বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্রটি কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্টি ‘মাসুদ রানা’। পাঁচ দশকের বেশি সময় পার করে এখনো ডিটেকটিভ-থ্রিলার পাঠকদের আগ্রহ ধরে রেখেছে এই দুর্ধর্ষ বাংলাদেশি স্পাইকে। সম্প্রতি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া ঘোষণা দিয়েছে মাসুদ রানা চরিত্রটি নিয়ে একাধিক সিনেমা নির্মাণের। আর মাসুদ রানা চরিত্রের জন্য একেবারে নতুন মুখ খুঁজতে আয়োজন করা হয়েছে রিয়েলিটি শো ‘কে হবে মাসুদ রানা’।
সম্প্রতি এই রিয়েলিটি শো-এর অডিশনের কিছু ভিডিও ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। টুকরো সেসব ভিডিওতে দেখা যায়, মাসুদ রানা হতে চাওয়া তরুণদের নানান কটু বা আক্রমণাত্মক কথা বলে অপদস্ত করা হচ্ছে। কোন কোন প্রতিযোগীর সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের বিচারকদের আচরণ একটু বেশিই রূঢ় বলেই মনে করেছেন নেটিজেনরা। প্রতিযোগিতার বিচারক ইফতেখার আহমেদ ফাহমি, মোস্তফা কামাল রাজ, সাফায়েত মনসুর রানা, জাকিয়া বারী মম, শবনম ফারিয়াদের নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা।
তবে জনসাধারণের সমালোচনা পেলেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশংসাও কুড়িয়েছে ‘কে হবে মাসুদ রানা’। গোপন এক খবরে জানা গেছে, দেশের সকল প্রান্ত থেকেই জুনিয়রদের র্যাগ দিতে ‘কে হবে মাসুদ রানা’র অডিশনে পাঠাচ্ছেন সিনিয়ররা।
এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে দেশের শীর্ষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা এক পলিটিক্যাল সিনিয়র বলেন, ‘পোলাপানরে র্যাগ দিলে শরীরে আর ভাব আসে না। তার উপর অনেকে বলে, র্যাগিং নাকি ভালো না! কয়দিন ধরে বিকল্প খুঁজতেছিলাম। মাসুদ রানার প্রোগ্রামের কথা শুইনা সেইখানেই জুনিয়রগুলারে পাঠাইতেছি।’ বিচারকদের পারফরম্যান্সে তিনি সন্তুষ্ট কি না এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তর দেন, ‘তাদের পারফরম্যান্স ভালোই, বিশেষ করে ফাহমি ভাইয়ের কথা আলাদা করে না বললেই নয়। ভাই যে, ইয়ং লাইফে খুব ভালো র্যাগ দিতেন সেইটা তারে দেখলেই বুঝা যায়। তবে প্রত্যেককে যদি আরেকটু বেশি করে সময় দিত তাইলে খুব ভালো হইত।’
জানা গেছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বিরোধী নিয়ম সৃষ্টি এবং তার আংশিক প্রয়োগে অনেক সিনিয়রই জুনিয়দের র্যাগ দিতে পারেন না। তার উপর যেকোনো সময়েই ভিডিওর মাধ্যমে র্যাগিংয়ের মুহূর্তগুলো ভাইরাল হয়ে গেলে, সমালোচনার শিকারও হতে হয় অনেককে। এসব ঝুঁকি থেকে বাঁচতে তাই জুনিয়রদেরকে মাসুদ রানা কম্পিটিশনে পাঠাচ্ছেন সিনিয়ররা। এ বিষয়ে এক সিনিয়র বলেন, ‘কখন কোন ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়, তার কোন ঠিক নাই। তাই এইসব রিস্ক নিয়া লাভ কী? তার উপর মশা মেরে হাত কালো করার তো কোন মানে নাই! মাসুদ রানা প্রোগ্রামেই র্যাগ দিক। ঐ ফ্রি সময়ে বরং ফেসবুকে ‘র্যাগিংয়ের উপকারিতা’ শীর্ষক পোস্ট করা ভালো।’
অবশ্য সবাই এমন র্যাগিং পছন্দ করেননি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক পলিটিকাল সিনিয়র অডিশনের র্যাগিং-এর সমালোচনা করে বলেন, ‘এইটা কোন র্যাগ হইল? আমাগো ফার্স্ট ইয়ারের পোলাপানও তো ব্যাচমেটগুলারে এর থিকা কড়া র্যাগ দেয়!’ ভারতীয় রিয়েলিটি শো ‘রোডিজ’-এর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘রোডিজের র্যাগ ভার্সিটির র্যাগের কাছাকাছি ছিল। রোডিজের পুরান আমলের ভিডিওগুলা দেখে এখনো আমাদের ছেলেরা র্যাগিংয়ের হাতেখড়ি নেয়।’