লেখা: মোহাইমিনুল ইসলাম
একজন পূর্ণবয়স্ক স্বাভাবিক মানুষ গড়ে প্রতিদিন আড়াই লিটার জলবিয়োগ করে। যা ৩০ টাকা দামের ১০টি কোকের বোতলের সমান।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশেপাশে কোন ওয়েল-মেইনটেনড গণশৌচাগার নেই। একজন রিকশাওয়ালা, যিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকবেন রাস্তায়। তিনিও সারাদিন এই আড়াই লিটার জল ঠিকই বের করবেন। কিংবা বেশিও করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোথায় করবেন? এই রাস্তায়-টাস্তায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে?
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ধরে নিই এমন পাঁচ হাজার মানুষ অন্তত এমন আছেন, যারা সারাদিন রাস্তাতেই থাকেন। ছোট চায়ের দোকানি, হকার, বহিরাগত, রিকশাওয়ালা কিংবা ফুটপাতে শুয়ে থাকা মানুষ। এই পাঁচ হাজার মানুষ প্রতিদিন আড়াই লিটার করে জলবিয়োগ করলে দৈনিক এই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাস্তায় যুক্ত হয় সাড়ে বারো হাজার লিটার লোনাজল।
যা আড়াইশ মিলি কোকের পঞ্চাশ হাজার বোতলের সমান। ভাবা যায়! বুয়েট থেকে নীলক্ষেতের রাস্তায়, সলিমুল্লাহ হলের সামনে, ফজলে রাব্বির সামনে, এদিকে-ওদিকে পঞ্চাশ হাজার বোতল নোনাজল যোগ হচ্ছে প্রতিদিন।
একজন মনুষ্য সন্তানের প্রতি লিটার নোনাজলে প্রায় দশ গ্রাম ইউরিয়া থাকে। মানে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিদিন একশ পঁচিশ কেজি ইউরিয়া স্রেফ নষ্ট হচ্ছে। বছরে যার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ছেচল্লিশ মেট্রিক টন ইউরিয়া।
নাইট্রোজেন সাইকেল নিয়ে স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছিলাম। বজ্রপাত হয়ে নাকি অ্যাটমোস্ফিয়ারের নাইট্রোজেন মাটিতে জমা হয়। অথচ এত নাইট্রোজেন যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিদিন জমা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বইতে কিচ্ছু বলা নেই। হায়রে সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ।
আমি আগে ভাবতাম, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সমস্যার কোনো সমাধান কেন নেয় না? এখন আর ভাবি না, কারণ দিনশেষে আমাকে-আপনাকে সবাইকে জলবিয়োগ করতে হবে। নাহলে হতে পারে ইউরিন ইনফেকশন, কিডনি জটিলতাসহ আরও নানান কিছু।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে শুধু হাজার হাজার মানুষের কিডনি সুস্থ রাখার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে তা না। জলবিয়োগের এই জল নিয়ে তারা নেমেছে জলের কারবারে। এই জল থেকে পাওয়া নাইট্রোজেন হয়তো যোগ হচ্ছে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে। কিংবা এই নোনাজল নিয়ে অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে দেখা যেতে পারে মিনি কোনো কক্সবাজার।
যারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা হয় না তারা হয়তো এইসব জলের কারবার চোখে দেখেন না, কিংবা দেখলেও এড়িয়ে যান। আমি শুধু জানতে চাই, নাইট্রোজেনের এই অপার সম্ভাবনাময় খাতটি কেন বইঅলারা কোমলমতি শিশুদের থেকে লুকিয়ে রেখেছেন, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। এদের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া দরকার। এখানে নিশ্চয়ই বিরোধীদলের হাত আছে৷
আমি আগেই বুঝেছিলাম, কেমিস্ট্রি একটা বিরোধীদলীয় ইশতেহার। না হলে এটা পড়তে বসলে জীবন-যৌবন অর্থহীন মনে হতো কেন!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন