ইউটিউবে মানিক ভাইয়ের নির্বাচনী র্যাপ গান 'বি কেয়ারফুল'-এর ভিডিও খুঁজছিলাম। ঠিক সে সময়ে চোখে পড়লো আমাদের সকলের বাবার মতো শ্রদ্ধেয় প্রিয় এক্স সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির একটি সাক্ষাৎকার, যেখানে তিনি প্রাণপণে দাবি করছিলেন জীবনে কোনোদিন তিনি এক কাপ চা-ও খান নি।
সবেমাত্র তখন চায়ের কাপটা হাতে নিয়েছি, মনটা এতই খারাপ হলো যে চায়ে চুমক দিতেও পারলাম না। মন থেকে ‘বাবাগো’ ধরণের একটি আর্তনাদের মতো বেরিয়ে আসতে চাইলো! কিছু না ভেবেই তাই চটপট যোগাযোগ করলাম বদি ভাইয়ের সঙ্গে, দিয়ে দিলাম এক কাপ চায়ের দাওয়াত। সেই চা-সূত্রেই হয়ে গেলো কিছু একান্ত কিছু কাল্পনিক আলাপন!
চায়ের দোকানে দেখা করতে চাই শুনে প্রথমে তিনি আসার ব্যাপারে কিছুটা দোনোমনো করলেও আশ্বস্ত করলাম, তিনি যদি না চান, তাহলে চা খেতে হবে না! আশ্বাস পেয়ে বললেন, ‘ভাই শুনেন, কিছু জিনিস আছে এমন যা আমি নিজে খাই না, কিন্ত অন্যকে খাওয়াই! এইটা ভাই আমার বাবার আদর্শ!’ হাসতে হাসতে ফোন রাখার আগে প্রমিজ দিলেন যে খাওয়াতে (চা) হলেও তিনি অবশ্যই আসবেন।
ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতেই, সহাস্য চায়ের দোকানে তার দেখা মিললো।’ ধীরে-সুস্থে জানতে চাইলাম তার কুশলাদি।
প্রশ্ন: ভাই আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
বদি: আর থাকা ভাই! বয়স হয়েছে না! গত দুই রাত ধরে ঠিকমতো ঘুম হয় নি... বুঝেন অবস্থা!
প্রশ্ন: কেন ভাই, কালকে রাতে কি ভুলে চা খেয়ে ফেলেছিলেন নাকি?
উত্তর: ছিহ কী যে বলেন ভাই! আমি কি এইসব খেতে পারি বলেন? আমাকে দেখে কি মনে হয় আপনার এমন! আমার এমনিতেই রাতে ঘুম হয় না।
প্রশ্ন: আচ্ছা আপনি তো চা খান না, তবু রাতে ঘুম হয় না কেনো আপনার, একটু বলবেন কী?
উত্তর: ব্যাপারটা হচ্ছে কি ভাই, দীর্ঘদিন তো এমপি ছিলাম। সংসদ সদস্য হবার অনেক প্রেশার। যদিও সেটা এখন নেই, পরিবারের ঘানি তো অনেক টানলাম, আর কত! এখন ব্যবসাপাতিতে মন দিতে চাই। যা আছে, আমার অবশ্য কিছুই না, সবই বাবার ব্যবসা। তবু তো আমাকেই সামলাতে হয়। এত স্ট্রেসের মাঝে কি আর সহজে ঘুম আসতে চায় বলেন? অ্যাপার্ট ফ্রম দ্যাট, আমি একজন বাবাভক্ত মানুষ। আমি যে আজ এই অবস্থানে আসতে পেরেছি, তার জন্যে বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। তাই ছেলে হিসেবে নিজের দ্বায়িত্ব পূরণের জন্যেই, রাতে আমি নিয়মিত বাবার জন্য সময় দেই... তার জন্যে আলাদা করে সময় রাখি!
কথায় কথায়, তিনি দোকানীকে ডেকে আমার জন্যে চা দিতে বললেন, আর নিজের জন্যে নিলেন কোক। খেয়াল করে দেখলাম, কোক খাবার সময় চুপিচুপি পাঞ্জাবির পকেটে বোতলের মুখাটি ঢুকিয়ে ফেললেন। ধরা পড়েছেন বুঝতে পেরেই লাজুক মুখে জানালেন, ‘আসলে আমি বাবার শত আদরের ছেলে তো। ভেতর থেকে ছেলেমানুষি ভাবটা এখনও যায় নি। মাঝেমধ্যে বোতলের ছিপি দিয়ে খেলতে ভালো লাগে!’
জানতে চাইলাম, মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে যে এত তোলপাড় চলছে, তাতে তো নিন্দুকেরা বারবার ঘুরে ফিরে বলছে আপনার নাম। এ ব্যাপারে কোনো হতাশা কাজ করে কিনা।
বদি ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘জানেন তো আমার আত্মীয়রা কেমন! ভাইদেরকে কত করে যে বলেছি, ভালো হয়ে যা, এসব ছেড়ে দে। বাবার আদর্শ অনুযায়ী চল। কে শোনে কার কথা। ভাগ্নেগুলাও উচ্ছনে গেছে! তবে আমি কখনো আমার লাইনচ্যূত হইনি। হয়তো কাছের মানুষরা সেজন্য আমার থেকে দূরে চলে গেছে, তবুও বাবাভক্ত বলেই এসব মেনে নিতে পারছি। আমাকে যে যতই খারাপ ভাবুক, বাবাই আমার কাছে বড়। এসব গঞ্জনা যুগে যুগে সহ্য করে গেছে আমার বাবা, তার বাবা, তার বাবা...’
চা খাওয়া শেষ করতেই তিনি দোকান থেকে হাফ লিটার কোক কিনলেন। যাক বড় ভাই কিছু তো খাচ্ছে, এমন ভেবে একটু মানসিক প্রশান্তি পেতেই বদি ভাই বোতলের মোখাটি খুলে নিজের হাতে রেখে বোতলটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ইয়ে, আমি কোকও খাই না। চা তো খেলে, এখন বরং ঠান্ডা খাও। আজ উঠি... বাবার জন্য মন টানছে!’
বদি ভাই বোতলের মোখাটি পকেটে পুরে বিদায় নিয়ে নিলেন। হাঁটার গতিবেগেই বুঝলাম, বাবার প্রতি তার টান সত্যিই অনেক তীব্র। বাবাভক্ত মানুষরা বুঝি এমনই হয়...