রবীন্দ্রনাথের জীবন নিয়ে হয়েছে নানারকম গবেষণা, তাঁর দীর্ঘ জীবনের বেশিরভাগ ঘটনা কিংবা তথ্যই আবিষ্কৃত হয়েছে। এমনকি তাঁর লেখা চিঠিগুলোও আর চিঠি নেই, তা হয়ে গেছে সাহিত্য; রবীন্দ্রনাথের সব প্রাইভেসি নষ্ট করে মানুষ সেই চিঠিগুলোও পড়ে ফেলেছে! কিন্তু এমন কিছু তথ্য নিশ্চয় থাকতে পারে, যা এখনো মানুষের জানতে বাকি আছে। সে সব তথ্য নিয়ে গবেষণা করার জন্য eআরকি ছাড়া কে-ই বা এগিয়ে আসবে বলুন! জেনে নিন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত এমন দশটি অজানা তথ্য!
১# রবীন্দ্রনাথই ছিলেন সেলফির আবিষ্কারক
সেলফি জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকেই অনেককে বলতে শোনা গেছে, সেলফির নাম সেলফি হওয়ারও অনেক আগে থেকে তারা সেলফি তোলেন। অনেকেই নিজেকে সেলফির আবিষ্কারক হিসেবে দাবি করতে চান। কিন্তু আপনারা জানেন কী, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ সেলফি আবিষ্কার করেছিলেন সেলফি শব্দ আবিষ্কারের আগে তো বটেই, মোবাইল ফোন আবিষ্কারেরও আগে! কোনো এক ট্যুরে যাওয়ার আগে তিনি লিখেছিলেন-
আর একলা গেলে একজনকে যে সেলফিই তুলতে হবে, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হয় না! রবীন্দ্রনাথও তা বলে দিয়ে বাহুল্য তৈরি করেন নি...
২# সেই যুগেই ফেক আইডি খুলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ছিল সময়ের চেয়ে অনেক, অনেক সামনে! ফেসবুক তো দূরের কথা, ইন্টারনেটের কথা বাদই দেয়া যাক, কম্পিউটারও আবিষ্কার হয়নি তখনো। অথচ সেই যুগেই রবীন্দ্রনাথ খুলেছিলেন ফেক আইডি। 'ভানু সিংহ' নামের এই আইডি দিয়ে তিনি বেশ কিছু লেখালেখিও করেছিলেন...
৩# স্টক করা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ
অনেকেই তাঁর প্রোফাইল স্টক করা হচ্ছে কিনা, এই নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। অনেকে স্টকারের উদ্দেশে কভার পিকচার দেন যাতে লেখা থাকে, 'তুমি আমার প্রোফাইল দেখতেছো?' অনেকে বায়োতে লিখে রাখেন 'গো অ্যাওয়ে ইউ ফা** স্টকার!' রবীন্দ্রনাথ কিন্তু শত বছর আগেই জানতেন, তাকে স্টক করা হবে শতবর্ষ পর। এজন্যই অজ্ঞাত স্টকারের উদ্দেশে তিনি শত বছর আগেই লিখে গেছেন--
৪# হানি ডাকের প্রবর্তনের আগেই রবীন্দ্রনাথ প্রেয়সীকে ডেকেছিলেন 'চিনি'
পাশ্চাত্যে অনেক বছর ধরে কিংবা এই যুগে আমরাও প্রিয় মানুষকে সুইটহার্ট বা হানি ডেকে থাকি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ প্রেয়সীকে মিষ্টান্নর নামে অর্থাৎ 'চিনি' বলে ডেকেছিলেন প্রায় একশ বছর আগেই! কোনো এক বিদেশী প্রেয়সীর সঙ্গে ফ্লার্ট করার সময় তিনি লেখেন--
৫# ক্রাশ খাওয়ার অনুভূতি নিয়ে প্রথম কে লেখেন? অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ!
