জামালপুরে শুরু হয়েছে জামাই মেলা। চলবে তিনদিন ধরে৷ এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে দেশের নানান প্রান্ত থেকে বিবাহ ইচ্ছুক নারীরা ছুটে যাচ্ছে জামালপুরে। উদ্দেশ্য, জামাই মেলায় গিয়ে পছন্দ মত জামাই কিনে ফেলা।
সিরাজগঞ্জের মেয়ে নুসরাত বলেন, 'বয়স হয়ে যাচ্ছে তবুও আমার বিয়ে হচ্ছে না। এই ছেলে দেখাদেখি করে বিয়ের সিস্টেম পুরাতন হয়ে গেছে। হুট করেই পেলাম দারুণ এই মেলার খবর! এজন্য যাচ্ছি জামালপুর। ভালো জামাই কিনেই ঘরে ফিরবো।'
শুধু অবিবাহিত না, যাচ্ছেন বিবাহিত নারীরাও। তারা কিনতে ইচ্ছুক নিজের জামাই থেকে বেটার কোয়ালিটি ও উন্নত ব্রান্ডের জামাই। এরকম এক নারী মনীষা eআরকি প্রতিবেদককে জানান, 'আমি শুনেছি জামাই মেলায় ভালো কোয়ালিটির উন্নতমানের জামাই পাওয়া যায়৷ আমার জামাইয়ের তেমন কোনো ফিচারই নেই বলা চলে। আমি আমার জামাই বদলে ইলেকট্রনিক জামাই নিতে চাই। যেটা একবার চার্জ দিলে বেশি কাজ করবে। সারাদিন সারারাত কাজের ওপর থাকবে।'
আরেক নারী জানান, তার ইচ্ছা রান্না পারে এমন জামাই কেনা। তিনি আমাদের প্রতিবেদকের কাছে আরো জানতে চান, জামালপুরের জামাই মেলায় অ্যাপল বা স্যামসাং ব্রান্ডের জামাই পাওয়া যাবে কিনা।
এই সংবাদে চুড়ান্ত ডিপ্রেশনে ভুগছে স্বামীরা। তাদের দাবি, এই ধরনের মেলা বন্ধ করে দিতে হবে। এটা তাদের সংসার ভেঙে দেবে বলেই তারা ধারনা করছে। এ রকম এক স্বামী জানান তার স্ত্রী গহনা বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে জামালপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে ভালো স্বামী ক্রয়ের উদ্দেশ্যে৷ এমনকি বড় ছেলেটাও তার আম্মাকে বলেছে, ভালো বাবা কিনে আনবা।
একজন স্বামী জানান, 'আমার ধারণা নতুনটা কেনার পর আমাকে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিবে। আমি খুব টেনশনে আছি।' আরেক স্বামী বলেন, 'আমি অন্য প্লান করেছি। আমিও জামালপুর গিয়ে নিজেকে ভালো কোনো মেয়ের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করব।' তবে এ সময় তিনি কিঞ্চিৎ চিন্তিত হয়ে আমাদের প্রতিবেদকের কাছে জিজ্ঞেস করেন, 'ঐ মেলায় কি অর্গানিক জামাই বিক্রি হয় নাকি সব ইলেকট্রিক জামাই?’ আমরাও ঠিকভাবে না জানার কারণে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি।
পরে আমাদের প্রতিবেদক ভালোভাবে খোজখবর করার জন্য জামালপুরের জামাই মেলায় গিয়ে দেখে, বউ বাজারে যেমন বউ বিক্রি হয় না, জামাই মেলাতেও জামাই বিক্রি হয় না। মেলা উপলক্ষে এই অঞ্চলের বিবাহিত নারীরা তাদের স্বামীদের নিয়ে নিজেদের বাবা-মায়ের কাছে বেড়াতে আসেন, এই সুবাদে এই মেলার নাম এখন জামাই মেলা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী গোপালপুর মেলার প্রচলন শুরু হয় বৃটিশ আমল থেকে। গোপালপুর বাজারে ছিল একটি বিরাট বটবৃক্ষ। সেই বটবৃক্ষের নিচে বারুনি স্নান উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জমায়েত হতো সেখানে। সেই উপলক্ষে সেখানে মেলা বসতো। পরবর্তীতে হিন্দুদের পাশাপাশি এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও সেখানে মেলা বসাতে শুরু করে। সেই থেকে মুসলমানরা গোপালপুর মেলাকে ইসলামি মেলা নাম দিয়ে প্রতিবছর বাংলা ১ চৈত্র এই মেলার আয়োজন করা শুরু করে। তবে যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসা এই মেলা এখন আর ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত নয়। জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গোপালপুর মেলা এখন সবার জন্য উন্মুক্ত এবং সার্বজনীন। প্রতিবছর ১লা চৈত্র থেকে শুরু হয়ে ৩রা চৈত্র পর্যন্ত চলে এই মেলা।
মেলা উপলক্ষে বাড়ির মেয়ে ও জামাইকে দাওয়াত করার প্রচলন রয়েছে এই এলাকায়। মেলা উপলক্ষে এই অঞ্চলের বিবাহিত নারীরা তাদের স্বামীদের নিয়ে নিজেদের বাবা-মায়ের কাছে বেড়াতে আসেন। এই সুবাদে এই মেলার নাম এখন জামাই মেলা।
এই তথ্য জানতে পেরে হতাশায় মুষড়ে পড়েন মেলায় জামাই কিনতে আসা নারীরা। এক নারী আমাদের জানান, ‘হুদাই এতদূর আসলাম! সেই পুরাতন অকম্মা লো কোয়ালিটির জামাই নিয়েই থাকতে হবে।’
এ সময় তার চেহারায় দুঃখের ছাপ ফুটে ওঠে, পাশে দাঁড়ানো তার স্বামীর মুখে হাসি ফুটে উঠতে দেখা যায়।