ভুয়া করোনা টেস্টের রিপোর্ট প্রদানের দায়ে গ্রেফতার করা হলো জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে। আজ খবর এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, অ্যাপ্রোন পরেই পুলিশ হেফাজতে যাচ্ছেন তিনি।
স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন জাগে, জেলের বাইরেই ডাক্তার হিসেবে দায়িত্বের অপব্যবহার করেছেন যিনি, জেলে গিয়ে তিনি অ্যাপ্রোন দিয়ে কী করবেন? এ ব্যাপারে জনৈক ফেসবুকার হালকা স্টকহোম সিনড্রোমমাখা কন্ঠে বলেন, 'সমালোচকেরা এখানে শুধু তার দোষটাই দেখলেন। কিন্তু তার ভেতরের লুকায়িত মানবিকতাটা কেউ দেখার চেষ্টা করেনি। হয়তো জেলে গিয়েও আসামীদেরকে চিকিৎসাসেবা দিতে চান এই মহিয়সী।'
অন্য একজন বলেন, 'জেলে থাকা আসামিরাও যে করোনা ঝুঁকিতে আছে, সেটা ডা. সাবরিনা ছাড়া আর কেউই বুঝতে পারেনি। হয়তো তার লক্ষ্য ভিন্ন। ভুয়া করোনা টেস্ট হয়তো করেছেন জেলে যাওয়ার জন্যই। জেলে ঢুকে অবহেলিত আসামীদের করোনা টেস্ট নিশ্চিত করবেন তিনি। দুর্নীতির যুগে এরকম একজন মানবতাবাদী ডাক্তারের উদ্যোগ এদেশের বুকে সত্যিই আশা জাগায়।'
এদিকে অ্যাপ্রোন পরিহিত ডাক্তার দেখে জেলে থাকা এক আসামী আবেগাড়িত হয়ে বলেন, 'সাবরিনা আপারে দেইখা চোখে পানি চইলা আইলো। নিজে ধরা খাইলেও আমাগো কথা একদমই ভুইলা যাননি। তাই আমাগো করোনার টেস্ট করানোর লাইগা অ্যাপ্রোন পইরাই আমাদের মাঝে ছুইটা আইছেন। আমরা নিশ্চিত, আপায় টেস্ট করালে আমাগো কারো করোনা হইব না।'
পকেটমারের দায়ে জেলে থাকা এক ছোকরা 'ডাক্তার আসামি' দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে নেইমারের মতো মাটিতে শুয়ে পড়েন। একটু পর উঠে বসে বলেন, 'ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারগো জেলে দেখলে ভালো লাগে রে ভাই। ফিল হয় যে আমগো স্ট্যাটাসটাই উপ্রে উইঠা গেছে। এই ডাক্তার হইতে পারি নাই দেইখা বাসাত্তে বাইর কইরা দিল, এরপর পকেটমার হইলাম। ভাগ্যের খেল দেহেন, ডাক্তারও যেই জেলে, আমিও সেই জেলে।'
এদিকে একদল তরুণ মানবতাবাদী ডা. সাবরিনার সাথে জেলে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করে ফেসবুকে নিজেই নিজেদের অপরাধের বিবরণ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের ইচ্ছা, কয়েকটা দিনের জন্য হলেও যেন তাদের ডাক্তার সাবরিনার সাথে হাজতে রাখা হয়। এরকম অদ্ভুত ইচ্ছা সম্পর্কে জানতে চাইলে এক তরুণ জানান, 'দুর্নীতির দায়ে মানবতাবাদী ডাক্তার সাবরিনার আজীবন জেল হয়ে গেলে তো আর তাকে কখনো দেখতে পাবো না। তাই এই মহিয়সী নারীকে একবার হলেও কাছ থেকে দেখার উদ্দেশ্যে নিজের অপরাধ স্বীকার করে যাচ্ছি, যাতে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে ডাক্তার সাবরিনার সাথে রাখে।'
তবে সবাই যে স্টকহোম সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছেন, এমনটা নয়। জেলের এক বৃদ্ধ আসামীই যেমন গলায় আতঙ্ক নিয়ে বললেন, 'এই মেয়ে কি জেলেও ভুয়া করোনা টেস্ট করাইব? মাফ চাই, আরও কয়েক বছর সাজা বাড়ায় দেন পারে। কিন্তু উনার কাছে করোনা টেস্ট করামু না।'