এখনকার সময়ে আমরা ভাতের চেয়েও বেশি ক্রাশ খাই, সেই হাজারো ক্রাশ খাওয়ার অনুভূতি বর্ণনা করার চেষ্টা করে যাই নানাভাবে। ক্রাশ যেমন খাই, সেই অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে বিষমও খাই! অথচ রবীন্দ্রনাথ সেই কত বছর আগে ক্রাশ খাওয়ার অনুভূতি লিখেছিলেন দুর্দান্ত ভাষায়, নিজেই দেখুন--
৬# ওয়েদার ফোরকাস্ট নিয়ে সচেতন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ
আমরা যারা ঢাকা কিংবা বড় শহরগুলোতে থাকি, আমাদের আবহাওয়া সম্পর্কে কোনো মাথাব্যথা নেই! রোদের দিনেও ভারি কাপড় পরে বেরিয়ে যাই কিংবা বৃষ্টির দিনেও বের হয়ে যাই সঠিক প্রস্তুতি ছাড়াই! উপায় কী, আবহাওয়াই যে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং এর মত আনপ্রেডিক্টেবল! কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এমন ছিলেন না, ওয়েদার ফোরকাস্ট নিয়ে তিনি সচেতন নিজে যেমন থাকতেন, অন্যদেরকেও করতে চাইতেন। আবহাওয়া সম্পর্কে ভাই ব্রাদারদের সচেতন করেই তিনি একবার লেখেন--
৭# প্রোপোজ করতে ভয় পেতেন রবীন্দ্রনাথও!
যেসব প্রেমিকদের মনের কথা বলা হয় না বছরের পর বছর, তাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই! প্রতিবার প্রোপোজ করার এটেম্পট নেয়ার আগেই যারা ভাবেন, আজকে বলবোই, আজকে বলবোই, তাদের জন্য ভালো খবর হলো, কবিগুরুর অনুভূতিও ছিল অনেকটা এমনই! স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত মনের কথা বলতে ভয় পেতেন, ভয় কাটিয়ে উঠে কোনো একদিন প্রোপোজ করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে তিনি নিজেকে সাহস দেয়ার জন্য লেখেন--
৮# বড় হয়ে ঢাকার রাস্তায় 'কুবের' হতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
স্কুল কখনোই ভালো লাগতো না রবীন্দ্রনাথের! এমনকি ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে তাও ছেড়ে দিয়েছিলেন মাঝপথেই। মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা ছিল তার, বড় হয়ে তিনি নৌকার মাঝি হবেন। আর পূর্ববঙ্গের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা আর অসীম দূরদর্শিতা থেকেই ধারণা করা যায়, ঢাকার রাস্তায় নৌকা চালানো যে এক সময় একটি লাভজনক পেশা হবে, তা তিনি আঁচ করে ঢাকার রাস্তাতেই কুবের মাঝি হতে চেয়েছিলেন। মা কে নিজের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য জানিয়ে সেই কিশোর বয়সেই তিনি লেখেন--
৯# রিলেশনে সুখ-শান্তি না থাকলে ব্রেকাপের পক্ষপাতী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ
এই যুগেও আমরা সম্পর্ক একদম তেতো হয়ে গেলেও সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে অশান্তি নিয়েও ব্রেকাপ করতে ভয় পাই। অথচ রবীন্দ্রনাথ সেই একশ বছর আগেই বিশ্বাস করতেন, সুখ না থাকলে সুখের সন্ধানে মানে নতুন রিলেশনের দিকে যাওয়াই ভালো। তাঁর সঙ্গে রিলেশনে হ্যাপি না থাকায় একজন গার্লফ্রেন্ড ব্রেকাপ করতে চাইলে তিনি তাকে বাঁধা দেন নি। বরং লিখেছিলেন--
১০# পাওনাদারদের ওপর খুব বিরক্ত থাকতেন রবীন্দ্রনাথ
কবি সাহিত্যিক মাত্রই আর্থিক ঝামেলায় ভুগবেন, এটাই স্বাভাবিক। জমিদারের ছেলে হয়েও রবীন্দ্রনাথ সেই সমস্যায় কিছু কম ভোগেন নি। আর আর্থিক সমস্যায় বিপদে পড়ে ধারকর্য ছাড়া লেখক-কবিদের গতি কী! কিন্তু ধার শোধ করাটা যে হয়ে যায় আরো বড় বিপদ! রবীন্দ্রনাথ তা উপলব্ধি করেছেন হাড়ে হাড়ে! তাই তিনি পাওনাদারদের অনেকবার বলেছেন, 'শালা তোদের ধারটার শোধ করি একবার, এরপর তোদের দোকানে আর আইছি!' কিন্তু কবিগুরু তো আর তা আমাদের মত বলবেন না, তিনি বলেছেন তার মত করেই...