ফারমার্স ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক রাখার প্রস্তাব আসতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নাম বদলের কারণ জানতে চায়।
ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নামবদলের কারণ জানাতে গিয়ে বলে, কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য ফারমার্স ব্যাংক পাঁচ বছর নিরলস পরিশ্রম করার পর লক্ষ্য করা যায়; কৃষকেরা এই ব্যাংকের ঋণ নিয়ে এমন জীবন কুশলতা অর্জন করেছে যে, তাদের অনেকেই এখন মালয়েশিয়া ও ক্যানাডার বেগম পাড়ায় সেকেন্ড হোম নির্মাণে সক্ষম হয়েছে।
ফারমার্স ব্যাংক গভীর অনুতাপের সঙ্গে আরও লক্ষ্য করেছে, কিছু ধান চাষী এই ব্যাংকের ঋণ না নিয়ে; নিজেদের দরিদ্র-অবস্থা বজায় রেখে দেশের ইমেজের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত। এরা সম্প্রতি রাশি রাশি ধান কেটে নৌকায় করে নিয়ে যাবার সময় প্রবল বাধা সৃষ্টি করে। এইরকম উন্নয়ন বিরোধী ফারমার্সদের জন্য ব্যাংক খুলে রাখা অর্থহীন। বরং উন্নয়নের সেবায় মরিয়া নৌকার মাঝিদের জন্য ব্যাংক খোলা জরুরি। আমরা চাই পদ্মা নদীর মাঝিরা পদ্মা ব্যাংকের ঋণ নিয়ে তাদের দিনবদল করুক। তারা কেন বঞ্চিত হবে মালয়েশিয়া-ক্যানাডার সেকেন্ড হোম গড়া থেকে।
এমন মোক্ষম উত্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাধ্য হয় নামবদলের প্রস্তাব মেনে নিতে। ফারমার্স ব্যাংক যাত্রা শুরু করে পদ্মা ব্যাংক হিসেবে।
পীতম মাঝি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে কুবেরকে খবর দেয়, নদীতে বিশাল বজরা নৌকায় করে 'পদ্মা ব্যাংক' ভেসে বেড়াচ্ছে। ধনঞ্জয় হুঁকো টানতে টানতে বলে, যাক এতোদিনে আমার ধনঞ্জয় নামটা সার্থক হতে চলেছে।
জেলে-পাড়ায় 'পদ্মা ব্যাংকের নদীতে ভেসে বেড়ানোর খবর' ছড়িয়ে পড়লে; আমিনুদ্দি ও রসুল নৌকা করে পদ্মা ব্যাংকের বজরার কাছে যায়।
জলপুলিশ তাদের বাঁশি বাজিয়ে সরিয়ে দেয়, ভিআইপি মাঝি আসতেছে; সইরা খাড়াও মিয়ারা।
স্পিডবোটে করে মৎস্যজীবীরা আসে যায়। আমিনুদ্দি-রসুল অপেক্ষা করে ডাক পাবার। জলপুলিশ এসে বুঝিয়ে বলে, আরেকদিন আইসো মিয়ারা। ভিআইপি মাঝিগো কাম-কাজ হউক আগে।
আমিনুদ্দি-রসুল ফিরে এসে খবর দেয়, পদ্মা নদীতে এখন ভিআইপি মাঝিগো আনাগোণা বাড়তেছে।
ধনঞ্জয় খুব হতাশ হয়ে পড়ে। মৎস্যজীবীদের পেশাটা এমনিতেও প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কার জালে কয়টা ইলিশ ধরা পড়ে এই নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা তো ছিলই। কিন্তু এখন ব্যাংক লোন নেবার প্রতিযোগিতাটা আরও কঠিন। স্পিডবোট না থাকলে ব্যাংকে যাওয়ার অনুমতিই তো পাওয়া যাচ্ছে না! ধরিবো মৎস্য খাইবো সুখে এই কথাটা কেবল স্পিডবোটের মাঝিরাই বলতে পারে আজকাল।
কুবের দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ঈশ্বর তো দেখতেছি ভদ্রপল্লীতেই ঘুরপাক খাইতেছেন; অথচ কপিলা কইছিলো তিনি নাকি আইজকাল ভ্যানগাড়িতে চড়ে মৎস্যপল্লীতেও আসেন।
কপিলা বেরিয়ে আসে গাছের আড়াল থেকে। সে দেমাক দেখিয়ে বলে, ঈশ্বররে পাইতে চাইলে ডাকতে জানতে হয় গো মাঝি। চলো আমি যামু তোমার লগে। চলো পদ্মা ব্যাংকে যাই।
--কিন্তু আমগো তো স্পিডবোট নাইরে কপিলা।
কুবেরের কথা শুনে কপিলা হাসে; সেই হাসিতে আকাশ থেকে কয়েকখণ্ড মেঘ ঝুর ঝুর করে ভেঙ্গে পড়ে।
--আমিই তোমার স্পিড বোট গো মাঝি।
নৌকায় করে ব্যাংকে যাওয়ার পথে কপিলা বলে, শোন লোন নিবা তুমি মাঝি কোটায়। আর সেই ট্যাকা দিয়া বিউটি পার্লার খুলমু আমি। মাছ ধরার চাইতে অহন বিউটি পার্লারেই বেশি প্রফিট।
কপিলা জলপুলিশের দিকে বাঁকা লাস্য ছুঁড়ে দিতেই; পুলিশের বুকের বামদিকে ব্যথায় চিন চিন করে। সে ব্যাংকে প্রবেশের অনুমতির ইশারা করে।
বজরায় স্থাপিত বিশাল বজরায় উঠে কপিলা বাকা লাস্যে একের পর এক ব্যাংকারের হৃদয়ে তোলপাড় তোলে। অনায়াসে ব্যাংক লোন পেয়ে যায় কুবের।
নৌকা করে বস্তা ভরে টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে; কুবের বলে, পার্লারের নাম দিমু 'কপিলা বিউটি পার্লার'।
কপিলা গভীর রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে, তুমি বোকাই থাইকা গেলা মাঝি। এই ট্যাকা ক্যানাডায় রপ্তানি করুম। সেইখানে আমগো ঘর হবে গো মাঝি। বেগম পাড়ায় সোনার পালংকে শুইয়া সারাজীবন কুটুর কুটুর কইরা গল্প করুম দুইজনে।
কুবের বিস্মিত হয়ে বলে, এইসব কী কস কপিলা! এইসব কই থিকা শিখলি!
কপিলা অভিমানী সুরে বলে, ক্যান গরীব বইলা কী আমগো শখ-আহলাদ থাকতে নাই। ইচ্ছা থাকলে গ্রামে বইসা সাড়ে দশ মিনিটের স্কুলে শহরের সব কিছু শেখা যায়।
কপিলা মোবাইল ফোনে কুবেরকে দেখাতে থাকে শহুরে হয়ে ওঠার কলাকৌশলের স্কুলের লেকচার। সেখানে একজন মোটিভেশনাল স্পিকার বলে, সিক্স ডিজিটটাই সাফল্যের প্রতীক। এটা বুঝলেই দিন বদল হবে আপনার-আমার আর দেশের।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন