প্রাচীনকাল থেকে গিফট দেওয়া নিয়ে আমাদের মাঝে কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস কাজ করে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে উপহারসামগ্রীর মোড়ক উন্মোচনের বেলা দেখা যায়, একই উপহার এসেছে অনেকগুলো। উপহার নিয়ে এমন প্রচলিত ভ্রান্তির বড় ধরনের শিকার হন কিশোর-তরুণ বয়সী ছেলেরা।
প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধবী, মামা-চাচা-খালা থেকে শুরু করে বাবা-মা, কোন ছেলেকে উপহার দেওয়ার বেলায় যেন তাদের সকল দৃষ্টি এসে নিবদ্ধ হয় মানিব্যাগ, বডি স্প্রে আর শেভিং কিটের উপর। সম্প্রতি eআরকির করা একটি কাল্পনিক জরিপে দেখা গেছে, ছেলেদের পাওয়া উপহারের ৯২.৪% উপহারই এই তিনটি পণ্যের মাঝে সীমাবদ্ধ। এতে করে তারা হয়ে পড়ছেন অবসাদগ্রস্থ। এই অবসাদ কাটিয়ে তোলার জন্য eআরকি নিয়ে এসেছে একটি ‘উপহার গাইডলাইন’। না, এটি কোন গাইড বই নয়। তরুণদের জন্য কী কী গিফট দেওয়া যেতে পারে তার একটি দিকনির্দেশনা মাত্র।
১# ধূমপায়ী ছেলেদের জন্য: গিফটের প্রাপক যদি কোন ধূমপায়ী ছেলে হয়, তবে তাকে লাইটার, ভেপ, সিগারেট কেস ইত্যাদি নানা ধূমপান সংক্রান্ত বস্তু গিফট দেয়ার অপশন থাকে। কিন্তু ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এবং ধূমপানে আগ্রহ বাড়ায় এমন কোন উপহার দেয়া মোটেও উচিত নয়। তবে স্মোকারদের একটি কমন সমস্যা, ক্রমাগত ধূমপানে তাদের ঠোঁটের কোমল আভা হারিয়ে গিয়ে কালচে রূপ ধারণ করে। তাই স্মোকার ছেলেদের জন্য আদর্শ উপহার হতে পারে ন্যাচারাল কালারের লিপস্টিক!
২# ব্যাচেলর ছেলেদের জন্য: ব্যাচেলর ছেলেদের বাজেট, সময় ও রান্নার অভিজ্ঞতা স্বল্পতার জন্য ডিমভাজিই সবচেয়ে সহজ সমাধান। এই গৎবাঁধা খাদ্যব্যবস্থায় বৈচিত্র আনতে গিফট করতে পারেন কেকা ফেরদৌসির মনোহর রান্নার সবকটি সিজনের ডিভিডি। এছাড়াও এক সপ্তাহের জন্য বাজার করে দিলে তিনি বাকি জীবন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ ও অনুগত থাকবেন। বাজেট বেশি থাকলে তাকে একটি ইনকিউবেটর গিফটও করতে পারেন। ডিম খেতে ইচ্ছা না করলে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করে মুরগির রেজালা রান্না করে খেতে পারবেন।
৩# সম্ভাব্য টাক ছেলে: অকালেই চুল হারানো ছেলেদের চুলের জেল গিফট করলে সে স্বভাবতই অপমানিত হতে পারে। চুল গজানোর কোন প্রোডাক্ট গিফট দিয়েও তাদের সেনসেটিভ মনে আঘাত দেয়া নীতিগতভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। বরং তাকে তার রুমে ঝোলানোর জন্য আবুল হায়াত, ভিন ডিজেল, জনি সিনস, জেসন স্ট্যাথাম, ডোয়াইন জনসনের পোস্টার গিফট করতে পারেন। চুল উৎপাদন থেমে গেলেই যে জীবন থেমে যায় না, সফল মানুষদের এসব পোস্টার থেকে তারা এমন পরোক্ষ মোটিভেশন পাবেন।
৪# বাসে দীর্ঘ সময় কাটানো ছেলে: শহরবাসী কোন ছেলে জীবনের সিংহভাগই কাটিয়ে দেয় জ্যামের মধ্যে বাসে বসে। এই সময়টিকে প্রোডাকটিভ করার জন্য বই, ম্যাগাজিন ইত্যাদি তো দেয়া যেতেই পারে, তাছাড়াও তাকে উলের সুতা ও কাঁটা দিলে তিনি নিজের শীতবস্ত্র নিজেই বুনে একজন ডিসকাউন্ট গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবেন।
৫# সাইক্লিস্ট ছেলে: সাইক্লিস্ট ছেলেরা নিয়মিত রোদে পুড়ে ঘামে ভিজে সাইকেল চালায়। তাদের আপনি বডি স্প্রে দিতে পারেন। কোন সমস্যা নাই। স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট দিলেও তিনি যথেষ্ট উচ্ছ্বাসিত হবেন।
৬# লম্বা ছেলে: লম্বা ছেলেদের টিশার্ট বা অন্যান্য পোশাক দিতে সাইজ মেলানোর ঝামেলায় পড়া খুবই স্বাভাবিক। এত ঝামেলায় না গিয়ে তাদের জন্য আদর্শ উপহার হতে পারে ব্যাথার বাম বা মলম। নিচু দরজা বা বাসের ছাদে মাথা ঠুকে, পা রাখার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা যানবাহনের সিটে বসে থাকতে থাকতে হাঁটুতে তীব্র ব্যাথা নিয়ে জীবনযাপন করেন। তাই এই মলম দিয়ে তাদের ব্যথার প্রশমনের পাশাপাশি তাদের অন্তরে বিশেষ ভালোবাসার স্থান আপনি দখল করতে পারেন।
৭# বইপোকা ছেলে: যারা প্রচুর বই পড়েন, তাদের বইয়ের কালেকশনও অনেক বড়। এবং তাদের বইয়ে ডুবে থাকার ব্যাপারটি এক্সপ্লয়েট করে অনেকেই তাদের সংগ্রহ থেকে অগুণিত বই হাপিশ করে দেয়। নতুন বই দেয়ার বদলে তাদের এই হারিয়ে যাওয়া বইগুলো উদ্ধার করতে যদি আপনি ‘টেকেন’ সিনেমায় লিয়াম নিসনের মতো নেমে পড়েন, তা হতে পারে আদর্শ উপহার।
৮# চাকরিজীবী ছেলে: চাকরিজীবী ছেলে মাত্রই লেদার বেল্ট, টাই কিংবা ঘড়ি পছন্দ করে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। বরং প্রতিনিয়ত বসের ঝাড়ি বা ক্লায়েন্টের ঝাড়ি থেকে শুরু করে অস্বাস্থ্যকর শিঙ্গারা সমুচা- প্রতিদিনই হজম করতে হয়। তাই হজম সহায়ক ট্যাবলেট হতে পারে তার জন্য খুবই ভালো গিফট। এছাড়াও নিজের ডেস্কে জুতা মোজা খুলে যেন রিল্যাক্স করতে পারেন, সেজন্য এক জোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল দিতে পারেন।
৯# স্বাস্থ্যসচেতন ছেলে: ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’- নীতিতে বিশ্বাস করা ছেলেদের জন্য গিফট দিতে টাইট হাতার মাসল দেখানো টিশার্ট বা প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট না কিনে তাদের দিতে পারেন তার রুমের জন্য একটি ফুল লেংথের আয়না। নিয়মিত নিজের মাসল দেখানো মিরর সেলফি তুলে মোটিভেশনাল ক্যাপশনসহ আপলোড করতে প্রতিদিন আর তাকে জিমের আয়না ব্যবহার করতে হবে না।
১০# পলিটিকাল ছেলে: যাকে গিফট দিচ্ছেন সে যদি রাজপথের লড়াকু সৈনিক হয়ে থাকে তাহলে তার জন্যে গিফটে আনতে হবে বৈচিত্র্য। হকিস্টিক, দা-বটি এসব অনেক পুরনো হয়ে গেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে উপহার হতে হবে হেলমেট। পাশাপাশি বড় ভাইয়ের সাথে যেন সে ভালো ছবি তুলতে পারে, সেজন্য দিতে পারেন ভালো ফ্রন্ট ক্যামেরাওয়ালা স্মার্টফোন। এতে করে তার রাজপথের পলিটিকাল ক্যারিয়ার হয়ে যাবে মসৃণ।