পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের দাবিতে সভা, সেখানে এই নারী কী করছেন যদিও তা জানা যায় নি

১৪৪৩ পঠিত ... ২১:১১, আগস্ট ২৩, ২০১৭

আমরা প্রায়ই ফেসবুকে, পেপারে, টিভিতে নারী নির্যাতনের সংবাদ দেখে থাকি। কিন্তু দেশের আনাচে কানাচে, অলিতে গলিতে, ঘরেতে বাহিরে যে পুরুষরা নির্যাতিত হয় সে সংবাদ কি আমরা পাই? পাই না। এসব মর্মান্তিক (!) খবর আমরা মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় না পেলেও পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন নামে একটি সংগঠন এ বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেছে।

গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘নীরবে কাঁদে পুরুষ দেখার কেউ নাই, পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন চাই’ টাইটেলে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় তারা বিভিন্নভাবে পুরুষ নির্যাতিত হওয়ার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন।

পুরুষ নির্যাতন বিরোধী এই সভায় জনৈক নারী কী করছেন, তা অবশ্য জানা যায় নি!

পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি শেখ খায়রুল আলম বলেন, 'আমরা নারী নির্যাতনের কথা বলি, আন্দোলন করি। পুরুষ নির্যাতনের কথা বলি না। অনেক পুরুষ বউয়ের যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন, ঝাড়ুর বাড়ি খেয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদেন। কিন্তু পুরুষদের বিষয়টি দেখার কেউ নেই। বিষয়টি হয়তো হাস্যরসের সৃষ্টি করছে। কিন্তু বিষয়টি প্রচারে না আসলেও সত্য। অনেক পুরুষ চক্ষুলজ্জায় বিষয়টি গোপন রাখেন।’

তিনি বলেন, 'শুধু বাসা বাড়িতেই নয়। রাস্তায় ও পুরুষরা নির্যাতনের স্বীকার হন। বাসে, রাস্তায়, ট্রেনে, অফিসে। অ্যাডামটিজিং এর স্বীকার হন। অন্ধকার গলিতে ঢুকলেই প্যান্টের জিপার ধরে টানাটানি করা হয়। আমি বলছি না এগুলা মেয়েরা করে, বেশিরভাগই ছেলেরাই করে। বাসায় মায়ের জুতার বাড়ি, বোনের টিটকারি, বউয়ের ঝাড়ুর বাড়ি ও রাস্তায় অ্যাডামটিজিং এর স্বীকার হয়ে আমাদের পুরুষ ভাইয়েরা দিনের পর দিন কেঁদে কেঁদে বালিশ ভেজাবেন এটাতো আমরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারি না। কান্না আসলেই কাঁদতে পারি না। কারণ কবি বলেছেন, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কাঁদতে নেই!'

এ সময় এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেঁকো ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে বলেন, 'আমাকে তো বাসায় বউয়ের পাশাপাশি অফিসে বসকেও তার কালো কাঁচে ঘেরা অফিসে খুশি করতে হয়। খুশি করতে না চাইলে বা না পারলে তিনি আমাকে নায়ক কাজী মারুফের সম্মুখীন করার হুমকি দেন এবং আমার বেতন কেটে রেখে দেন।'

খায়রুল আলম মুখ খুলে কিছু বলতে গেলেই এক সুদর্শন, সুঠাম দেহের পুরুষ ভেউভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে দাঁড়িয়ে যান এবং ফ্যাচফ্যাচ করে বলতে থাকেন, 'আমার নাম মোখলেস। আমি হোপলেস ফাউন্ডেশনে কাজ করি। কাজের জন্য আমাকে প্রতিদিনই বাসে যাতায়াত করতে হয়। প্রতিটা দিন আমাকে শ্লীলতাহানির স্বীকার হতে হয়। সামনের সিটে হাত রাখলে দাঁড়ানো যাত্রী আমার হাতের উপর হাত রাখে, দাঁড়িয়ে থাকলে আমার সারা গা টাচ করে চলে যায়। আমার কান্না চলে আসে। সেদিন এক মেয়ে পাশে বসে আমার জিম করা বুকের দিকে বিশ্রী ভঙ্গিতে তাকিয়েছিলো। আরেকদিন পাশের সিটের আংকেল ঘুমানোর ভান করে আমার কাধে ঢলে পড়ে, কনুই দিয়ে আমার বুকে লাগায় বারবার, আমার হাটুতে হাত রাখে। আমি দুটি ঘটনাই ভিডিও করে ফেসবুকে ছাড়ি। কিন্তু সবাই হাহা রিঅ্যাকশনে ভরিয়ে দেয় আমার পোস্ট গুলা। এখন আমি কাউকে মুখ কি প্রোফাইল পিকচারও দেখাতে পারি না।'

এ পর্যায়ে সুঠাম দেহের ভদ্রলোক আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে সবাই তাকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শান্ত হয়ে এলে খায়রুল আলম বলতে থাকেন, 'এরকম আরো হাজার লাখো ভাই এমন পরিস্থিতির স্বীকার হচ্ছে। দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে অনেক আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন রোধে কোন আইন নেই। স্বামীকে সামান্য (!) অপরাধে শায়েস্তা করতে স্ত্রীরা যৌতুক-নারী নির্যাতনের মামলা দিচ্ছেন। খেলা দেখতে গেলে রিমোট পাওয়া যায়না। সারাদিন টিভিতে টিভি সিরিয়াল চলতে থাকে। মাঝেমধ্যে তারা গেম অব থ্রোনস, ব্রেকিং ব্যাড, প্রিজন ব্রেক আর ফ্ল্যাশ দেখলে অসুবিধা টা কোথায়! এসব দেখলেই তো আর ঝগড়া গুলো হয় না, আমাদেরও স্ত্রীকে মারধোর করতে হয় না। মারলেই তো বলেন আমরা নাকি খালি মারি!'

সভায় বাকি বক্তারা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই নারী বিদ্বেষী নই। বরং নারীরাও আসলে একমত যে পুরুষ নির্যাতন হয়। এটা প্রমাণ করার জন্য এই যে দেখুন, আমরা আমাদের সাথে একজন নারীও রেখেছি। ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন হলে সেখানে যদি পুরুষ বেশি থাকে ইফেক্টটা বেটার আসে না? ওই স্টাইলে আর কি...’

উপস্থিত নারী বক্তার মন্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হলে সভাপতি আমাদের প্রতিবেদককে থামিয়ে বলেন, ‘আরে পুরুষ নির্যাতন সম্পর্কে মেয়ে মানুষ আর এমন কি জানে, তাছাড়া মেয়েদের বক্তব্য এত জরুরী না। উনাকে তো জাস্ট আন্দোলনের সর্বজনীনতা প্রমাণের জন্য রাখা, উনার বলার কিছু নাই! আমাদের পুরুষদের কথা শোনেন।’

১৪৪৩ পঠিত ... ২১:১১, আগস্ট ২৩, ২০১৭

Top