যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শেষ হতেই সামনে চলে আসে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নাম। নির্বাচনের ভরা মৌসুমে বেহুদা কথা বলে জনপ্রিয় হুদা সাহেব নেটিজেনদের অগাধ 'প্রশংসায়' সিক্ত হয়ে অবশেষে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। পাবলিকের সুরে সুর মিলিয়ে তিনি বলেছেন 'আমাদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা নেওয়া উচিত'। ওদের ভোট গুনতে পাঁচ দিন লাগে, আমরা তিন মিনিটেই করে ফেলি, এমন মতামতও তিনি প্রকাশ করেন।
এ সুযোগে আমরাও একটু জেনে নেই, আমেরিকার আরও যে টি বিষয় শেখার আছে বাংলাদেশের কাছে।
১# এত বড় একটি নির্বাচন হয়ে গেল, অথচ আমেরিকার নির্বাচন কমিশনের কোন কর্তাকে টিভিতে দেখা গেল না! এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নামও অনেকে জানেনা, এটা অত্যন্ত লজ্জার। ট্রাম্পকে দেখলো, অথচ নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ট্রাম্প কার্ডকেই মানুষ দেখলো না।
২# আমেরিকার নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে ব্লেইম গেমে। এখানে শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন দল ভোট চুরির অভিযোগ এনেছিলো। অথচ বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারলে, বিরোধীদলেরই এইসব অভিযোগ তোলার কথা।
৩# তিনদিন ধরে জয় পরাজয় নিয়ে টানটান উত্তেজনা, এ কেমন নির্বাচন! নির্বাচন হবে কাট এন্ড ক্লিয়ার। দুদিন আগে থেকেই জানা যাবে ক্ষমতাসীন দলই জিততে যাচ্ছে।
৪# দিনে, রাতে, অনলাইনে এত মাধ্যমে কিসের ভোটগ্রহণ? হু? ভোট হবে খুবই কম সময়ে। এমনকি নির্বাচনের আগেই হয়ে গেলে সবচেয়ে ভালো...
৫# আমেরিকায় একটা মাত্র মৃত ভোটারের ভোট পড়ছে। তাতেই মিডিয়াগুলো কীভাবে হামলে পড়লো। অথচ বাংলাদেশের নির্বাচনী মডেল অনুযায়ী, মৃতদেরও রয়েছে সরকারি দলের ব্যালটে ভোট দেয়ার অধিকার।
৬# নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচন চলাকালীন কোন অ্যাসিস্ট্যান্ট ভোটার না রাখাও আমেরিকার অজ্ঞতার প্রমাণ। দেশের সুস্থ সবল কিংবা অসুস্থ, দুর্বল সর্বপরি সবার জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট ভোটার রাখার মানবিক শিক্ষা কেবল বাংলাদেশের নির্বাচনী মডেলেই আছে।
৭# আমেরিকার নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে দারুণ ঘাটতি ছিলো। বাংলাদেশের মত সভ্য দেশের মডেল থেকে শিক্ষা নিলে বিরোধী ফল কীভাবে এত প্রচারণার সুযোগ পায়?
৮# আমেরিকায় কেন্দ্র দখল করার কোনো প্রবণতাই সরকারি দলের মধ্যে দেখা যায় নাই। অথচ বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্রের এত বছরে সবসময় দেখে এসেছি নির্বাচনে কেন্দ্র দখলের গুরুত্ব। এত পুরানো ও প্রচলিত একটা ডেমোক্রেটিক স্কিলও আমেরিকার ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে দেখাতে পারে নাই।
৯# নির্বাচনে ক্লোজ কন্টেস্ট হওয়াই একটা নির্বাচনের ব্যর্থতা প্রকাশ করে। নির্বাচনের ফলাফল হবে একতরফা। সামান্য একটা নির্বাচনে এত সাসপেন্স কেন?
১০# ক্ষমতাসীন দলের কোনো ছাত্রসংগঠন না থাকা আমেরিকার মতো দেশের জন্য খুবই লজ্জাজনক। শুধু আমেরিকা না, সারা বিশ্বের সব দেশেই এটা থাকা উচিত।