তোলা, এডিট করা ও আপলোড করার জন্য দুই দুইটা দিন সময় পেতেন। এবার ছবি তোলা, এডিট করা, বাছাই করা ও আপলোড করার জন্য পাচ্ছেন মাত্র এক দিন। একদিনে কখন ছবি তুলবেন, কখনো আপলোড দিবেন, কতগুলোইবা আপলোড দিতে পারবেন!
১০# সবাইকে কি বসন্তের শুভেচ্ছা জানাবেন, নাকি হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন!? এই কনফিউশনের কোনো সমাধান নেই...
তবে এ বছর রয়েছে একটি বাড়তি অসুবিধা। বসন্ত বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে শুক্রবার হওয়ায় বাবা-মার কাছে ‘এক্সট্রা ক্লাস আছে, আসতে লেট হবে’ এই বহুল চর্চিত অজুহাতটি বলতে পারবেন না। ফলে আপনার প্রিয়তমের সাথে ‘এক্সট্রা ক্লাস’ও করা হবে না। কী নির্মমভাবেই না একটা এক্সট্রা ক্লাস মিস হইয়া গেলো!