বর্তমান বাংলাদেশকে বলা হয়, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। বর্তমান সরকার বাংলাদেশের উন্নতির জন্যে যে ‘ভিশন-২০২১’ নিয়েছে তার ফলাফল স্বরূপ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি ঈর্ষনীয়। তবে আমাদের বর্তমান সামাজিক ও অনলাইন প্রেক্ষাপট যখন গুজব এবং আতঙ্কে জর্জরিত ঠিক সেসময়েই শান্তির সুবাতাস নিয়ে এলো একটি সংবাদ, বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে আমাদের জাদুর শহর, প্রাণের শহর, ঢাকা। লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিস্ট গ্রুপের ইকোনোমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘এটা আমাদের সরকারের সাফল্যের মুকুটের নতুন একটি পালক হিসেবে যোগ হলো। আমাদের এভাবে জনগণের সেবা করার সুযোগ করে দেবার জন্যে ঢাকার সবাইকে ধন্যবাদ!’
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অপরাধ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার বিবেচনায় বিশ্বের ১৪০টি শহরের ওপর জরিপ চালায় ইকোনমিস্ট। সংস্থাটি বলছে, বাস অযোগ্য শহরের র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অপরাধ, নাগরিক অশান্তি, সন্ত্রাস অথবা যুদ্ধ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার দামেস্ক, দ্বিতীয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। খবরটি প্রকাশিত হবার সাথে সাথেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার দ্বিতীয় হবার খবরে প্রায় সকলেই খুশি হলেও, মিরপুরবাসীর একাংশ এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
জনৈক মিরপুরবাসী বলেন, ‘জিনিসটা আমাদের প্রেস্টিজে লাগছে! আমাদের এতো চেষ্টার পরেও যদি এভাবে সেকেন্ড হয়, তাইলে ব্যাপারটা আমাদের জন্যে অপমানজনক।’ তিনি জানান, ‘ধানমন্ডি এবার আমাকে বেশ চমকে দিয়েছে। রাস্তা ভালো থাকার পরে তারা যানজট দিয়ে সেটা যেভাবে পুষিয়ে দিয়েছে, সেটা এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট! ইম্প্রেসিভ!’ ঢাকার অন্যান্য অঞ্চলের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ‘মালিবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও জায়গাগুলার ওপর ভরসা ছিলো। আমাদের মতো তাদেরও তো একটা সুনাম আছে রাস্তায় পানি জমার, রাস্তা খারাপ থাকার, তবু যদি রেজাল্ট এমন আসে তাইলে বুঝতে হবে, এখানে বিশেষ কোন চক্রান্ত আছে!’ বক্তব্যর এ পর্যায়ে তিনি হতাশায় কাঁদতে শুরু করলে তার সাথে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে এ প্রসঙ্গে আরেকজন মিরপুরবাসীকে পাওয়া গেলো যিনি আশাবাদীর দলে। তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জানান, ‘এটা তো আমাদের জন্যে সুসংবাদ! চেষ্টা করলে আমরা প্রত্যেক বছরই প্রথম হতে পারবো!’ কীভাবে পারবো সে পথও তিনি বাতলে দিলেন। তিনি জানান, ‘আমাদের মিরপুরের মতো ঢাকার অন্যান্য অঞ্চলেও কন্সট্রাকশনের কাজ বাড়ায় দেন, মেট্রোরেলের কাজ শুরু করে দেন। মেট্রোরেলের সুযোগ না থাকলে খালি রাস্তা দেখে একদিন এমনিই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে দিতে পারেন। আরো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা চাইলে ফ্লাইওভার বানানোর কাজও শুরু করে দিতে পারেন। তাহলেই দেখবেন, গত বছরের মতো আবারও আমরা প্রথম হতে পারবো!’ তিনি প্রত্যয়ী কন্ঠে জানান, ‘জানেনই তো, ওয়ান ম্যানস ট্র্যাশ ইজ অ্যানাদার ম্যানস ট্রেজার। এতো সহজেই ধৈর্য্য হারালে কি হবে!’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের দিকে যেন এটি এক রকম প্রচ্ছন্ন হুমকি।
অন্যদিকে বসবাসের অযোগ্য তালিকার সবচেয়ে নিচের অবস্থানে লাগাতার কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়ার শহর মেলবোর্নের অবস্থান দখল করেছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় শেষ স্থান দখল করে লজ্জায় ডুবিয়েছে বাসিন্দাদের।