বিশ্বকাপ ফুটবল--পৃথিবীর সবচেয়ে বর্ণিল উৎসব! ফিফা র্যাংকিং-এ বাংলাদেশের অবস্থান যাই হোক না কেন, বিশ্বকাপে কখনো না খেলা দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বকাপ উন্মাদনা যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি, সে তালিকায় বাংলাদেশ উপরের দিকেই। বিশ্বকাপের বাঁশি বাজার আগেই এ দেশের ছাদগুলোতে দেখা যায় সমর্থিত দলের পতাকা, মানুষের ভিড়ে শার্ট, কামিজ আর পাঞ্জাবির চেয়ে প্রিয় দলের জার্সি পরিহিতদেরকেই দেখা যায় বেশি! চায়ের দোকান থেকে ড্রইং রুম, সবখানে একটাই আলোচনা, বিশ্বকাপ!
বিশ্বকাপ থেকে সকল বড় বড় দল বাদ পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ উন্মাদনায় যখনই ভাটা পড়তে শুরু করেছিল ঠিক তখনই পুরান ঢাকার কলতাবাজারে ছোট্ট এক গলিতে সেই উন্মাদনা যেন নতুন জোয়ারে ভাসলো। নিভে যাওয়ার আগে পুরান ঢাকায় আরও একবার জ্বলে উঠলো বিশ্বকাপ নানান রঙে, বিশ্বকাপ goal-e তে!
চার বছর আগে ২০১৪ সালে ব্রাজিলে আয়োজিত বিশ্বকাপের সময় ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভ এবং জানালা বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড কাপ গোল-ই ফেস্ট’। একদিনের সেই বর্ণিল উৎসবে পুরান ঢাকার কলতাবাজারের লবণ গলি মেতেছিল বিশ্বকাপের এমনই এক উন্মাদনায় যে এরপর সেই গলির নামও বদলে হয়ে যায় ‘বিশ্বকাপ গলি’। চার বছর পর আবারও রাশিয়ার বিশ্বকাপে ঘটে যাওয়া নানা ঘটন-অঘটনের মাঝেই বাংলাদেশের এই গলিকে আবারো রঙ তুলিতে সাজিয়ে নতুন রুপ দিয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড কাপ গোল-ই ফেস্ট- ২০১৮’।
eআরকি ডটকম, জানালা বাংলাদেশ ও থাউজেন্ড মাইলস ক্লাব-এর উদ্যোগে গত ৭ জুলাই, শনিবার কলতাবাজারের সেই ‘বিশ্বকাপ গলি’ মুখর হয়ে ওঠে বিশ্বকাপের ডামাডোলে। দিনভর গ্রাফিতি, স্ট্রিট আর্ট, ফুটবল ও সাইকেল নিয়ে নানান কারিশমা থেকে শুরু করে দৃষ্টিনন্দন কসপ্লে, রঙ খেলা ও নাচে-গানে মুখর হয়ে থাকে গলিটি। কেউ মাথায় সোনালি রঙ মেখে সেজে আসে নেইমার, কোথাও দেখা যায় আর্জেন্টিনার জার্সি পরে আড্ডা দিচ্ছে আমাদের ‘মেসি’রা। নিজের পছন্দের ফুটবল দলের জার্সি পড়ে কিংবা নিজের পছন্দের খেলোয়াড় সেজেই চলে আসে রঙ করতে।
সকালেই শুরু হয় গলির দেয়ালে গ্রাফিতির কাজ, বিকাল নাগাদ পুরো গলির দেয়াল রাস্তা সবকিছু উৎসবের রঙে রাঙিয়ে তোলে এক ঝাঁক আঁকিয়ে, কার্টুনিস্ট ও স্বেচ্ছাসেবকেরা। রাস্তা, দোকানের শাটার কিংবা বাড়ির গেট, কিছুই রেহাই পায়নি এই উৎসবের রঙ থেকে। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেও রঙ মেখে রঙিন হয়ে একাত্ম হয় এই উৎসবে।
গ্রাফিতি শেষে কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে ২০১০ সালের বিশ্বকাপে কোনানের সাড়া জাগানো গান ‘ওয়েভিং ফ্ল্যাগ’ ও শাকিরার ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানের তালে হয় মন মাতানো ফ্ল্যাশমব। ফ্ল্যাশমব শেষে একটি ছোটখাটো হিউম্যান টাওয়ারও তৈরি করে ফেলে উদ্যমী স্বেচ্ছাসেবকদের দল, বিশ্বকাপের মাঠে একদিন বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরার প্রত্যয় নিয়ে তারা তুলে ধরে একটি রেপ্লিকা বিশ্বকাপ!
ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ-এর অফিসিয়াল পেজে ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে গোল-ই ফেস্টের ছবি। বিশ্বকাপের মাঠে না থাকলেও বিশ্বকাপ উন্মাদনায় পিছিয়ে নেই লাল সবুজের দেশ, গোল-ই উৎসব যেন পৃথিবীর উদ্দেশ্যে এমন এক বার্তা!
এই ইভেন্টে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নেয় কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবকরা এবং কার্টুন পিপলের কার্টুনিস্টরা। উৎসবের সহযোগিতায় ছিল খুশবু, উইংস এবং নিপ্পন পেইন্ট।
Goal-E উৎসবের রঙিন গলি চট করে দেখে নিতে পারেন এখান থেকে--
আরও দেখুন--