এটা মোটামুটি স্বীকৃত একটা ব্যাপার যে, ব্রাজিলের সাপোর্টার হলে আপনাকে আর্জেন্টিনা-বিরোধী হতে হবে। আবার আপনি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হলেও একই ব্যাপার—আপনাকে হতে হবে ব্রাজিল-বিরোধী। এই দুটো দলের ক্ষেত্রে আপনি কখনোই নিরপেক্ষ হতে পারবেন না।
আবার ধরুন, পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্টরা মনে করে প্রাইভেট ভার্সিটির স্টুডেন্টরা কোনো স্টুডেন্টই না—এরা বাপের টাকায় লেখাপড়া করে। সবাই আলালের ঘরের দুলাল।
ওদিকে প্রাইভেট ভার্সিটির স্টুডেন্টরা বলে, পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্টরা খ্যাত এবং গাঁইয়া। এরা ঠিকমতো কথাটাও বলতে পারে না।
চোখ-কান খোলা রাখলে আপনি এরকম হাজারো পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা শুনতে পারবেন। উদাহরণ দিচ্ছি।
যেমন ধরুন, হিজাবকারীদের মত হচ্ছে ইভটিজিংয়ের জন্য মেয়েদের আধুনিক ধারার ছোটো পোশাক দায়ী। ওদিকে ছোটো পোশাক যারা পরছে, তারা বলছে পুরোপুরি উল্টো কথা—হিজাবধারীরাই আসলে মূল শয়তান। এরা ভালোর বেশ ধরে থাকে।
একটা কমন পরস্পরবিরোধী ব্যাপার আবার এই রকম: মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চাকুরে এবং বিসিএস ক্যাডার—এই দুই দল পরস্পরের কথা শুনলেই নাক সিটকানোর একটা অদ্ভুত ভঙ্গি করে।
তবে এই জেনারেশনের বহুলচর্চিত পরস্পরবিরোধী মতটা কিন্তু ওই একটু ইয়ে, মানে একটু প্রেমঘটিত আর কী! খুলে বলছি।
সিরিয়াস ধরনের কবিরা এমন টাইপের কথা প্রায়ই বলে, ‘বালিকা, তোমার প্রেম আজ কর্পোরেট কোনো ব্যক্তির টাকার কাছে বন্দী।’ এই কবিদের ধারণা, কর্পোরেটরা ভালোবাসতে পারে না। তাদের মন বলতে কিছু নেই। তারা কোনো নারীকে ভালোবাসে না, ভালোবাসে শুধু নারীর শরীরকে।
ওদিকে কর্পোরেটরা আরও এক ডিগ্রি উপরে। তারা বলে, ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেলেই শুধু মানুষ কবি হয়। এসব কবিদের সবচেয়ে বড় উপাধি হচ্ছে— 'লুইচ্চা'। নারী ছাড়া এরা কিছুই লিখতে পারে না।
… আমি জানি না, আমরা কেন এতটা পরস্পরবিরোধী! অন্যের প্রফেশনের প্রতি ন্যূনতম সম্মানবোধটাও আমাদের নেই। আমরা নিজেরা যা করি, সেটাই ঠিক, বাকি সবাই ভুল—এই ধারণা নিয়েই আমরা বেঁচে আছি। তবে এতে আমাদের সমস্যা হয় না। কারণ দিনশেষে সব আমরা-আমরাই তো!