অসাধারণ এই গানটি আসলে কার রচনা?

১৭২ পঠিত ... ১৬:৫৫, মে ০৪, ২০২৪

29 (4)

লেখা: সরোজ মোস্তফা

নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী—এই মাটি ও জনপদকে বলা হয় বাংলার ভাটি বা হাওরাঞ্চল। এই অঞ্চলেই মালজোড়া গানের অমর সাধক বাউল রশিদ উদ্দিনের (১৮৮৯-১৯৬৪) জন্ম, বিকাশ  ও বিচরণ। শোনা যায়, ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বাউল রশিদ উদ্দিনের সংগীত সংকলন 'স্বররাজ লহরী' প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এই বইয়ের ৫০০০কপি বিক্রিও হয়েছিল সে সময়। কৃষি ও জলজীবী মানুষের প্রকৃতি-জীবন-ধারণাকে আশ্রয় করেই তিনি এবং তার সহচরেরা গানের ধারায় বিচরণ করেছেন। তাদের কাছে গানই জ্ঞান। এই জ্ঞান তারা প্রচার করেছেন। প্রচারের স্বার্থেই জ্ঞান ও কথাকে সুরে বেঁধেছেন। এই প্রচারের স্বার্থেই একজনের জ্ঞানের কথা সবাই মিলে গেয়েছেন। তর্কভিত্তিক গান, দেহতত্ত্বের গান, মুর্শিদতত্ত্বের গান গুরুশিষ্য পরম্পরায় তারা গেয়ে গেছেন। জীবন এবং জগৎ সম্পর্কে অবারিত প্রশ্ন নিয়ে গানের আসরে তারা হাজির হয়েছেন। গান দিয়ে গানকে মোকাবেলা করেছেন। বিতর্ক করেছেন, জ্ঞানচর্চা করছেন, তাদের কোন সমস্যা হয়নি, সমস্যা হচ্ছে আমাদের।     

'মাগো মা ঝিগো ঝি' এই গানটি সম্প্রতি কোক স্টুডিও গেয়েছে। সময়ের মাধুর্যে র‍্যাপের লিরিক্স আর বলার ভাব শুরু থেকে ল্যান্ডিং পর্যন্ত এক কথায় অসাধারণ! কিন্তু বলা হচ্ছে গানটি বাউল আব্দুল খালেক দেওয়ানের। ছোটোবেলা থেকে এই গান শুনে পার হয়েছে। বাড়ির কামলারা গিয়েছেন, ছাদ পেটানোর শ্রমিকদের মুখেও এই গান শুনেছি। ছোটোবেলায় মা-খালাদের মুখে এই গান অনেকবার শুনেছি।  লোকসংগীত তো এভাবেই বাঁচে। এভাবেই শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকে গান ও জ্ঞান।  আমার সন্তান, তার সন্তান হয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই জ্ঞানকে ধারণ করে। হাজার হাজার গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষক, চাষীরা, মা-খালারা একত্রে একই মঞ্চে; রাতভর বাউল পালাগানে, বিচার গানে, দেহতত্ব / মারফতি পালা গানে এই গানটা শুনে আসছি!

আমাদের অঞ্চলের সবাই জানেন এই গান বাউল রশিদ উদ্দিনের। এই অঞ্চলের গাতকেরা এই গান বাউল রশিদ উদ্দিনের নামে গেয়েছেন। বারী সিদ্দিকী একাধিকবার টেলিভিশনেও এই গান রশিদ উদ্দিনের নামে গেয়েছেন। ইউটিউবে রশিদ উদ্দিনের নামেই এই গান আছে। আজ শুনছি এই গান বাউল আব্দুল খালেক দেওয়ান সাহেবের। গানের প্রকৃত রচয়িতা কে তার একটা মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। গানটা এই জনপদে মিশে গেছে। গানের রচয়িতার নামটা যেন হারিয়ে না-যায় কিংবা অন্যের নামে না চলে যায়—এই আমার অভিপ্রায়। আমি রশিদ উদ্দিনের গানের সংকলন থেকে গানটি তুলে দিচ্ছি। সামান্য দু-একটি শব্দ কিংবা পংক্তি এদিক-সেদিক করে একটি গানকে অন্যের নামে চালিয়ে দেয়া যায় না। গানের ভেতরে একটা জ্ঞান ও দার্শনিকতা থাকে সেটি সেই গানের মর্মার্থ।  

ইতিহাস লেখক ও গবেষক রতীশ মজুমদার উজ্জ্বল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বারী সিদ্দিকীর জীবদ্দশায় দশদার বাজার থেকে সামান্য উত্তরে 'কাউট্টাচোরা বাজারে' 'গোমাই নদীর পাড়ে' বসে এই গানটি বারী আমাদের শুনিয়েছিল। মূলত গোমাই নদীর পাড়ে বসে রশিদ উদ্দিন সাহেবের এই গান বারী সিদ্দিকী গেয়েছিল। আজ নতুন করে শুনতে হলো এই গানটি অন্যজনের—যা দুঃখজনক।'

 

মাগো মা ঝিগো ঝি করলে কি রঙ্গে

ভাঙ্গা নৌকা বাইতে দিলে গাঙ্গে।।

গোমাই নদী নষ্ট করল ঐ না কোলাবেঙ্গে।।

ভাঙ্গা নৌকায় উঠে জল নদী করে কলকল

কলকলাকল পারি না তার সঙ্গে

নদীর নাম কামনা সাগর বাঁকে বাঁকে উঠে লহর গো ...

কত সাধুর ভরাডিঙ্গা পার তার তরঙ্গে।।

ছিলাম শিশু ছিলাম ভালা না ছিল সংসারের জ্বালা গো... হাসিতাম খেলিতাম মায়ের সঙ্গে ॥

এই দেহে আইল জোয়ানী ঘারে আইল নয়া পানি গো

কাম কামিনী বসিল বাম অঙ্গে।

ছিলাম জোয়ান অইলাম বুড়া লইরা গেছে বাকা জোড়া গলই গোড়া সব গিয়াছে ভেঙ্গে ॥

রশিদ উদ্দিন বলে গানে ভেবে দেখ আপন মনে গো...

একদিন মিশতে হবে মাটির সঙ্গে।।

(বাউলসাধক রশিদ উদ্দিন ও তাঁর গান আবু দায়েন। পৃষ্ঠা: ৮৯)

১৭২ পঠিত ... ১৬:৫৫, মে ০৪, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top