শিক্ষা মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেই শিক্ষা পেতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় ছাত্র-ছাত্রীরা। স্কুল-কলেজের ক্লাসরুমের পাঠদানে অনেকে সন্তুষ্ট হতে পারে না বলে তারা ছুটে যায় বিভিন্ন কোচিংয়ে। বাংলাদেশের আইনে ‘কোচিং’এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে কোন শিক্ষক বা শিক্ষকবৃন্দ অর্থের বিনিময়ে পাঠদান করলে তাকে কোচিং বলা হবে। তাই অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা দেয়া বন্ধ করা মানেই কোচিংয়ের কার্যক্রম বন্ধ বিবেচনা করা যায়। কোচিং সেন্টার বন্ধ না করে যদি কোচিংগুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে স্পন্সর হিসেবে নিয়ে ক্লাসরুমে বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করে? এমনই এক কাল্পনিক ভাবতে চেষ্টা করেছিল eআরকির কোচিং গবেষক দল!
১# স্পন্সর্ড কোচিংয়ের ক্লাসরুমে পাঠদান চলবে স্থায়ী ও মজবুত প্লাস্টিকের টেবিলে। ক্লাসের শুরুতেই হয়তো হঠাৎ করে নিভে যাবে ক্লাসরুমের বৈদ্যুতিক বাতিটি। অন্ধকারে শিক্ষার্থীদের কলরবের মাঝে হঠাৎ বেজে উঠবে, ‘আলোর অভাবে শিক্ষায় ব্যাঘাত? আর না আর না! এসে গেছে উচ্চ ক্ষমতার এনার্জি লাইট। তিনশ টাকার এনার্জি লাইট মাত্র একশ টাকায়!’
২# সকালবেলার প্রথম ক্লাসে শিক্ষক শুরু করবেন ক্লাস নেয়া। কিন্তু শিক্ষা মাথায় যাওয়ার আগে তার মর্নিং ব্রেথ নাকে পৌছায় শিক্ষার্থীদের। স্বাভাবিকভাবেই তারা খানিকটা অস্বস্তিতে ভুগবেন। ১৫ মিনিট পরেই হঠাৎ দেখা যাবে মাউথ ফ্রেশনার কোম্পানির একজন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত। সাথে একজন দাঁত বিশেষজ্ঞ বিশেষ ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলে কী কী সুবিধা পাবেন, কীভাবে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের আরো কাছে আসতে পারবেন, সেসব জানানো হবে।
৩# মনে করুন, কোচিং সেন্টারে পরীক্ষার পড়া শিখে আসতে ভুলে যাওয়া অনেক শিক্ষার্থী বেঞ্চে সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তরগুলো লিখে রাখছে। বেঞ্চে এই শিল্পকর্ম সাধনের সময় হয়তো কোন স্টেশনারি কোম্পানির প্রতিনিধি তাদের কলম এগিয়ে দিয়ে বলবেন, আমাদের কলমের গাঢ় কালি দিয়ে লিখলে উত্তর থাকবে স্পষ্ট, খুঁজে পাবেন সহজেই!
৪# পড়াবার মাঝখানে হুট করে শিক্ষক কিছু ভুলে যেতেই পারেন। তার হিসাব নাও মিলতে পারে। তখনই কোন মোবাইল অপারেটর কোম্পানি এসে উচ্চগতির ফোর জি, ফাইভ জি ইন্টারনেটের প্যাকেজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন। আর ইন্টারনেটেই মিলবে সকল হিসাব।
৫# কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া সবাই ক্লাস করবে না, সেটাই স্বাভাবিক। আর বিনা বেতনের স্পন্সর্ড কোচিং থেকে যে অনেকে পালাবে, তা অনুমান করতে বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। সেই কোচিং পালানো শিক্ষার্থীদের জন্যও থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। কোচিংএর পাশে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দেয়ার জন্য থাকবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সৌজন্যে তৈরি বিশেষ প্যাভিলিয়ন। এছাড়া ফাঁকি দিয়ে যদি কেউ কোন রেস্টুরেন্টে যেতে চায়, তাদের জন্য থাকবে বিভিন্ন স্পন্সর্ড রেস্টুরেন্ট থেকে বিশেষ ছাড়ের সুব্যবস্থা!