বীরপুরুষ (প্যারোডি)
মোহাম্মদ রমজান আলী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক
মনে করো যেন বাজার ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অন্য বাজারে,
তুমি যাচ্ছো স্যান্ডেল মা পরে,
ঘষে ঘষে শব্দ করে করে।
আমি যাচ্ছি বাজারের ব্যাগ হাতে
দ্রুত লয়ে তোমার পাশে পাশে।
বাজার থেকে একটু যখন দূরে
মাছের বোটকা গন্ধ নাকে আসে৷
সন্ধে হল, সূর্য নামে পাটে
এলেম যেন বিরাট একটা হাটে।
হৈ-হুল্লোড় যেদিক পানে চাই
তিলধারণের একটুকু ঠাঁই নাই৷
তুমি যেন আপনমনে তাই
ভয় পেয়েছ; ভাবছো, এলেম কোথা?
আমি বলছি, 'ভয় পেয়ো না মা গো
এই যে দেখো এনেছি বাজারের সোতা।'
চোর বাটপারে বাজার রয়েছে ঢেকে,
একেকজন যাচ্ছে হেঁকে ডেকে।
দ্রব্যমূল্যে আগুন সবখানে,
সবাই কেবল পকেট ধরে টানে।
আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে,
লোকের ভীড়ে বোঝা যায় না ভালো।
তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,
'তরমুজের দোকানে এত কীসের আলো!'
এমন সময় 'হারে রে রে রে রে'
ওই যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে।
তুমি ভয়ে বাজারের এক কোণে,
সৃষ্টিকর্তা স্মরণ করছো মনে।
তরমুজওয়ালা দাঁড়িয়েই দোকানে
তরমুজ হাতে হাসছে ঝরোঝরো,
আমি যেন বলছি তোমায় ডেকে,
'আমি আছি ভয় কেন মা করো।'
হাতে কলম, মাথায় কোঁকড়া চুল,
কানে তার সোনার কানের দুল
কে বলল, 'ধীরে ম্যাডাম হোল্ডঅন!
এক পা আগে আসেন যদি আর,
এই যে দেখেন আমার হাতে ফায়ার
জ্বালিয়ে দেবো একবারে নিজেরে।'
শুনে ম্যাডাম লম্ফ দিয়ে ওঠে,
চেঁচিয়ে উঠলো, 'বাটপার তবে রে!'
তুমি বললে, 'যাস নে খোকা ওরে!'
আমি বলি, 'দেখো না চুপ করে!'
গুটিয়ে হাতা গেলেম তাদের মাঝে
হাতের ভেতর নিশপিশ সুর বাজে।
কী ভয়ানক লড়াই হলো মা যে,
দেখে তোমার গায়ে দিলো কাটা!
ম্যাজিস্ট্রেট তো পালিয়ে গেল ভয়ে,
কত তরমুজ পড়ে রইল ফাটা!
সিন্ডিকেটের সঙ্গে লড়াই করে,
ভাবছো খোকা গেলই বুঝি মরে।
আমি তখন তরমুজ মেখে ঘেমে
বলছি তোমায়, 'লড়াই গেছে থেমে।'
তুমি তখন জুতো থেকে নেমে,
চটাস করে বসালে আমার গালে,
বলছো, 'ভাগ্যে তোর বাপ আসেনি আজ,
বলদের মতো এটা করলি কোনো কাজ!'
রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা,
এমন কেন সত্যি হয় না আহা!
ঠিক যেন এক গল্প হতো তবে
শুনতো যারা অবাক হতো সবে,
দাদা বলতো, 'কেমন করে হবে?
খোকার গায়ে এত কী জোর আছে?
পাড়ার লোকে বলতো সবাই শুনে,
'ভাগ্যে সেদিন ম্যাজিস্ট্রেট ছিল কাছে।'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন